নদী ‘খুনে’ ছাড় নেই মানুষেরও
দী মরে যাওয়ার পিছনে যেমন ভূতাত্ত্বিক কিছু কারণ রয়েছে, তেমনই নদীকে মেরে ফেলার পিছনে মানুষের ‘অবদানও’ কিছু কম নয়! নদী বিষয়ক একটি আলোচনা সভায় ভূতাত্ত্বিক কারণগুলি বিশ্লেষণের পাশাপাশি নদী সম্পর্কে মানুষকে আরও বেশি সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিলেন বিশিষ্ট নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্র।
মঙ্গলবার দুপুরে জলঙ্গি নদীর পাশেই ‘তেহট্ট দীনবন্ধু মিত্র মঞ্চে’ নদী বিষয়ক একটি আলোচনা সভার আয়োজন করেছিল তেহট্টের জলঙ্গি নদী বাঁচাও কমিটি। কল্যাণ রুদ্র ছাড়াও ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন সাহিত্যিক সুধীর চক্রবর্তী, অমিতাভ সমাজপতি, আনসারউদ্দিন ও তেহট্টের মহকুমাশাসক অচিন্ত্যকুমার মণ্ডল। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আমন্ত্রিত ছিলেন মহকুমার ব্লক প্রশাসন, পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েতের কর্তারাও। ‘জলঙ্গির জন্য’ আলোচনা হলেও কল্যাণবাবুর আলোচনায় উঠে এসেছে জলঙ্গি ছাড়াও ভাগীরথী, পদ্মা, মাথাভাঙ্গা, ভৈরব, অঞ্জনা, চূর্ণী ও ইছামতী নদীর প্রসঙ্গ। কল্যাণবাবু জানান, ‘‘পদ্মার শাখানদী জলঙ্গি মূলত পদ্মার জলেই পুষ্ট থাকত। কিন্তু মুর্শিদাবাদের জলঙ্গি এলাকাতে জলঙ্গির সেই উৎসমুখ বন্ধ হয়ে গিয়েছে বহুদিন আগে। ফলে জলঙ্গি নদীর এখন ভরসা বলতে বৃষ্টি, ভৈরবের জল ও মাটির নীচের জল। ফলে এই মুমূর্ষু নদীকে বাঁচিয়ে রাখা তো দূরের কথা, নদীর উপরে মানুষের অত্যাচার ক্রমেই বেড়ে চলেছে এটা রীতিমত উদ্বেগের।’’
কল্যাণ রুদ্র ও তেহট্টের এসডিও। নিজস্ব চিত্র।
ভূতাত্ত্বিক নানা কারণে পদ্মা অনেকটা নীচে নেমে গিয়েছে। ফলে পদ্মার শাখানদীগুলোর উৎসমুখ উঁচু হয়ে যাওয়ায় বর্ষাকাল ছাড়া বছরের অন্য সময় দিয়ে জল ঢোকে না। তার উপরে এই মরা নদীর উপরে খাঁড়ার ঘা এর মতো নদীর দু’পাশের এলাকা দিয়ে গজিয়ে উঠেছে অজস্র ইটভাটা। নদীর পার থেকে বেআইনি ভাবে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়াটা মাটি মাফিয়াদের প্রায় অধিকারের পর্যায়ে চলে গিয়েছে। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, “প্রশাসনকে বহুবার এই বিষয়ে জানানো হলেও অবস্থা বদলায়নি এতটুকু! দু’চারদিন ‘লোকদেখানো’ প্রশাসনিক দৌড়ঝাঁপ চলে তারপর যে কে সেই।’’
এ ছাড়াও শহরের জঞ্জাল কিংবা বাড়ির আবর্জনা ফেলতে জলঙ্গি নদীকেই ‘ডাস্টবিন’ হিসাবে ব্যবহার করেন এলাকার মানুষ। নদীতে প্রতিমা বিসর্জন দেওয়ার পর কাঠামো তুলে নদী পরিষ্কার রাখার কথা বেমালুম ভুলে যান সকলে। এছাড়াও নদীতে জল না থাকলে সেখানেই রীতিমত কীটনাশক দিয়ে রমরমিয়ে শুরু হয় চাষআবাদ। কল্যাণবাবু বলেন, “এরকম চলতে থাকলে পরিণতি খুব দুঃখজনক। নদী নিয়ে মানুষের মধ্যে আরও সচেতনতা বাড়াতে হবে। বেশিরভাগ মানুষ মনে করেন, আগে তো মানুষ বাঁচুক, তারপর নদী। কিন্তু আমাদের মনে রাখা দরকার, নদী বাঁচলে তবেই সভ্যতা বাঁচবে, অর্থাৎ মানুষ বাঁচবে। গত কয়েক শতাব্দীতে বদ্বীপ যত পূর্ব দিকে হেলে পড়েছে, পদ্মার ঢালও ততটাই বেড়ে গিয়েছে। ফলে পদ্মার খাত ক্রমশ গভীর হওয়ায় ভৈরব, জলঙ্গি, মাথাভাঙার মত শাখানদীগুলোও বর্ষাকাল ছাড়া পদ্মা থেকে জল পায় না। এতে আমাদের কোনও হাত নেই, কিন্তু নদীর বহমানতা যাতে ক্ষুণ্ণ না হয় সেদিকে আমরা নজর রাখতে পারি। কারণ বর্ষার সময় এই নদীগুলোই অতিরিক্ত জল বহন করে বন্যার হাত থেকে বাঁচায়।’’
তিনি বলেন, “এ ছাড়াও প্রতিনিয়ত কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ নদীর জলে এসে মেশায় দূষিত হচ্ছে নদী। বাংলাদেশের চিনিকল থেকে বর্জ্য পদার্থ নদীর জলে মেশায় রীতিমত বিপন্ন চূর্ণী। ওই নদীতে জলে দ্রবিভূত অক্সিজেনের মাত্রা প্রায় শূন্য। কলিফর্ম ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যাও এতটাই বেড়ে গিয়েছে যে, সেখানে স্নান করাও এখন বিপজ্জনক। করুণ অবস্থা অঞ্জনারও।”
মহকুমাশাসক অচিন্ত্যকুমার মণ্ডল বলেন, “নদীতে যাতে কেউ আবর্জনা না ফেলে ও নদীর ধার থেকে যাতে কেউ মাটি কাটতে না পারে, সে বিষয়ে প্রশাসন কড়া নজর রাখছে। তা ছাড়া ১০০ দিনের কাজের প্রকল্পে পঞ্চায়েতগুলোকে নদী সংস্কারের কথা বলা হচ্ছে। নদীর দুধারে গাছ লাগানোরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নদী নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে মহকুমার প্রতিটি এলাকায় ছোট ছোট কমিটি তৈরির পাশাপাশি স্থানীয় ক্লাবগুলোকেও কাজে লাগানোর কথা ভাবা হচ্ছে।” জলঙ্গি নদী বাঁচাও কমিটির সম্পাদক প্রলয় ভট্টাচার্য বলেন, “নদী বিশেষজ্ঞ, প্রশাসন ও সাধারণ মানুষ সকলকে এক জায়গায় হাজির করতে পেরে ভাল লাগছে। খোলামেলা আলোচনার পাশাপাশি শ্রোতারাও সরাসরি প্রশ্ন করেছেন কল্যাণবাবু ও মহকুমাশাসককে। তাঁরাও উত্তর দিয়েছেন আন্তরিকভাবে। আমরা ভবিষ্যতেও এরকম অনুষ্ঠানের আয়োজন করার চেষ্টা করব।’’


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.