এলাকার দাপুটে তৃণমূল নেতা তিনি কাজেই এলাকার কোন কাজটা নৈতিক কোনটা নয়, তা দেখার দায়ও তাঁরই!
বেথুয়াডহরির স্থানীয় বাসিন্দারাও তাঁর সেই ‘পরিচয়ই’ দেখল সোমবার।
ফাঁকা বাড়িতে বন্ধুর সঙ্গে রাত কাটানোর অভিযোগে দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রী ও তাঁর শিক্ষিকা মা’কে হেনস্থা করার পাশাপাশি ‘মিটমাটের’ খরচ বাবদ ২৫ হাজার টাকাও দাবি করল ওই তৃণমূল নেতা। এমনই অভিযোগ করে পুলিশের কাছে ওই তৃণমূল নেতা-সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই শিক্ষিকা।
নাকাশিপাড়ার বেথুয়াডহরি-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধানের স্বামী তৃণমূল নেতা সঞ্জয় দাস অবশ্য টাকা চাওয়ার অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। পাশাপাশি গ্রামবাসীদের একাংশের ওই ছাত্রী ও তাঁর মাকে ঘর থেকে বের করে দেওয়ার ঘটনারও নিন্দা করেছেন তিনি। সঞ্জয়বাবু বলেন, “টাকা দাবি করার কোনও প্রশ্নই নেই। বরং আমিই পুলিশকে খবর দিয়েছিলাম। পুরো বিষয়টা অত্যন্ত নোংরা বলে মনে হয়েছে।” ওই ঘটনায় স্বামীর নাম জড়িয়ে যাওয়ায় অস্বস্তিতে পড়েছেন পঞ্চায়েত প্রধান শিপ্রা দাস। তিনি বলেন, “রাজনৈতিক চক্রান্ত করে আমার স্বামীকে ফাঁসানো হয়েছে। অভিযোগ মিথ্যে। মঙ্গলবার এলাকার মানুষ ওই পরিবারের বিরুদ্ধে গণসাক্ষর করে আমার কাছে অভিযোগ করেছেন।” স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক কল্লোল খাঁও বলেন, “খোঁজ নিয়ে জেনেছি ঘটনার সঙ্গে সঞ্জয় কোনওভাবেই যুক্ত নয়। ওঁকে ফাঁসানো হচ্ছে।”
কিন্তু কী এমন হয়েছিল যার জন্য এত কাণ্ড?
ওই ছাত্রী ও তাঁর মা, পেশায় প্রাথমিক স্কুল শিক্ষিকা বলেন, “সোমবার ছোট মেয়েকে নিয়ে আমি পলতায় স্বামীর কাছে গিয়েছিলাম। আমার মেয়ে ও তার বন্ধু, যে আমার হবু জামাই-ও তা জানত না। তারা হোস্টেল থেকে বাড়িতে আসে। আমাকে ফোনে জানায়। আমার অনুমতি নিয়েই ওরা বাড়িতে এক সঙ্গে ছিল। তাতে হয়েছেটা কী!” অবিবাহিত মেয়ে ও তার বন্ধু রাতে একলা বাড়িতে, জানতে পেরে ‘নৈতিক পুলিশ’ হয়ে ওঠেন এলাকার কিছু বাসিন্দা। ওই শিক্ষিকা বলেন, “রাতে এলাকার কিছু মদ্যপ যুবক ও মহিলা বাড়িতে চড়াও হয়ে ইট ছুঁড়তে থাকে। আমার মেয়ে ও তার বন্ধু বের হতেই তাদের জোর করে টানতে টানতে পাড়ার কালীমন্দিরে নিয়ে যায়।” স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এরপরেই শুরু হয় মানসিক অত্যাচার। যুবকটিকে মারধর করে মুচলেকা লিখিয়ে নেওয়া হয় বলেও অভিযোগ।
ছাত্রীটির কথায়, “প্রায় দু’শো মানুষের সামনে মন্দিরে নিয়ে গিয়ে আমাদের চরম হেনস্থা করা হয়। আমাকে অশালীন ইঙ্গিত করতে থাকে ওই যুবকেরা। বাবা-মাকে ফোন করেও গালিগালাজ করা হয়।” ভোর চারটে পর্যন্ত ওই কাণ্ড চলে। মানসিক ও শারীরিক অত্যাচারের পরে তাদের জোর করে ঘরে ঢুকিয়ে ছবি তোলা হয়। বাইরে থেকে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয় দরজায়।
ওই শিক্ষিকা কর্মসূত্রে বেথুয়াডহরিতে ছোট মেয়েকে নিয়ে থাকেন। বড় মেয়ে উত্তর ২৪ পরগণার হাবড়াতে একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে হস্টেলে থেকে পড়াশোনা করে। ছেলেটি তার সহপাঠী। তিনি বলেন, “পরদিন আমি বেথুয়াডহরি ফিরলেই বাড়িতে চড়াও হয়ে আমাকেও টানতে টানতে মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয়। আবারও প্রচুর লোকের সামনে হেনস্থা করা হয়।” তিনি জানান, এই সময়ে সেখানে আসেন পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী তৃণমূল নেতা সঞ্জয় দাস। তিনি আমার কাছে ব্যাপারটা মিটমাটের খরচ বাবদ ২৫ হাজার টাকা দাবি করেন। রাজি না হওয়ায় বিভিন্নভাবে হুমকি দিতে শুরু করেন।”
ঘটনার কথা মেনে নিয়েছেন পড়শিদের একাংশ। ওই শিক্ষিকার বাড়ির পাশেই থাকেন নাকাশিপাড়া থানার এক পুলিশকর্মী কৃষ্ণদুলাল বন্দোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “ছেলে মেয়েদুটোকে প্রায় রাতভর হেনস্থা করা হয়। আমি বাধা দিতে গেলে আমাকেও হেনস্থা করা হয়। কিন্তু পরের দিন আর সহ্য করতে না পেরে এগিয়ে যাই।” কিন্তু থানায় কেন খবর দিলেন না? তিনি বলেন, “যাদের উপর অন্যায় হচ্ছে তাঁরা অভিযোগ না করলে আমার এগোনো ঠিক হবে কিনা বুঝতে পারছিলাম না।” |