অপুষ্ট শিশুর তথ্যই নেই
রাজ্যের হাতে
রাজ্যে স্কুলশিক্ষা দফতরের সমীক্ষা দেখিয়েছে, কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের চারটি জেলায় প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হতে আসা ৮৬ শতাংশেরও বেশি শিশুর ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় কম। অর্থাৎ তারা অপুষ্টির শিকার।
গোটা রাজ্যের চিত্রটা তবে কী? কোনও হিসেব নেই রাজ্য সরকারের কাছে। পরিসংখ্যান থাকার কথা স্বাস্থ্য এবং সমাজকল্যাণ দফতরের হাতে। প্রশ্ন করলে তারা একে অন্যের উপরে দায় চাপাচ্ছে। ফলে অপুষ্টির মতো একটি জাতীয় সমস্যার সমাধানে এ রাজ্যের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন স্তরে।
স্বাস্থ্য দফতরের বক্তব্য, অপুষ্ট শিশুর পরিসংখ্যান থাকার কথা সমাজকল্যাণ দফতরের কাছে। কারণ তারাই অঙ্গনওয়াড়ি প্রকল্প চালায়। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদেরই বাড়ি বাড়ি ঘুরে তথ্য জোগাড় করার কথা। সমাজকল্যাণ দফতরের দাবি, শুধু অঙ্গনওয়াড়ি প্রকল্পের উপরে দোষ চাপালে হবে না। স্বাস্থ্য দফতরের অধীনস্থ পুষ্টিকেন্দ্র এবং ‘আশা’-কর্মীদের কাছেও তথ্য থাকার কথা। সামগ্রিক ভাবে এ দেশের ৪২ শতাংশেরও বেশি শিশু অপুষ্টির শিকার। সম্প্রতি এক সমীক্ষায় সেই তথ্য ধরা পড়ার পরে বিষয়টিকে ‘জাতীয় লজ্জা’ বলে অভিহিত করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ। কিন্তু এই ‘লজ্জা’ দূর করার ক্ষেত্রে এ রাজ্যে দৃশ্যতই এখনও চাপানউতোরের খেলাই গুরুত্ব পাচ্ছে।
শিশুদের অপুষ্টির বিষয়টি সুসংহত শিশু বিকাশ প্রকল্পের আওতায় পড়ে। ওই প্রকল্পে শুধু শিশুর পুষ্টিই নয়, তার শিক্ষা এবং মায়ের সচেতনতা বাড়ানোর উপরেও জোর দেওয়ার কথা। বাস্তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কিছু রুটিন ওষুধ, ইঞ্জেকশন এবং দুপুরের আধপেটা খাওয়া ছাড়া এ রাজ্যে শিশুদের আর কিছু জোটে না বলে অভিযোগ। রাজ্যের এক লক্ষেরও বেশি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের কর্মীদের কাজের গুণমান নিয়েও ঝুড়ি ঝুড়ি অভিযোগ রয়েছে।
স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তা বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, “বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের বয়স এত বেশি যে, তাঁদের বাড়ি বাড়ি ঘোরার সামর্থ্যই নেই।” অথচ বাড়ি বাড়ি ঘুরে অপুষ্ট শিশু চিহ্নিত করাটা এই প্রকল্পের অন্যতম প্রধান দিক। কেন্দ্রগুলিতে এ নিয়ে নজরদারিও নেই। “যে পরিমাণ খাবার বরাদ্দ সেটা দেওয়া হয় না। চাল পৌঁছলে ডাল পৌঁছয় না। কখনও দেখা যায়, চাল বা ডাল পোকা-ধরা।” সমাজকল্যাণ দফতরের অধিকর্তা প্রমল সামন্ত বলেন, “এক লক্ষ ১৬ হাজার ৩০০ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের উপরে নজর রাখা খুব কঠিন। যত সুপারভাইজার থাকার কথা, রয়েছেন তার অর্ধেক। আমরা পরিকাঠামো ঢেলে সাজার চেষ্টা করছি।” অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি খোলার সময় নিয়েও অভিযোগ উঠেছে। স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার কথায়, “সকাল ন’টা থেকে দুপুর ২টো পর্যন্ত কেন্দ্রগুলি খোলা থাকার কথা। বহু ক্ষেত্রেই সেগুলি খুলছে ১২টার পরে। শিশুকে নিয়ে এসে দীর্ঘ অপেক্ষার পরে মায়েরা ফিরে যাচ্ছেন।”
অঙ্গনওয়াড়ি প্রকল্পে গলদের দায় যদি সমাজকল্যাণ দফতরের হয়, ওই দফতরের কর্তাদের একটা বড় অংশ কিন্তু প্রশ্ন তুলছেন স্বাস্থ্য দফতরের কাজ নিয়েও। রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় অপুষ্ট শিশুদের জন্য পুষ্টিকেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। ছ’মাস থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত শিশুদের এই কেন্দ্রে চিকিৎসা হওয়ার কথা। কিন্তু রাজ্যের বিভিন্ন জেলার পুষ্টিকেন্দ্রের খবর নিয়ে জানা গিয়েছে, সেখানে খুব কম সংখ্যায় শিশুরা আসছে। কেন? সমাজকল্যাণ দফতরের কর্তাদের অভিযোগ, এমন একটি প্রকল্প যে রয়েছে, তার খবরই নেই বহু মানুষের কাছে। কী ভাবে এর প্রচার বাড়ানো সম্ভব, তা নিয়ে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে উদ্যোগও নেই। অপুষ্টি নিয়ে প্রচারে বরং এগিয়ে এসেছে বেশ কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। এমনই একটি সংস্থার তরফে সুজাতা বসু বলেন, “খুব গরিব পরিবারেও কম খরচে পুষ্টিকর খাবার জোগানো সম্ভব। যেমন ছাতু, আলু ইত্যাদি। বিষয়টি সরল করে বোঝানোর জন্য আমরা মায়েদের জাতীয় পতাকার তিনটি রঙ চিনিয়ে সেই রঙের খাবার খেতে বলি।”
গত বছর থেকে স্কুলশিক্ষা দফতর কলকাতা, হাওড়া, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণায় যে সমীক্ষা চালানো শুরু করেছে, সেই প্রকল্পে অপুষ্টি নিয়ে প্রচারে সামিল করার কথা ভাবা হয়েছে স্কুলগুলিকে। স্কুলশিক্ষা সচিব বিক্রম সেন জানান, ওই সমীক্ষা পর্যায়ক্রমে চালিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে। অপুষ্টির হার কমছে কি না, তার একটা নজরদারি সমীক্ষা থেকেই উঠে আসবে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.