নতুন প্রজন্মের নেতৃত্ব গড়ে তুলতে রাজ্যের সব জেলায় তরুণ সর্বক্ষণের কর্মী (হোলটাইমার) নেওয়ার নির্দেশ দিল আলিমুদ্দিন। শনিবার সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠকে রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু এই নির্দেশ দিয়েছেন। কেবল পুরুষ নয়, মহিলা সর্বক্ষণের কর্মীর উপরেও জোর দিচ্ছে দল।
একই সঙ্গে ‘বৃহত্তর’ বাম আন্দোলনের সম্ভাবনাও খতিয়ে দেখছে সিপিএম। আলিমুদ্দিন সূত্রের খবর, শুক্রবার ওই বিষয়ে কথা বলতে সিপিআই (এমএল-লিবারেশন) দফতরে গিয়েছিলেন বিমানবাবু। সেখানে লিবারেশনের সাধারণ সম্পাদক দীপঙ্কর ভট্টাচার্যের সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে।
তবে আনুষ্ঠানিক ভাবে কোনও পক্ষই ওই বৈঠকের কথা স্বীকার করছে না। সিপিএম সূত্রের খবর, লিবারেশন ওই বিষয়ে ‘ভাবনাচিন্তা’ করলেও চূড়ান্ত ইতিবাচক সিদ্ধান্ত সিপিএমের রাজ্য সম্পাদককে জানায়নি। তা জানালেও বামফ্রন্টের শরিকদের সঙ্গে সিপিএমকে ওই বিষয়ে আলোচনা করতে হবে।
প্রশাসনিক ক্ষমতা হারানোর পর সিপিএম নেতৃত্ব মনে করছেন, রাজনৈতিক কাজে দক্ষ, শিক্ষিত সর্বক্ষণের কর্মীরাই ভরসা। |
ষাটের দশকে এই প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, বিমান বসু, অনিল বিশ্বাস, সুভাষ চক্রবর্তীরা নেতৃত্বে উঠে এসেছিলেন। সত্তরের দশকে যেমন এসেছিলেন নিরুপম সেন, সূর্যকান্ত মিশ্র, মহম্মদ সেলিম, হান্নান মোল্লা, গৌতম দেব প্রমুখ। বিরোধী ভূমিকায় ফিরে গিয়ে অতীতের পদ্ধতি আবার অনুসরণ করতে চাইছে সিপিএম।
এসএফআইয়ের রাজ্য নেতা সায়নদীপ মিত্র হোলটাইমার হওয়ায় সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর একই সঙ্গে তাঁকে উত্তর ২৪ পরগনা জেলা ও রাজ্য কমিটির সদস্য করেছেন বিমানবাবুরা। এ বার অন্য জেলাতেও সেভাবেই তরুণ প্রজন্মকে তুলে আনার উপরে জোর দেওয়া হচ্ছে। দলের তরফে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক ভাবে দক্ষ, মার্ক্সবাদ-লেনিনবাদ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান আছে, তরুণ প্রজন্মের এমন কর্মীরা ‘হোলটাইমার’ হতে চাইলে তাঁদের আবেদন বিবেচনা করতে হবে।
দলের রাজ্য বা জেলা কমিটিতে দক্ষ সর্বক্ষণের কর্মী থাকলেও নিচুতলায় দক্ষ কর্মীর ঘাটতি থেকে যাচ্ছে। এ দিন দলের বৈঠকে সে কথা কবুল করেন বিমানবাবু। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, ‘পার্টির মধ্যবর্তী স্তরের কমিটিগুলির সক্রিয়তা বৃদ্ধির উপরে জোর দিতে হবে। শাখা গুলিকে আরও সক্রিয় করা, শাখা সম্পাদকদের কাজের ধারার উন্নতি ঘটিয়ে জনগণের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে’। দলীয় নেতৃত্ব বুঝতে পারছেন, নিচুতলার কর্মীদের সঙ্গে এলাকার মানুষের ‘যোগাযোগের’ অভাব ঘটছে। ফলে স্থানীয় স্তরে গঠনমূলক বিরোধীর ভূমিকা পালনে সিপিএম ব্যর্থ হচ্ছে। দলীয় কর্মীদের রাজনৈতিক ভাবে শিক্ষিত করতে জুন-জুলাই মাস ধরে পার্টি ক্লাসও নেওয়া হবে।
রাজ্য কমিটির বৈঠক আজ, রবিবার শেষ হবে। নতুন সম্পাদকমণ্ডলী নিয়ে শনিবার রাতে বুদ্ধ-বিমান-নিরুপম-সূর্যরা একপ্রস্ত আলোচনা করেন। দলে উপেক্ষিত ‘চাষির ব্যাটা’ রেজ্জাক মোল্লার এ বারও সম্পাদকমণ্ডলীতে স্থান পাওয়া নিয়ে সন্দেহ আছে। রেজ্জাক বৈঠকে আসেননি। গ্রামের বাড়িতে ছিলেন। যোগাযোগ করা হলে বলেন, “শরীর ভাল নয়। সুগার বেড়েছে। তাই যেতে পারিনি।” আলিমুদ্দিনের কারও সঙ্গে সন্ধ্যা পর্যন্ত রেজ্জাকের যোগাযোগ হয়নি। দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা সম্পাদক সুজন চক্রবর্তী বলেন, “কালই রেজ্জাকদা বলেছিলেন, তাঁর শরীর ভাল নয়।” মুসলিম সম্প্রদায় থেকে নতুন কাউকে সম্পাদকমণ্ডলীতে নেওয়া হতে পারে। সে ক্ষেত্রে মইনুল হাসানের সম্ভাবনা বেশি। এ ছাড়া, উত্তরবঙ্গ থেকে প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য, দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলা সম্পাদক সুজনবাবু বাঁকুড়ার জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্রও সম্পাদকমণ্ডলীতে স্থান পেতে পারেন। বৈঠকে ‘তৃণমূলের সন্ত্রাস’ ছাড়াও কৃষকদের সঙ্কট, গণতন্ত্রের উপর আক্রমণ, শিক্ষাক্ষেত্রে নৈরাজ্যের মতো বিষয় এসেছে। মানুষকে সমবেত করে এ সবের মোকাবিলা করতে হবে বলে বিমানবাবু জানিয়েছেন। |