মহকুমার সীমান্ত এলাকায় পাচারকারীদের দৌরাত্ম্য ঠেকাতে এবং পর পর পর ঘটে যাওয়া খুন, ডাকাতি, ছিনতাই বন্ধে নড়েচড়ে বসল পুলিশ-প্রশাসন। ইতিমধ্যেই এ ব্যাপারে একটি বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে। যার নেতৃত্বে রয়েছেন খোদ জেলার পুলিশ সুপার। এই পদক্ষেপের সুফল হিসাবে সম্প্রতি বসিরহাট মহকুমা জুড়ে অভিযান চালিয়ে ডাকাতি ও খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত ১৬ জন দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে একটি এইট এম এম পিস্তল-সহ তিনটি রিভলভার, ২৮ রাউন্ড গুলি, ১৮ কিলোগ্রাম গাঁজা, ৪ ভরি সোনা, ২০ ভরি রুপোর গয়না এবং একটি সাইকেল ও মোটর সাইকেল। মঙ্গলবার বসিরহাট থানায় এক সাংবাদিক বৈঠকে এ কতা জানান উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার চম্পক ভট্টাচার্য। চম্পকবাবু জানান, সীমান্ত এলাকায় বিএসএফের সঙ্গে যৌথভাবে এবং জেলা জুড়ে এই তল্লাশি অভিযান চলবে। এ দিন বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মেহমুদ আখতার ও বসিরহাটের এসডিপিও আনন্দ সরকার।
প্রসঙ্গত, গত কয়েক মাস ধরে বসিরহাচ মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় একাধিক ডাকাতি, ছিনতাই ও খুনের ঘটনা ঘটেছে। বাদুড়িয়ার কাটিয়াহাটে দুষ্কৃতীদের হাতে খুন হন যুব কংগ্রেস নেতা দেবকুমার অধিকারী। স্বরূপনগরের শ্রীরামপুর গ্রামে বাড়িতে রান্না করার সময় গুলি করে খুন করা হয় তৃণমূল নেত্রী সাগরিকা মণ্ডলকে। |
হিঙ্গলগঞ্জের যোগেশগঞ্জ বাজারে তিনটি দোকান লুঠ করে ডাকাতেরা। সন্দেশখালির ন্যাজাটে কালীনগর কলেজে দুষ্কৃতীরা নৈশপ্রহরীকে বেঁধে লুঠপাট চালায়। এ ছাড়া সন্দেশখালির দায়ুদপুর বাজারে তিনটি ও সরবেড়িয়ায় একটি সোনার দোকানে লুঠপাটের ঘটনা ঘটে। বসিরহাটের উত্তর কাঁকড়া গ্রামের বাসিন্দা সুশান্ত নাথকে কুপিয়ে ও বোমা ছুড়ে, পরিবারের অন্যদের মারধর করে কয়েক লক্ষ টাকা লুঠ করে ডাকাতেরা। খোলাপোতায় একটি পাম্পে ডাকাতির পাশাপাশি মাটিয়ায় যৌনপল্লিতে হোটেল ব্যবসায়ী এক মহিলা খুন হন। মাটিয়ার কাছেই যাত্রীবোঝাই বাসে উঠে এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে রিভলভার দেখিয়ে প্রায় ৮ লক্ষ টাকা লুঠ করে ডাকাতেরা। বসিরহাটের বুরুলি, শ্রীনগর ও ঘোড়ারস গ্রামে দুই ছাত্রী-সহ তিনজন খুন হন। বসিরহাট স্টেশন এলাকায় কংগ্রেস নেতা পরিমল সর্দারকে বোমা-গুলি করে খুন করে দুষ্কৃতীরা।
এই সব ঘটনায় কয়েকটি ক্ষেত্রে সাফল্য পেলেও পুলিশের দাবি, এখনও অনেক দুষ্কৃতীকেই গ্রেফতার করা যায়নি। তবে কয়েকটি ক্ষেত্রে দুষ্কৃতীদের শনাক্ত করা গিয়েছে। শীঘ্রই তাদের ধরা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ সমস্তই দুষ্কৃতীদের বাড়বাড়ন্ত কমাতে তৈরি হওয়া কমিটির সাফল্য বলে দাবি করেছেন জেলার পুলিশ কর্তারা।
বসিরহাট মহকুমা সীমান্তে বিএসএফের কড়া নজরদারি সত্ত্বেও গরু পাচার চলছে। চলছে অনুপ্রবেশ। এই অপরাধ নিয়ন্ত্রণে বিএসেফের সঙ্গে যৌথ অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। পুলিশ সুপার বলেন, “চেষ্টা করলে যে এই ধরনের বেআইনি কাজ যে অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করা যায় তার প্রমাণ, গত কয়েকদিনে পাচারের সময় গরু আটকে প্রায় ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। হিঙ্গলগঞ্জের সোনার দোকানে ডাকাতির ঘটনায় দুষ্কৃতীদের গোসাবা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ছাড়া সন্দেশখালিতে দাগি দুষ্কৃতী বনকুমারকে ধরা হয়েছে। উদ্ধার করা হয়েছে বেশ কিছু অস্ত্র।’’ |