সম্পাদকীয় ১...
এই বৈশাখেই
শ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী অনেক সময়েই তাঁহার মনের কথা সাফ সাফ বলিয়া দেন। স্বচ্ছতা একটি বিশেষ গুণ বইকী। তথ্য প্রযুক্তি সংস্থা ইনফোসিস পশ্চিমবঙ্গে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বা এস ই জেড-এর সুবিধা চাহিতেছে, কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী তথা তাঁহার দলের ঘোষিত নীতি ইহাই যে, তাঁহারা এস ই জেড অনুমোদন করিবেন না। ফলে ইনফোসিসের বিনিয়োগ অনিশ্চিত হইয়া পড়িয়াছে। তথ্য প্রযুক্তি শিল্পে বিনিয়োগ যত বেশি হইবে, কর্মসংস্থানের সুযোগও তত বাড়িবে। কেবল কর্মসংস্থানের সংখ্যায় নয়, তাহার গুণমানেও এই শিল্প প্রায় অ-তুলনীয় পশ্চিমবঙ্গে শিক্ষিত কর্মপ্রার্থীর সংখ্যা বিপুল এবং ক্রমবর্ধমান, এই শিল্পে তেমন কর্মীরই প্রয়োজন। ইনফোসিসের মতো সংস্থা কেবল নিজেই প্রচুর কাজের সুযোগ সৃষ্টি করিবে না, তাহার টানে অনুরূপ শিল্পে জড়িত আরও অনেক সংস্থা আসিতে পারে। বেঙ্গালুরু এক দিনে বেঙ্গালুরু হয় নাই। সুতরাং ইনফোসিস সংক্রান্ত অনিশ্চয়তা পশ্চিমবঙ্গের পক্ষে বিপজ্জনক। মুখ্যমন্ত্রী সমস্যাটি সম্পর্কে অবহিত বলিয়াই মনে হয়। তিনি স্পষ্ট ভাষাতেই বলিয়াছেন, ইনফোসিস বা উইপ্রো বা অন্য যে কোনও তথ্য প্রযুক্তি সংস্থা পশ্চিমবঙ্গে স্বাগত।
কিন্তু স্বাগত জানাইলেই বিনিয়োগকারীরা সমাগত হন না, তাঁহাদের দাবি বা শর্ত পূরণ করিতে হয়। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে ইহা দ্বিগুণ সত্য। কারণ পশ্চিমবঙ্গে শিল্পের পরিবেশ এবং পরিকাঠামো বহুলাংশে দুর্বল, তদুপরি সামাজিক ও রাজনৈতিক মানসিকতা শিল্পোন্নয়নের পরিপন্থী বলিয়াই পরিচিত ও প্রচারিত। সুতরাং এস ই জেড-এর সুযোগসুবিধা যদি দেওয়ার দরকার হয়, রাজ্যের উন্নয়নের স্বার্থেই তাহা দেওয়া উচিত। মুখ্যমন্ত্রী ইহাও সম্ভবত জানেন। জানেন বলিয়াই তিনি কার্যত কৈফিয়তের সুরেই বলিয়াছেন, ইনফোসিসকে এস ই জেড তকমা দিতে না পারায় তাঁহার খারাপ লাগিতেছে, কিন্তু তিনি বা তাঁহার দলই বা আপন অবস্থান হইতে সরিবেন কী উপায়ে? অর্থাৎ, এক কথায় মুখ্য্যমন্ত্রী ধর্মসঙ্কটে পড়িয়াছেন। এত দিন যে নীতি প্রচারক করিয়াছেন, নির্বাচনী ইস্তাহারে যে নীতি নথিভুক্ত করিয়াছেন, আজ ক্ষমতাসীন হইয়া তাহার বিপরীত পথে চলিবেন কী রূপে?
উত্তর সহজ। পৃথিবী পরিবর্তনশীল। প্রয়োজন বদলায়, পরিস্থিতি বদলায়, ধারণা বদলায়, সেই অনুসারে সরকারি নীতিও বদলাইতে হয়। কবে কী বলিয়াছিলাম বা কোন ইস্তাহারে বা কেতাবে কী লিখিয়াছিলাম, সেই অচলায়তন আঁকড়াইয়া থাকিলে উন্নয়ন দূরস্থান, কোনও অগ্রগতি হয় না। বিবর্তনই জীবনের পথ, অগ্রগতির পথ, ফসিলের কোনও অগ্রগতি নাই। ইতিহাস তাহার প্রমাণ। দেং জিয়াও পিং কেতাব ছাড়িয়া, চার দশকের অনুশাসন অস্বীকার করিয়া নূতন পথে হাঁটিয়াছিলেন বলিয়াই পুরানো চিন নূতন চিন হইয়াছে। মহাযুদ্ধের পরে অর্থনীতির নূতন প্রয়োজন উপলব্ধি করিয়াই স্বয়ং লেনিন তাঁহার ‘নূতন অর্থনৈতিক নীতি’ অনুসরণ করিয়াছিলেন, তাঁহার অকালপ্রয়াণ না ঘটিলে সোভিয়েত অর্থনীতি হয়তো সেই পথেই অগ্রসর হইত, জুরাসিক যুগে ফিরিয়া যাইত না। নেহরু এবং তাঁহার কন্যার সমাজতান্ত্রিক খাঁচায় বন্দি থাকিলে নরসিংহ রাও ভারতের অর্থনীতিকে নূতন সম্ভাবনার সম্মুখীন করিতে পারিতেন না। তাঁহারা কেহই কবে কী বলিয়াছিলেন তাহার দাসত্ব করেন নাই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক বুদ্ধি এবং কাণ্ডজ্ঞানের বহু নিদর্শন দেখা গিয়াছে, প্রণব মুখোপাধ্যায়রা তাহা মর্মে মর্মে বুঝিতেছেন। মুখ্যমন্ত্রী সেই বাস্তববোধ অর্থনীতিতেও প্রয়োগ করুন। পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থে আপন ‘জেদ’ বিসর্জন দিন। তাহাতে তাঁহার মা মাটি মানুষেরই কল্যাণ হইবে। রবীন্দ্রনাথ তাঁহার প্রিয় কবি। ‘বৈশাখ আবাহন’ কবিতায় সেই কবি প্রার্থনা করিয়াছিলেন, বৎসরের আবর্জনা দূর হইয়া যাক,
যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে যাওয়া গীতি,
অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই বাণী স্মরণ করুন। মান্য করুন। এই বৈশাখেই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.