ঐতিহ্যের চামুণ্ডা পুজোয় উৎসবের মেজাজ মন্তেশ্বরে
বাড়িতে বাড়িতে এখন ‘অরন্ধন’ চলছে মন্তেশ্বরের গ্রামে। চামুণ্ডা পুজোয় মেতে রয়েছে গোটা গ্রাম। শুরু হয়েছে শনিবার থেকে। চার দিনের এই পুজোকে কেন্দ্র করে মন্তেশ্বর এখন মুখর মেলায়, যাত্রাপালার আসরে। বহু বছরের প্রাচীন এই পুজো মন্তেশ্বরের সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। সেই ইতিহাস নিয়ে এ দিন প্রকাশিত হল স্থানীয় হারাধন মুখোপাধ্যায়ের লেখা ‘চামুণ্ডার পুণ্য সাধনভূমি মন্তেশ্বর ও তার সংস্কৃতি’ নামে একটি বইও।
জনশ্রুতি, চতুর্দশ শতকের প্রথম ভাগে গ্রামের গোপাল রায় এবং প্রতিরাম সর্দার নামে দুই ব্যক্তি শুরু করেছিলেন এই পুজো। মঙ্গলকোটের বামুনগ্রামের মোড়ল পরিবারের কাছ থেকে দেবীকে তাঁরা নিয়ে এসেছিলেন নিজেদের গ্রামে। কষ্টি পাথরের সেই প্রতিমার দৈর্ঘ্য প্রায় ২৩ ইঞ্চি, প্রস্থ ১২ ইঞ্চি। তৈরি করা হয় দেবীর একটি স্থায়ী ও দু’টি অস্থায়ী মন্দির। ১৭৩৯ সালে বর্ধমানের রাজা কীর্তিচাঁদ দেবীর পুজোর জন্য ৪২ বিঘা জমি দান করেন। দেবোত্তর জমি বাদ দিয়ে, অবশিষ্ট দানের জমি পান গ্রামের পুরোহিত, মালাকার, চাকী, কৈবর্ত ও প্রামাণিকরা। এখনও দেবীর সারা বছরের নিত্যসেবা ও বাৎসরিক অনুষ্ঠানের খরচ আসে সেই জমির আয় থেকে। সারা বছরই চামুণ্ডার পুজো হয় গ্রামে। কিন্তু বৈশাখ মাসের শুক্ল পক্ষের অষ্টমী তিথিতে বিশেষভাবে পূজিত হন দেবী। বাসিন্দারা জানান, তন্ত্র মতে প্রথম এই পুজো করেন পূর্বস্থলীর মেড়তলা এলাকার ভট্টাচার্য পরিবারের এক সদস্য। সেই রীতি অনুসরণ করেই এখনও চলছে পুজো।
ছবি: কেদারনাথ ভট্টাচার্য।
সপ্তমীর গভীর রাতে দেবীর সেই কষ্টি পাথরের প্রতিমা মূল মন্দির থেকে বের করেন পুরোহিত। তাঁকে অনুসরণ করেন একদল বাজনদার। গন্তব্য খাঁয়েদের পুকুর। রাতের মতো সেখানেই রেখে আসা হয় দেবী প্রতিমাকে। দেবীর এই যাত্রার নাম রায়কা। অষ্টমীর সকালে ভক্ত-গ্রামবাসীরা আসেন ওই পুকুরে। জলের গভীর থেকে প্রতিমাকে তোলেন, এর পর ঘাটেই সারা হয় পুজো। শেষ হলে প্রতিমাকে কাঁধে তুলে নিয়ে ভক্তরা নাচতে নাচতে নিয়ে যান অস্থায়ী মন্দিরে। যাত্রাপথে ঘোরানো হয় গ্রাম। গ্রামবাসীদের সদরে দেবীর জন্য প্রস্তুত থাকে ছোট ছোট বেদী। গঙ্গাজল ও দুধ নিবেদন করা হয় দেবীর উদ্দেশে। কোথাও বা বলি দেওয়া হয় পাঁঠা বা আস্ত একটা ভেড়া। অস্থায়ী মন্দিরে পৌঁছনোর পরে সেখানে আবার মোষ বলি দেওয়া হয় দেবীর উদ্দেশে। মন্দিরে পৌঁছনোর আগে অবধি সারা গ্রামে পালিত হয় ‘অরন্ধন’। নবমীর দিন ফের গোটা গ্রাম ঘোরানো হয় দেবীকে। দশমীর দিন চতুর্দোলায় চাপিয়ে দেবীকে নিয়ে যাওয়া হয় মন্দিরে। সেখানেও দেবী প্রতিমাকে ঘিরে চলে ভক্তদের নাচ, আবির খেলা, আতস বাজির উৎসব। সন্ধ্যায় দেবীকে আবার ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় মূল মন্দিরে।
সুষ্ঠু ভাবে এই উৎসব পরিচালনার পিছনে রয়েছে গ্রামীণ যৌথ চেতনা। গ্রামের বয়স্ক ব্যক্তিরা ভাগ করে নেন পুজোর দায়িত্ব। পুজো পরিচালনার জন্য রয়েছে চামুণ্ডা নাট্য সঙ্ঘ। সঙ্ঘের এক কর্মী শুভেন্দু রায় বলেন, “উৎসবের আয়োজনে যাতে কোনও ফাঁক না থাকে, তার আপ্রাণ চেষ্টা করি।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.