কল রয়েছে, কিন্তু জল পড়ে না। যেখানে বা একটু আধটু জল পড়ে, সেখানে লম্বা লাইন। সাকুল্যে কয়েকটি ট্যাপকল। জল পড়ে সরু হয়ে। সব মিলিয়ে এই গরমে তীব্র জলকষ্টে নাভিশ্বাস উঠছে দাঁইহাট পুর এলাকার বাসিন্দাদের। পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগের দায়িত্বে থাকা পুর-কাউন্সিলর সমর চক্রবর্তী অবশ্য জানান, বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকার জন্যই এই অবস্থা। তাঁর কথায়, “বিদ্যুৎ সংযোগ পাওয়া যাচ্ছে না বলেই একটি পাম্প চালু করা যাচ্ছে না। ওই পাম্প চালু হলে ও কয়েকটি জায়গায় পরিকাঠামোগত সমস্যা মেটাতে পারলেই পানীয় জলের সমস্যা আর থাকবে না।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরে জল সরবরাহের জন্য এই মুহূর্তে ৯টি পাম্পিং স্টেশন রয়েছে। সেখান থেকে বাড়িতে বাড়িতে ও রাস্তার ট্যাপকলে জল সরবরাহ করা হয়। পুরসভা সূত্রে খবর, শহরের পাতাইচণ্ডী তলা, কাজিপাড়া, বাজার-মাঠ এলাকা-সহ বেশ কিছু জায়গায় পানীয় জলের তীব্র সমস্যা রয়েছে। ৪ ও ৩ নম্বর ওয়াডের্র ট্যাপকল দিয়ে সরু হয়ে জল পড়ে। শহরের ৪৭ কিলোমিটার এলাকায় পাইপ-লাইনের মাধ্যমে জল সরবরাহ করা হয়। পুরসভার আলাদা জলসরবরাহ বিভাগ থাকলেও সেখানে কোনও ইঞ্জিনিয়র নেই। মাত্র এক জন মিস্ত্রি দিয়েই কাজ চলছে। পুরসভা আরও জানায়, বেশ কিছু এলাকায় জলের জন্য পাইপ-লাইন বসলেও এখনও মূল পাইপের সঙ্গে সংযোগ হয়নি বলে ওই এলাকাগুলি পানীয় জল থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। দাঁইহাটের বাসিন্দা তথা বর্ধমান জেলা কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক রাধানাথ ভট্টাচার্য অবশ্য বলেন, “নতুন পাম্প বসানো হয়েছে। আরও একটি পাম্প বসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।” |
জল সরবরাহের এই অব্যবস্থায় ক্ষুব্ধ স্থানীয় বাসিন্দারা। পাতাইচণ্ডী তলার নিত্যানন্দ কলোনির বাসিন্দা রেণু মজুমদার, গৌরী মণ্ডলরা বলেন, “প্রায় ৬ মাস ধরে জলসঙ্কটে ভুগছি। শীতকালে রাস্তার কলে সরু হয়ে জল পড়ত। গরম পড়তে আর তাও পড়ে না।” স্থানীয় নয়নতারা মণ্ডলও বলেন, “অনেক দূর থেকে জল আনতে হয়। লাইনে দাঁড়ালে অশান্তি তো আছেই।”
খানিক দূরে কাজি পাড়ায় ২২০ টি পরিবারের বাস। মসজিদ লাগোয়া একটি মাত্র ট্যাপ কলই তাঁদের একমাত্র ভরসা। তাঁরা জানান, প্রায় ২৫-৩০ বছর আগে মসজিদের গায়ে ওই ট্যাপকলটি লাগানো হয়েছিল। তখন পরিবার কম ছিল। তাই অসুবিধা হত না। কিন্তু এখন জলের সমস্যা বেড়েছে।” স্থানীয় তহিমা বিবি, রহুবা বিবিরা বলেন, “এক বালতি জলের জন্য এখানে চুলোচুলি হয়। ছেলে কোলে নিয়ে জলের লাইন দিয়েছি।” বাসিন্দাদের দাবি, অন্তত দু’টি ট্যাপকল বসানো হলে জলের সমস্যা কিছুটা মিটবে।”
কিন্তু ট্যাপকল না থাকলেও বিকল্প টিউবওয়েল তো রয়েছে! এলাকার বাসিন্দারা জানান, টিউবওয়েলের জল খাওয়ার যোগ্য নয়। জল থেকে দুর্গন্ধ বেরোয়। ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বাজার মাঠ, ১১ নম্বর ওয়ার্ডের দাসপাড়ার বাসিন্দাদেরও একই অভিযোগ। বাজার-মাঠ এলাকার বাসিন্দারা জানান, পাইপলাইন গিয়েছে প্রায় দু’বছর আগে। কিন্তু ওই পাইপলাইনের সঙ্গে মূল পাইপের এখনও কোনও সংযোগ নেই। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের সহদেব দাস, অশোককুমার গুড়িয়ারা বলেন, “বাড়ির কলেও পানীয় জল পাওয়া যায় না।” ইতিমধ্যেই সমস্যার কথা জানিয়ে পুরসভায় স্মারকলিপি দিয়েছেন তাঁরা। পুরসভার বিরোধী দলনেতা সিপিএমের বিদ্যুৎবরণ ভক্তের অভিযোগ, “পানীয় জল সরবরাহের ব্যাপারে কোনও সদিচ্ছাই নেই পুরসভার। বোর্ড মিটিঙে নেওয়া বেশ কিছু সিদ্ধান্ত কার্যকর করার ব্যাপারেও দোটানা রয়েছে।” তাঁর দাবি, ২০০৫ থেকে ২০১০ পর্যন্ত শহরে পানীয় জল সুষ্ঠু ভাবে সরবরাহ করতে সিপিএম পরিচালিত পুরসভা যে ভূমিকা পালন করেছিল, সে কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেনি কংগ্রেস পরিচালিত পুরবোর্ড। যদিও রাধানাথবাবু বলেন,“গত দু’বছরে পানীয় জলের জন্য আমাদের নেতৃত্বাধীন পুরবোর্ড সচেষ্ট হয়েছে।” |