শেষ পর্যন্ত প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক আরাবুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা শুরু করল পুলিশ। ভাঙড় কলেজের ঘটনায় দল আরাবুলের পাশে দাঁড়ালেও জনমতের চাপের মুখে পুলিশ এই পদক্ষেপ করতে বাধ্য হল বলেই শাসক দল এবং প্রশাসনের একাংশের অভিমত। ঠিক যেমনটা হয়েছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্রের ক্ষেত্রে। তৃণমূল, এমনকী খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অম্বিকেশবাবুকে দোষারোপ করলেও জনমানসে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার জেরে তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে চার জনের বিরুদ্ধে মামলা শুরু করতে হয় পূর্ব যাদবপুর থানার পুলিশকে। অম্বিকেশবাবু অভিযোগ দায়ের করার এক ঘণ্টার মধ্যে ওই চার জনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাঁরা আদালত থেকে জামিন পান।
এ ক্ষেত্রেও শুক্রবার রাতে ভাঙড় কলেজের ৯ জন শিক্ষক-শিক্ষকা দক্ষিণ ২৪ পরগনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের কাছে আরাবুল ও তাঁর ছেলের নামে এফআইআর দায়ের করার পরেই নড়েচড়ে বসে পুলিশ। ওই দু’জনের নামে দায়ের করা হয় মামলা। যদিও ওই মামলার সমস্ত ধারাই জামিনযোগ্য। পাশাপাশি শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই ঘটনার তদন্তও শুরু হয়েছে। গত মঙ্গলবার ঠিক কী ঘটেছিল, তা জানতে এ দিন ভাঙড় কলেজে যান ভাঙড় থানার ওসি আশিস দাস। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আলাদা আলাদা ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেন তিনি। তবে রাত পর্যন্ত আরাবুলকে গ্রেফতার করা হয়নি।
তৃণমূলের এক প্রথম সারির নেতার মতে, বিষয়টি নিয়ে যে ভাবে ক্রমশই ‘জনমত’ তৈরি হচ্ছিল, তাতে ‘স্বচ্ছতা’র খাতিরে পুলিশি তদন্ত করতে হত। তবে একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, “বিষয়টা ঠিক কী হয়েছিল, তা পুলিশি তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে। সেই কারণেই তদন্ত শুরু হয়েছে। তদন্তে যদি দেখা যায়, আরাবুলের সম্পর্কে যে অভিযোগ আনা হচ্ছে, তার পুরোটা সত্যি নয়, তা হলে সেটাও তো প্রকাশ্যে আসা উচিত!”
ভাঙড় কলেজের পরিচালন সমিতির সভাপতি আরাবুলের বিরুদ্ধে দেবযানী দে নামে কলেজের এক শিক্ষিকাকে হেনস্থা করা এবং উত্তপ্ত বাদানুবাদের জেরে তাঁর দিকে জলের জগ ছুড়ে মারার অভিযোগ উঠেছিল। দল এবং সরকারের তরফে আরাবুলের পাশে দাঁড়িয়ে বলা হয়েছিল, ওই শিক্ষিকার সঙ্গে আরাবুলের উত্তপ্ত কথা-কাটাকাটি হলেও জগ ছুড়ে মারার কোনও ঘটনা ঘটেনি। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জমা-পড়া রিপোর্টেও জগ ছোড়ার কথা বলা হয়নি। পাশাপাশিই সরকারের তরফে বারবার বলা হচ্ছিল, জগের আঘাতে দেবযানী থুতনিতে চোট পেয়ে থাকলে তিনি কেন পুলিশ অভিযোগ দায়ের করাননি এবং মেডিক্যাল পরীক্ষাও করাননি?
শুক্রবার ওই কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনের সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনিও তাঁদের বিষয়টি নথিভুক্ত করার ‘পরামর্শ’ দেন। ওই দিন রাতেই দেবযানী দে-সহ কলেজের ৯ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা অভিযোগ দায়ের করেন। কিন্তু তাতে আরাবুলের বিরুদ্ধে জলের জগ ছুড়ে মারার অভিযোগ করা হয়নি। এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ওই শিক্ষিকা শনিবার বলেন, “জগ ছোড়াটা ঘটনার একটা দিক মাত্র। অভিযোগে আমরা বোঝাতে চেয়েছি, সার্বিক ভাবে শিক্ষিক-শিক্ষিকারা আক্রান্ত হয়েছেন এবং তাঁদের নিরাপত্তা নেই।” কিন্তু এই অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁরা ‘আক্রান্ত’, তা কি বলা যায়? ওই শিক্ষিকার জবাব, “গালিগালাজ করা, আঙুল উঁচিয়ে তেড়ে আসা, হুমকি দেওয়াটাও তো আক্রান্ত হওয়া! আমাদের গায়ে তো হাত পড়ার উপক্রম হয়েছিল!” পাশাপাশিই এ দিন ওই শিক্ষিকা স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে তাঁর মেডিক্যাল পরীক্ষা করান।
এ দিকে আরাবুল এ দিন জানিয়েছেন, দলের নির্দেশ ছাড়া তিনি কখনও কোনও কাজ করেননি। করবেনও না। পুলিশ জানিয়েছে, আপাতত শান্তিশৃঙ্খলা বজায় রাখতে কলেজের বাইরে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। |