বছর পঁচিশের কেলি বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা মারতে চান, কমেডি শো দেখে মন খুলে হাসতে চান। প্রিয়জনের সঙ্গে রেস্তোরাঁর আলো-আঁধারিতে কাটাতে চান গোটা সন্ধে। প্রাণভরে আদর করতে চান নিজের দুই ছেলেকে। তাঁর বয়সী আর পাঁচটা মেয়ের মতোই।
কিন্তু কেলি টিমসন পারেন না। কোনওটাই পারেন না।
ষোলো বছর বয়স থেকেই কেলির শরীরে বাসা বেঁধেছে এক জটিল স্নায়ুরোগ। স্নেহ-ভালবাসা, হাসি-কান্না, রাগ-দুঃখ-অভিমানের মতো চেনা অনুভূতিগুলো তৈরি হলেই বাদ সাধে তাঁর শরীর। সটান পড়ে যান তিনি। কয়েক মিনিট থেকে শুরু করে কখনও কখনও এক ঘণ্টার জন্য হারিয়ে ফেলেন কথা বলা, নড়াচড়ার ক্ষমতা। সাহায্য চেয়ে কাউকে ডাকার ক্ষমতাও থাকে না তাঁর। ফলে কখনও চোট পান, কখনও বা নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। কখনও বা কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই এ রোগের প্রকোপ শুরু হয়ে যায়।
রোগটার নাম ক্যাটাপ্লেক্সি। যে রোগে কোনও অনুভূতি জোরদার হলেই দুর্বল হয়ে পড়ে শরীরের পেশি। কেলি তাই একা থাকতে পারেন না কোথাও। কখন কী হয়! দুই ছেলেকে সাধ মিটিয়ে আদর করাও হয় না। তারই সঙ্গে কেলিকে ভোগায় আর এক রোগ নারকোলেপ্সি, যে রোগে দিনের বেলাও আচমকা যখন-তখন ঘুমিয়ে পড়েন ওই তরুণী। কাজের জায়গায়, টিভি দেখতে বসে, ডিনার টেবিলে, এমনকী স্নান করতে করতেও। সম্প্রতি এক বিদেশি দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে কেন্টের বাসিন্দা ওই তরুণীর সমস্যার কথা।
কেলির রোগ কিন্তু অপরিচিত নয় এ শহরেও। কলকাতার স্নায়ুরোগ চিকিৎসকেরা বলছেন, নারকোলেপ্সি অনেকেরই হয়। ক্যাটাপ্লেক্সি জন্ম নেয় ওই রোগেরই পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ায়। তবে নারকোলেপ্সি থাকলেই যে ক্যাটাপ্লেক্সি হবে, এমন নয়। গোটা বিশ্বে মাত্র ০.০২ শতাংশ রোগী একই সঙ্গে নারকোলেপ্সি এবং ক্যাটাপ্লেক্সিতে আক্রান্ত হন। স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ তৃষিত রায় যেমন দীর্ঘ কর্মজীবনে এক বারই এমন এক রোগীকে পেয়েছিলেন। অফিসের কম্পিউটারে কাজ করতে করতে আচমকা ক্যাটাপ্লেক্সির প্রকোপে মুখ থুবড়ে পড়ে সম্ভবত দমবন্ধ হয়েই মারা যান সেই ব্যক্তি। নারকোলেপ্সিতে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা অবশ্য তুলনায় বেশি, ২০০০ জনে ১ জন।
তৃষিতবাবু বলেন, “নারকোলেপ্সিতে যখন-তখন ঘুমিয়ে পড়েন রোগীরা। রাতে ঘুমোনোর পরেও দিনের বেলা কাজ করতে করতেও দু’মিনিট পরপর ঘুমিয়ে পড়ছেন এমনটাও দেখা যায়।” মস্তিষ্কের যে অংশ জেগে থাকা বা ঘুম নিয়ন্ত্রণ করে, সেই অংশেরই এক জিনগত সমস্যায় এই রোগের সৃষ্টি। তারই এক পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া ক্যাটাপ্লেক্সি, যাতে বিভিন্ন অনুভূতি জোরদার হলে হঠাৎই শক্তি হারিয়ে ফেলে শরীরের বিভিন্ন পেশি। ফলে তৎক্ষণাৎ পড়ে যান রোগী। কথা বলা বা নড়াচড়ার ক্ষমতা চলে যায়। তবে দৃষ্টি বা শ্রবণশক্তি বজায় থাকে।
শহরেরই আর এক স্নায়ুবিশেষজ্ঞ দেবাশিস চক্রবর্তী জানালেন, মূলত মস্তিষ্কে ওরেক্সিন নামে যে রাসায়নিক ঘুম বা জেগে থাকা নিয়ন্ত্রণ করে, তার অভাবেই নারকোলেপ্সি দেখা দেয়। রোগীরা অল্প সময়ের মধ্যেই গভীর ঘুমে ডুবে যান, যে অবস্থাটা আসতে সাধারণত অন্তত এক ঘণ্টা থেকে ৯০ মিনিট লাগা উচিত। নারকোলেপ্সি থেকেই ক্যাটাপ্লেক্সি ছাড়াও স্লিপ প্যারালিসিস অর্থাৎ ঘুমের আগে-পরে আড়ষ্টতা, মাইক্রোস্লিপ বা ঘুমিয়ে কথা বলা, হাত-পা নাড়া, হ্যালুসিনেশন অর্থাৎ ঘুমের ঘোরে খারাপ কিছু দেখা জাতীয় সমস্যা হয়।
সদ্য প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যেই জিনঘটিত এই রোগ বেশি দেখা যায়। রোগ পুরোপুরি নির্মূল করার মতো চিকিৎসা এখনও নেই। চিকিৎসকের মতে, দিনের বেলা যখন-তখন ঘুম পেয়ে যাওয়া বা হাসি-কান্নার সময়ে আচমকা দুর্বলতার সমস্যা দেখা দিলেই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। রোগটা যেহেতু জিনবাহিত, তাই পরিবারে কারও থাকলে এ রোগ হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না। তৃষিতবাবু এবং দেবাশিসবাবু জানালেন, ঘুমের বিভিন্ন ডাক্তারি পরীক্ষা এবং মেরুদণ্ডের পরীক্ষায় নির্ণয় করা সম্ভব রোগটা আসলে নারকোলেপ্সি বা ক্যাটাপ্লেক্সি কি না। সে ক্ষেত্রে চিকিৎসা শুরু করে অন্তত রোগটাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে।
|
মিড-ডে মিল খেয়ে অসুস্থ ৫০ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
প্রচণ্ড গরমের মধ্যে স্কুলে মিড-ডে মিল খেয়ে পড়ুয়াদের ফের অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনা ঘটল পশ্চিম মেদিনীপুরে। শনিবার ডেবরার ডুঁয়ায় নজরুল-স্মৃতি শিশু শিক্ষাকেন্দ্রের অন্তত ৫০ জন পড়ুয়া অসুস্থ হয়ে পড়ে। তাদের মধ্যে ১২ জনকে গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিএমওএইচ রজত পাল। |