সংঘাত এড়াতে রাজ্যের বার্তা, চাপ মোর্চার অন্দরেও
ত্রিপাক্ষিক চুক্তির খেলাপ করে বিমল গুরুঙ্গ দার্জিলিং পাহাড়-তরাই-ডুয়ার্সে সরকারি অনুষ্ঠান বয়কটের হুমকি দিলেও এখনই গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সঙ্গে সংঘাতে যাবে না রাজ্য। রবিবার, বিজনবাড়ি সেতুর পুনর্নির্মাণ ফলকের উদ্বোধন ও বকেয়া ক্ষতিপূরণ বিলির কর্মসূচি স্থগিত করে কার্যত সেই ‘বার্তা’ই দিল সরকার। সরকারি সূত্রের খবর, মোর্চা নেতৃত্ব চুক্তির শর্ত অমান্য করে ‘অশান্তি’ ছড়ানোর চেষ্টা করায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘বিরক্ত’। তা সত্ত্বেও পাহাড় ও লাগোয়া সমতলে শান্তি বজায় রাখাই যে অগ্রাধিকার পাচ্ছে, তা স্পষ্ট ওই ‘বার্তা’য়। তবে রাজ্যের আশা, মোর্চা চুক্তি মেনে নিজেদের ‘সংযত’ রেখে উন্নয়ন প্রক্রিয়া মসৃণ করবে।
ঘটনা হল, এই অনুষ্ঠান স্থগিত রাখার সিদ্ধান্তে মুখ্যমন্ত্রীর ‘মনোভাব’ বুঝেছে মোর্চাও। অন্তত রবিবার বিমল গুরুঙ্গ দলীয় নেতা-কর্মীদের তেমনই ইঙ্গিত দিয়েছেন। এ দিন ডুয়ার্সের সামসিংয়ে ঘরোয়া বৈঠকে তরাই-ডুয়ার্স নিয়ে নতুন কোনও আন্দোলনের কথা ঘোষণা করেননি মোর্চা সভাপতি। মোর্চা সূত্রে খবর, গুরুঙ্গ পাহাড়ে ছোট ছোট বাজার তৈরি-সহ নানা প্রকল্পে গতি আনায় জোর দেন। বিজনবাড়ির ওই অনুষ্ঠান কী ভাবে দ্রুত করা যাবে, তা নিয়েও কথা হয়েছে।
২০১১ সালের অক্টোবরের শেষে বিজনবাড়ির ঝুলন্ত কাঠের সেতু ভেঙে মারা যান ৩৪ জন। সেই সময়ে মোর্চার সভা চলছিল লাগোয়া এলাকায়। ওই সভায় জড়ো হওয়া অনেকে এক সঙ্গে জীর্ণ সেতুতে ওঠায় তা ভেঙে পড়ে। প্রশ্ন ওঠে মোর্চা নেতাদের ভূমিকা নিয়ে। মুখ্যমন্ত্রী ঘটনার পরের দিনই পাহাড়ে গিয়ে ক্ষতিপূরণ ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। ঘনিষ্ঠ মহলে মোর্চা নেতাদের একাংশের মত, মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকায় তাঁদের ‘মুখরক্ষা’ হয়েছিল। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের তরফে সাড়ে ৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করে শুরু হয় সেতু পুননির্মাণের কাজ।
রবিবার প্রস্তাবিত সেতুর পাশে মৃতদের স্মৃতিতে একটি ফলক উদ্বোধন করে, বকেয়া ক্ষতিপূরণ বিলির কর্মসূচি নিয়েছিল রাজ্য। ওই ফলকের উদ্বোধন করার কথা ছিল উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী গৌতম দেবের। ওই কর্মসূচি পূর্ব নির্ধারিত হলেও সম্প্রতি গুরুঙ্গ পাহাড়ে সরকারি অনুষ্ঠান বয়কটের ‘ফতোয়া’ জারি করায় রাজ্য ‘উদ্বিগ্ন’ হয়ে পড়ে। প্রশাসনের তরফে বারবার যোগাযোগ করা হলেও মোর্চা নেতারা প্রথমে ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন না বলে জানিয়ে দেন। বিজনবাড়ি এলাকায় মোর্চা সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভ দানা বাঁধে। প্রশাসনের এক শীর্ষ অফিসার মোর্চা নেতাদের জানিয়ে দেন, ‘এ ভাবে’ পাহাড়ের উন্নয়নের কাজে বাধা দেওয়াটা ‘নিজেদের পায়ে কুড়ুল মারার সামিল’ হয়ে যাবে। শেষ মুহূর্তে মোর্চা নেতারা অনুষ্ঠান করার পক্ষে মত দেন। কিন্তু তত দিনে মোর্চার ‘টালবাহানা’য় ‘বিরক্ত’ মুখ্যমন্ত্রীর তরফে উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রীকে নির্দেশ দেওয়া হয়, শান্তির স্বার্থে আপাতত কোনও সংঘাতে না গিয়ে অনুষ্ঠান স্থগিত করা হোক। উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী বলেন, “পাহাড় এবং লাগোয়া সমতলে উন্নয়নে গতি এসেছে। শান্তি বজায় না থাকলে তাতে বাধা পড়বে। মুখ্যমন্ত্রী শান্তি বজায় রাখতে চান।”
মোর্চার কিছু নেতা মনে করছেন, ক্ষমতাসীন হওয়ার পরে বারেবারেই পাহাড়ে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। কেন্দ্রকে চাপ দিয়ে জিটিএ চুক্তিতে অনুমোদন আদায় করেছেন। তরাই-ডুয়ার্সের কিছু এলাকা পাওয়ার দাবি খতিয়ে দেখতে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন কমিটি গড়েছেন। সেই কমিটির রিপোর্ট সব পক্ষ মানতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অথচ, সেই রিপোর্ট জমা পড়ার আগেই মোর্চা এবং মোর্চা বিরোধীদের টানা আন্দোলনে পাহাড় ও সমতল বিপর্যস্ত হতে শুরু করেছে। এমন চললে মুখ্যমন্ত্রীর ‘বিরক্তি’ চরমে পৌঁছতে পারে। সে ক্ষেত্রে কেন্দ্রও বিরূপ হওয়ার আশঙ্কা। সে জন্যই মুখ্যমন্ত্রীর ‘মনোভাব’কে মর্যাদা দিয়ে আপাতত ‘সংযত’ থাকার নীতি নেওয়া উচিত বলে সওয়াল উঠেছে মোর্চারই অন্দরে। মোর্চার কেন্দ্রীয় কমিটির এক সদস্যের কথায়, “সংযত না হলে আখেরে যে আমাদেরই ক্ষতি, সেই বার্তা পৌঁছেছে সভাপতির কাছেও।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.