সম্পাদকীয় ২...
মুক্তিপণের রাজনীতি
ড়িশায় অপহৃত ইতালীয় পর্যটক এবং শাসক দলের জনজাতীয় বিধায়কের মুক্তির বিনিময়ে মাওবাদী জঙ্গিদের ছাড়া হইয়াছে। ছত্তীসগঢ়েও জেলা কালেক্টরের মুক্তির শর্ত হিসাবে মাওবাদী বন্দিদের ছাড়িবার উদ্যোগ চলিতেছে। পণবন্দিদের মুক্তিতে তাঁহাদের স্বজনদের স্বস্তি মিলিয়া থাকে। নিরীহ ব্যক্তির রক্তপাতও প্রায়শ এড়ানো যায়। কিন্তু বন্দি-বিনিময় কি এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাইতে সহায়ক? যদি না-হয়, তবে এ প্রশ্ন উঠিবে যে, সরকার ‘ব্ল্যাকমেল’-এর কাছে নতিস্বীকার করিল কেন? ইহা কি ভবিষ্যতে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য অপহরণ-কাণ্ডে মাওবাদীদের আরও উৎসাহিত করিবে না? ওড়িশার নবীন পট্টনায়ক সরকার কিংবা ছত্তীসগঢ়ের রমন সিংহ সরকার কি এই সম্ভাবনাটি মাথায় রাখিয়া সিদ্ধান্ত লইয়াছে?
মুক্তিপণ হিসাবে বন্দি-বিনিময়ের পদ্ধতিটি একেবারে অর্বাচীন নয়। অন্ধ্রপ্রদেশ, বিহার, ওড়িশা পশ্চিমবঙ্গে নকশালপন্থীরা, অসমে আল্ফা ও বড়ো জঙ্গিরা ধৃত সহকর্মীদের কারামুক্ত করিতে একাধিকবার এই পদ্ধতি অবলম্বন করিয়াছে। সরকারের পক্ষে যে সহজে নতিস্বীকার করা অনুচিত, এ কথা কেহই অস্বীকার করিবে না। সহজে ধৃত জঙ্গি নেতাদের ছাড়াইয়া লওয়া গেলে সন্ত্রাসবাদীরা সেই সহজ পথটিই অনুসরণ করিবে। কিন্তু, জঙ্গিদের প্রতি এ ধরনের নমনীয় মনোভাব শেষ বিচারে আইনের শাসন কায়েমের পথেই বাধা হইয়া দাঁড়ায়। সর্বোপরি, এ ভাবে কুখ্যাত এবং ক্ষেত্রবিশেষে দণ্ডিত জঙ্গিদের মুক্তি দিলে জঙ্গি-দমন অভিযানে নিযুক্ত পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর মনোবলও ভাঙিয়া পড়ে। ওড়িশায় যেমন পুলিশ প্রশাসনের তরফে বন্দি-বিনিময়ে তীব্র আপত্তি তোলা হইয়াছিল। জঙ্গিদের হাতে যে বহুসংখ্যক পুলিশ হতাহত হইতেছেন, তাঁহাদের পরিবার ও আত্মীয়বন্ধুরাও এই সরকারি নীতিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া জানাইতেছেন। সত্যই কী করা উচিত, তাহা পরিস্থিতিসাপেক্ষ, কিন্তু সম্পূর্ণ বিষয়টি ভাবিলে কয়েকটি বিষয় উঠিয়া আসে।
জঙ্গিদের দ্বারা অপহৃতরা যদি হন বিশিষ্ট ব্যক্তি, পদস্থ সরকারি অফিসার কিংবা বিদেশি নাগরিক, তবে সরকারের পক্ষে কঠোর অবস্থান লওয়া কঠিন হইয়া পড়ে। বিদেশি নাগরিকের ক্ষেত্রে সংকট আরও বেশি। কূটনৈতিক সম্পর্কও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার শঙ্কা থাকে। নিরীহ মানুষদের অপহরণের ক্ষেত্রেও জন-জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আইনগত ও সাংবিধানিক দায় সরকার এড়াইতে পারে না। কিন্তু এই সব ক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, রাশিয়া কিংবা চিন কী অবস্থান লইয়া থাকে? তাহারা কি জঙ্গিদের মুক্তিপণের দাবি মানিয়া লয়? কখনওই না। কেননা মুক্তিপণের দাবি শিরোধার্য করিলে জঙ্গিরা তাহা বারংবার পুনরাবৃত্ত করিতে বাধ্য। কঠোরতা এ ক্ষেত্রে আবশ্যিক। সম্ভাব্য যাবতীয় বিকল্প খতাইয়া দেখাও উচিত। সে জন্য সময় ও ধৈর্যও জরুরি। জঙ্গিরা যতই চূড়ান্ত সময়সীমা ধার্য করুক, নিজ স্বার্থেই মুক্তিপণ হাসিল না-হওয়া অবধি তাহারা হঠকারী কিছু করিবে না। তাই সরকারের তরফে তাড়াহুড়া করিয়া মুক্তিপণ শিরোধার্য করা কিংবা চাপের মুখে ভাঙিয়া পড়ার মতো স্নায়ুদৌর্বল্য প্রদর্শন সমীচীন নয়। বিষয়টি গুরুতর বিবেচনার দাবি রাখে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.