|
|
|
|
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আবহে দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রী |
‘নির্ধারক’ মমতার দিকেই তাকিয়ে কংগ্রেস |
নিজস্ব সংবাদদাতা, নয়াদিল্লি ও কলকাতা |
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে নিজেদের প্রার্থীকে জেতাতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থন জোগাড়ে মরিয়া কংগ্রেস।
বুধবার রাতেই রাজধানীতে পা রেখেছেন মমতা। তার আগে আজ মহাকরণে মুখ্যমন্ত্রী জানান, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে এখনও পর্যন্ত তাঁর সঙ্গে কারও কোনও কথা হয়নি। তবে এই সফরে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে দেখা করবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। সনিয়া অসুস্থ হওয়ার পরে তাঁর সঙ্গে দিল্লিতে গিয়ে দেখা করতে চেয়েছিলেন মমতা। এ দিন তিনি বলেন, “অনেক বার চেয়েও সাক্ষাৎ-এর সুযোগ পাইনি। এ বার যাব। নিছকই সৌজন্যমূলক সাক্ষাৎকার। কেমন আছেন, তা-ই জানতে যাব।” তৃণমূল সূত্রের বক্তব্য, আগামী ২-১ দিনের মধ্যেই দুই নেত্রীর কথা হতে পারে।
রাজনৈতিক নেতৃত্বের বক্তব্য, সনিয়া-মমতার আলোচনায় অবধারিত ভাবেই উঠবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিষয়টি। এই সফরে মমতার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহেরও বৈঠক হবে। আগামিকাল সংসদের সেন্ট্রাল হলে যাবেন মমতা। সেখানে বিভিন্ন দলের নেতাদের সঙ্গে তাঁর দেখা হতে পারে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে শরদ পওয়ারের সঙ্গে ইতিমধ্যেই কথা বলেছেন সনিয়া। করুণানিধির সঙ্গে কথা বলার জন্য এ কে অ্যান্টনিকে পাঠিয়েছিলেন তিনি। এ বারে ইউপিএ-র দ্বিতীয় বৃহত্তম শরিক দলের প্রধান কী অবস্থান নেন, সে দিকেই তাকিয়ে কংগ্রেস। |
|
মহাকরণে মমতা। নিজস্ব চিত্র |
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে নিজেদের প্রার্থীকে জেতাতে ইউপিএ-র প্রায় সাড়ে পাঁচ লক্ষ ভোট প্রয়োজন। তার মধ্যে সব শরিককে ধরে ইউপিএ-র ঝুলিতে ৪ লক্ষ ৬০ হাজার ১৯১টি ভোট। এই হিসেবের মধ্যে লালু-পাসোয়ানকেও নিজেদের সঙ্গে ধরেই এগোচ্ছে কংগ্রেস। এর ওপর মুলায়ম সিংহ যাদব এবং মায়াবতীর সমর্থন পেলে বিরোধীদের সমর্থন ছাড়াই নিজেদের প্রার্থীকে জিতিয়ে আনবে পারবে ইউপিএ। কংগ্রেস নেতৃত্ব মনে করছেন, পওয়ার বা করুণানিধির সমর্থন পেতে খুব সমস্যা হবে না। সিবিআই ‘অস্ত্র’ ব্যবহার করে অতীতে বহু ক্ষেত্রেই মুলায়ম ও মায়াবতীর সমর্থন পেয়েছে কংগ্রেস। কিন্তু তিন ‘ম’-এর (মায়াবতী-মুলায়ম-মমতা) মধ্যে একমাত্র মমতার ক্ষেত্রেই সেই কৌশল যে খাটবে না, তা বিলক্ষণ জানেন তাঁরা। ফলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ইউপিএ-র প্রার্থীকে জেতাতে মমতাই এখন প্রধান নির্ধারক শক্তি।
কংগ্রেসের কৌশল ভেস্তে দিতে দু’দিন আগেই বিজেপি নেত্রী সুষমা স্বরাজ জানিয়েছিলেন, মুলায়ম যদি এ পি জে আব্দুল কালামের নাম প্রস্তাব করেন, বিজেপি তাকে সমর্থন করবে। কিন্তু কংগ্রেস মনে করছে, মুলায়ম এনডিএ-র সঙ্গে মিলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে ভোট দেবেন না। আর রাজ্যের জন্য সুদ মকুব বা জাতীয় সন্ত্রাস দমন কেন্দ্র নিয়ে কেন্দ্রকে চাপে ফেললেও রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে মমতা বিজেপির সঙ্গে যাবেন না। মুলায়ম নিজেও আজ জানান, কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর কথা চলছে। যদিও মমতা আসার আগে আজ রেলমন্ত্রী মুকুল রায় সংসদে অরুণ জেটলির সঙ্গে বৈঠক করেন। দু’জনেরই অবশ্য দাবি, আগামিকাল রাজ্যসভায় রেল বাজেট সংক্রান্ত আলোচনা রয়েছে। এ দিন তা নিয়েই কথা হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে সনিয়া যখন ধাপে ধাপে শরিক ও সমর্থক দলগুলির সঙ্গে আলোচনা করে এগোচ্ছেন, তখন তাঁকে স্বস্তি দিয়েছে এনডিএ-র অন্তর্কলহ। কারণ, সুষমার মন্তব্যে এনডিএ-র অন্দরেই চিড় ধরতে শুরু করেছে। এনডিএ-র শরিক নীতীশ কুমার বা শরদ যাদব প্রকাশ্যেই বলেছেন, সুষমার বক্তব্য নিয়ে এনডিএ-তে আলোচনা হয়নি। নীতীশরা বরং হামিদ আনসারির নাম নিয়ে পাল্টা চাপ দিচ্ছেন। আনসারি সম্পর্কে সুষমা যে মন্তব্য করেছেন, তা নিয়েও জোটের অন্দরে জল ঘোলা হচ্ছে।
বিজেপির এক শীর্ষ নেতার বক্তব্য, ঠিক হয়েছিল, কংগ্রেসের কোনও প্রার্থীকে বিজেপি সমর্থন করবে না। লোকসভা ভোটের আগে কংগ্রেস-বিজেপির মধ্যে সমন্বয়ের বার্তা যাতে না যায়, তাই এই কৌশল নেওয়া হয়েছে। বিজেপি নেতৃত্ব এখন মনে করছেন, রাষ্ট্রপতি ভোটের আগে নিজেদের ঘর সামলানোই দায় হয়ে উঠছে। বিষয়টি আঁচ করে আজ সুষমা তড়িঘড়ি কথা বলেন শরদ যাদবের সঙ্গে। ‘মতপার্থক্যের’ ছবিটা বদলাতে শরদ যাদবকে বক্তব্য পেশ করতেও অনুরোধ করা হয়। |
|
|
|
|
|