কাজলরেখা স্বপ্ন দেখেন, উঠোনে ঘুরছে আরিফুল
ব্বাজান নয়, ছেলেটা তার বাবাকে বলত ‘আবু’। পাঠশালাকে বলত ‘ইকুল’। গ্রামের মুদিখানার সস্তা লজেন্সকে ‘লঞ্জু’।
এখনও, তেমনই আধো-অস্পষ্ট কথা বলে, আরিফুল? এগারো মাস বাংলাদেশের জেলখানায় ‘পচে’ তার সেই শৈশবটা কি মরে গিয়েছে? কাজলরেখা বিবির অনেক প্রশ্ন। হাতের তালুতে চোখ ডলে বলেন, “কে জানে, কেমন আছে ছেলেটা? ফিরে এলে আমায় চিনতে পারবে তো!”
আরিফুল
বহরমপুরের লাগোয়া তারাকপুর গ্রামের বাড়ি থেকে দাদু হাচিমুদ্দিন শেখ আর ঠাকুমা মাফরোজা খাতুনের সঙ্গে ‘গত বৈশাখে’ পিসির বাড়ির উদ্দেশে বেরিয়েছিল চার বছরের আরিফুল। তার মা, কাজলরেখা বলেন, “দাদু-ঠাকুমার বড় নেওটা ছিল কি না, ওঁদের ছেড়ে এক দণ্ড থাকতে চাইত না। প্রথমটায় রাজি হইনি। কিন্তু এমন কান্না জুড়ল...।” পিসির বাড়ি বাংলাদেশের কুষ্ঠিয়ার প্রত্যন্ত গ্রামে। তবে সেখানে আর পৌঁছতে পারেনি চার বছরের আরিফুল। পিয়ারপুর সীমান্তে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের সময়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় তার দাদু-ঠাকুমার সঙ্গে আটক করা হয় তাকেও। গত এক বছর ধরে তার ঠিকানা বাংলাদেশের কুষ্ঠিয়া কারাগার।
বাংলাদেশ হাইকমিশনের এক মুখপাত্র জানান, ২০১১ সালের ১৫ এপ্রিল, পিয়ারপুর সীমান্ত পেরিয়ে সে দেশে ‘অনুপ্রবেশের’ সময়ে ওই বৃদ্ধ দম্পতি কিংবা ছোট ছেলেটির ‘বৈধ নথিপত্র’ ছিল না। স্থানীয় দৌলতপুর থানা তাদের আটক করে পাঠিয়ে দেয় আদালতে। বিচারক তাঁদের ৫০০ টাকা করে জরিমানা করেন। অনাদায়ে দু’মাসের জেল। জরিমানার টাকা দিতে পারেননি হাচিমুদ্দিন। ফলে দু’মাসের জেল-হাজত দিয়ে তিন জনকেই পাঠিয়ে দেওয়া হয় কুষ্ঠিয়া কারাগারে। সেখানে ঠাকুমার সঙ্গে মহিলা ‘সেল’-এই দিন গুজরান তার। কিন্তু সাজার দু’মাস তো কেটে গিয়েছে কবেই?
ছেলে আরিফুলের ফেরার পথ চেয়ে বসে আছেন কাজলরেখা বিবি। গৌতম প্রামাণিকের তোলা ছবি।
এর উত্তর মিলেছে, ‘বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস ট্রাস্ট’ নামে সে দেশের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কাছে। বাংলাদেশ সরকারের সমাজকল্যাণ দফতরের অনুমোদিত ওই সংগঠন বিভিন্ন সংশোধনাগারের আবাসিকদের উপরে সমীক্ষা চালানোর সময়ে খোঁজ পায় ওই পরিবারটির। সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বাংলাদেশের বিভিন্ন কারাগারে এমনই অজস্র অনুপ্রবেশকারী রয়ে গিয়েছেন। সাজার মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও সরকারি লাল ফিতের ফাঁসে যাঁদের স্বদেশে ‘প্রত্যাবর্তন’ কবে হবে, কেউ জানেন না। ওই সংগঠনের মুখ্য আধিকারিক সারা হোসেন বলেন, “কুষ্ঠিয়া জেলে আরিফুলকে দেখে মনে হয়েছিল, এমন ফুটফুটে একটা ছেলে কোন অপরাধে জেলে? খোঁজ নিয়ে জানা গেল, সাজার মেয়াদ শেষ হলেও সরকারি নিয়মের ফাঁসে আটকে রয়েছে তারা।” বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গেই তাঁরা ঢাকায় ভারতীয় দূতাবাসে জানান।
আরিফুলের হাজতবাসের খবর জানতে পেরে এগিয়ে আসে দিল্লির একটি মানবাধিকার সংগঠনও। তাদের তৎপরতায় নড়েচড়ে বসে বাংলাদেশ সররকার। শুরু হয় দু’দেশের বিদেশ মন্ত্রকের তৎপরতা। ঠিকানা জোগাড় করে খবর পাঠানো হয় কাজলরেখা বিবিকে। তিনি বলেন, “ছেলেটা যে বেঁচে রয়েছে জানতে পেরে প্রায় পাগল হয়ে গিয়েছিলাম! তার পরে জেলা প্রশাসন থেকে পঞ্চায়েত, নেতা, আইনজীবীকাকে ধরিনি! কোনও সুরাহা হয়নি।”
বাংলাদেশ দূতাবাস অবশ্য জানাচ্ছে, গত ১৫ এপ্রিল তিন জনকেই মুক্তি দিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। তাদের আশ্বাস, আজ, রবিবার নদিয়ার গেদে সীমান্তে বিএসএফের হাতে আরিফুলদের তুলে দেবে সে দেশের ‘বর্ডার গার্ডস’।
যা শুনে কাজলরেখা বলছেন, “এমন তো কত বারই শুনলাম, ছেলে ফিরবে। ফিরল কই? রোজ রাতে স্বপ্ন দেখি, উঠোনে ছুটে বেড়াচ্ছে আরিফুল!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.