আর শুধু কেন্দ্রের কাছে আর্জি জানানো নয়, থমকে যাওয়া আর্থিক সংস্কারের চাকায় গতি ফেরাতে এ বার সরাসরি সরকারের শরিক এবং বিরোধী দলগুলির সঙ্গে আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত নিল তথ্যপ্রযুক্তি ও টেলি-যোগাযোগ শিল্প। যার সূচনা হিসেবে আজ, বৃহস্পতিবার মুম্বইয়ে বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি নিতিন গডকড়ীর সঙ্গে বৈঠকে বসছেন ২২ জন শীর্ষ শিল্পকর্তা। এর পর আলোচনায় বসার পরিকল্পনা রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ দেশের অন্যান্য প্রধান নেতা-নেত্রীর সঙ্গে।
রাজনীতির বাধায় দেশে সংস্কার যে কার্যত থেমে গিয়েছে, সম্প্রতি তা স্বীকার করে নিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থ মন্ত্রকের প্রধান উপদেষ্টা কৌশিক বসু। তাঁর বাজেট বক্তৃতায় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় একাধিক সংস্কারের কথা ঘোষণা করলেও সরকারের শরিক দল এবং বিরোধীদের আপত্তিতে তার প্রায় কিছুই কার্যকর করা যায়নি। খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির সিদ্ধান্ত নিয়েও পিছিয়ে আসতে হয়েছে মমতার আপত্তিতে। পণ্য ও পরিষেবা কর চালু করার ঘোষিত দিনক্ষণ অনেক দিন পেরিয়ে গেলেও বিজেপি এবং আঞ্চলিক দলগুলি-শাসিত রাজ্যের আপত্তির জট এখনও কাটেনি। না-হওয়ার তালিকায় রয়েছে পেনশন, বিমা ও ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রের সংস্কার, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে বিদেশি বিনিয়োগ। পাশাপাশি, শিল্প পরিকাঠামো,শ্রম আইন, কর-কাঠামো, উৎপাদন নীতির মতো বিভিন্ন বিষয়ে রাজ্যগুলির মধ্যে অসামঞ্জস্যও শিল্পমহলের মাথাব্যথার বড় কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
আর এই সবের জেরে শ্লথ হয়েছে আর্থিক বৃদ্ধির গতি। যে অশনি সঙ্কেত রীতিমতো স্পষ্ট স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওর্স এবং মুডিজ অ্যানালিটিকস্-এর মূল্যায়ন (ক্রেডিট রেটিং) সম্পর্কিত দৃষ্টিভঙ্গিতে। কয়েক দিন আগে একই আশঙ্কা প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক অর্থ ভাণ্ডারও। ফলে স্বাভাবিক ভাবেই প্রমাদ গুণছে শিল্প। বিশেষত, টেলিকম, তথ্যপ্রযুক্তি ও তথ্যপ্রযুক্তি-নির্ভর শিল্পগুলি। কারণ, এদের ব্যবসায়িক সাফল্য বিশ্ব বাজারের সঙ্গে এমনই ওতপ্রোত ভাবে জড়িত যে, সরকারি নীতির বিষয়ে স্বচ্ছতা, লাল ফিতের ফাঁস সরিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের মতো বিষয়গুলি তাদের কাছে অসম্ভব দামি। আর সেই কারণেই আর শুধু সরকারে মুখাপেক্ষী হয়ে না-থেকে রাজনীতির কারবারীদের বোঝাতে এ বার নিজেরাই ময়দানে নামছে তারা।
এই উদ্দেশ্যেই বৃহস্পতিবার গডকড়ীর মুখোমুখি হচ্ছে সেন্টার ফর ডিজিটাল ইকনমি পলিসি রিসার্চ (সিডিইপি) নামে ২২ সদস্যের একটি ‘থিঙ্ক ট্যাঙ্ক’-এর প্রতিনিধিরা। যার মধ্যে রয়েছেন ভারতে ওর্যাক্লের চিফ ফিনান্সিয়াল অফিসার মকরন্দ পদলকর, অ্যাকসেঞ্চারের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অবিনাশ বশিষ্ঠ, হিউলেট প্যাকার্ডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর নিলম ধবন, ইনটেলের ম্যানেজিং ডিরেক্টর দেবযানী ঘোষ, মাইক্রোসফ্টের শীর্ষ কর্তা ভাস্কর প্রামাণিক, এইচএসবিসি-র কর্ণধার নয়না লাল কিদওয়াই প্রমুখ। থাকছেন এটিঅ্যান্ডটি কমিউনিকেশন্স, ইনফোসিস, উইপ্রোর শীর্ষ কর্তারাও। থিঙ্ক ট্যাঙ্কে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির সংগঠন ন্যাসকম, বণিকসভা ফিকি ও অ্যামচ্যাম এবং মোবাইল পরিষেবা সংস্থাগুলির সংগঠন ইন্ডিয়ান সেলুলার অ্যাসোসিয়েশন-এরও প্রতিনিধিত্ব রয়েছে। বিজেপি-র পরেই সিডিইপি-র কাছে সব চেয়ে গুরুত্ব পাচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কারণ, সংস্কারের বহু বিষয় নিয়েই বেঁকে বসেছেন সরকারের অন্যতম প্রধান এই শরিক। এমনকী, ইনফোসিস-উইপ্রোর লগ্নি রাজ্যছাড়া হওয়ার উপক্রম হলেও ‘রাজনৈতিক নীতি’র কারণে তাদের প্রকল্পকে বিশেষ আর্থিক অঞ্চলের তকমা দিতে তিনি নারাজ। এই অবস্থায় আর্থিক সংস্কার সম্পর্কে মমতার বিরূপ মনোভাব কাটাতে সক্রিয় হতে চায় সিডিইপি। শুধু কেন্দ্রের ভরসায় বসে না থেকেই। হচ্ছে।” |