হলদিয়া
পুরভোটের মুখে সিটুর জয়ে অস্বস্তিতে তৃণমূল
সন্ন পুর নির্বাচনের মুখে হলদিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ একটি কারখানার শ্রমিক প্রতিনিধি নির্বাচনে অপ্রত্যাশিত জয় পেল সিটুগত ১২ বছর ধরে যা দক্ষিণপন্থীদের দখলে ছিল। ‘পরিবর্তনে’র হাওয়ার এই ‘পরিবর্তনে’ কৌতুহল তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক মহলে। উঠছে বেশ কিছু প্রশ্নযা নিঃসন্দেহে বিপাকে ফেলেছে তৃণমূল শিবিরকে। তৃণমূল নেতৃত্ব এই হারকে অপ্রত্যাশিত বলে স্বীকার করলেও পুরভোটে এর কোনও প্রভাব পড়বে না বলে দাবি করেছেন। যদিও সিপিএম নেতৃৃত্বের মতে, কারখানার শ্রমিকদের মতোই এ বার সাধারণ মানুষেরাও তৃণমূলের থেকে মুখ ফেরাবে।
শুক্রবার রাতে টাটা কেমিক্যালস্-এর স্থায়ী শ্রমিক ইউনিয়নের ভোটের ফল প্রকাশের পরে দেখা যায়, ২১টি আসনের ১৮টিতে জিতেছেন সিটু প্রভাবিত ‘প্রগতিশীল মঞ্চে’র সদস্যেরা। মাত্র তিনটি আসন পেয়েছে বামবিরোধী ‘জাতীয়তাবাদী প্রগতিশীল মঞ্চ’। কংগ্রেস ও তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন যৌথ ভাবে সিটুর বিরোধিতা করলেও হারের পরে জাতীয়তাবাদী প্রগতিশীল মঞ্চের সঙ্গে তাদের সম্পর্কের কথা অস্বীকার করেছে।
পূর্ব মেদিনীপুরের শিল্পশহর হলদিয়ার অধিকাংশ কারখানায় দীর্ঘ দিন ধরেই সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিটুর দাপট ছিল প্রশ্নাতীত। কিন্তু ২০০৭ সালে নন্দীগ্রাম-কাণ্ডের পর দোর্দণ্ডপ্রতাপ শ্রমিক নেতা তথা সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠের সেই ‘সাম্রাজ্যে’র ভিত দুর্বল হয়ে পড়ে। ২০০৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে লক্ষ্মণবাবুকে পরাজিত করেন তৃণমূল নেতা শুভেন্দু অধিকারী। আর এরপরই হলদিয়ার অধিকাংশ কারখানায় তৃণমূল শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র পতাকা উঠতে শুরু করে। কর্মী-শ্রমিকদের দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলনের পাশাপাশি মালিকপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করার ক্ষমতা পান তৃণমূলের শ্রমিক নেতারা। গত তিন বছরে এই ভাবেই ক্রমশ প্রভাব-প্রতিপত্তি বেড়েছে তাঁদের। সেই সঙ্গে তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দলও প্রকাশ্যে এসেছে বারবার। এমনকী মাসখানেক আগে এক্সাইড কারখানায় সিটুর বিরুদ্ধে আলাদা ভাবে প্রার্থী দিয়ে লড়াই করেছিল তৃণমূলের দু’টি গোষ্ঠী।
নব্য শ্রমিক নেতাদের গোষ্ঠীকোন্দল সামলাতে জেলা এমনকী রাজ্য স্তরের নেতাদেরও প্রায়শই হস্তক্ষেপ করতে হয়যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে শিল্পাঞ্চলে। টাটা কেমিক্যালস্-এও এমনটাই হয়েছে বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতারা। গত ১২ বছরে কংগ্রেস শ্রমিক সংগঠন আইএনটিইউসি ও শেষ দিকে তৃণমূল শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি সমর্থিত প্রার্থীরাই জয়ী হয়েছেন এই কারখানার শ্রমিক প্রতিনিধি নির্বাচনে। সেখানে এ বারের অপ্রত্যাশিত এই হার দলের মধ্যে নানা প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। রাজ্যে শাসন ক্ষমতায় থাকার সুবাদে আত্মবিশ্বাসী তৃণমূল শ্রমিক নেতাদের ধারণা ছিল এ বারও জয় নিশ্চিত। পরাজয়ের কারণ হিসাবে অতিরিক্ত এই আত্মবিশ্বাসকেই দায়ী করেছেন শিল্পাঞ্চলের পোড় খাওয়া শ্রমিক নেতা তথা জেলা আইএনটিটিইউসি-র কার্যকরী সভাপতি শিবনাথ সরকার। শিবনাথবাবু বলেন, “দীর্ঘ দিন ধরে টানা জিতে থাকার ফলে সাংগঠনিক ভাবে এ বার তেমন প্রচার করা হয়নি। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠান বিরোধী প্রভাবও কিছুটা পড়েছে। তবে এই হার আমাদের কাছে অপ্রত্যাশিত।” অন্য দিকে হলদিয়ার সিটু নেতা তথা সিপিএমের লোকাল কমিটির সদস্য সুদর্শন মান্না বলেন, “স্বার্থরক্ষা কারা করবে, তা বুঝতে পেরে গিয়েছে শ্রমিকেরা। অভিজ্ঞতার ভিত্তিতেই আমাদের সমর্থন করেছে তারা।” আগামী ৩ জুন শিল্পশহরে পুর-নির্বাচন। দীর্ঘ দিন ধরে বাম পরিচালিত এই পুরসভার ক্ষমতা দখল এ বার তৃণমূলের কাছে চ্যালেঞ্জ। নন্দীগ্রাম-কাণ্ডে লক্ষ্মণ শেঠ-সহ জেলার তিন সিপিএম নেতার গ্রেফতার নিয়ে প্রচারও শুরু করে দিয়েছে তৃণমূল। একটি কারখানার শ্রমিক প্রতিনিধি নির্বাচনের ফলাফল পুরভোটে কোনও প্রভাব ফেলবে না বলেই দাবি জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের। তবে, জেলার সিপিএম নেতা নিরঞ্জন সিহি বলেন, “কারখানার পরিবেশ দেখে যে ভাবে শ্রমিকেরা তৃণমূলের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন, তেমনই জেলা পরিষদ ও রাজ্যের হাল দেখে সাধারণ মানুষ বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছেন। আসন্ন পুরভোটেও এই প্রবণতাই ফুটে উঠবে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.