|
|
|
|
ঝাঁটা নেই, সাফাই বন্ধ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে |
অর্ঘ্য ঘোষ • নানুর |
ঝাড়ুদার আছে। ঝাঁটা নেই। যার ফলে টানা ২৪ দিন হাসপাতালের বিভিন্ন জায়গায় জমে রয়েছে জঞ্জাল, আবর্জনা। এমনই চিত্র দেখা গেল নানুর ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। ঝাঁট না পড়ায় গোটা স্বাস্থ্যকেন্দ্র কার্যত ‘নরককুণ্ডে’ পরিণত হয়েছে। আবর্জনা ও দুর্গন্ধে নাভিশ্বাস হয়ে উঠেছে রোগী এবং তাঁদের আত্মীয়স্বজনদের। রোগ সারাতে এসে নতুন রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে তাঁদের মধ্যে। কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেও সমস্যার কোনও সমাধান হয়নি বলে অভিযোগ।
ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের উপর শুধু নানুরই নয়, লাগোয়া বর্ধমান জেলারও বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষজন নির্ভরশীল। অন্তঃবিভাগে দৈনিক প্রায় ২০ জন রোগী ভর্তি হন। বহির্বিভাগে ৩৫০-৪০০ জন চিকিৎসা করাতে আসেন। এখানে অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীর পাশাপাশি সাফাইয়ের জন্য ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিযুক্ত রয়েছে ৩ জন অস্থায়ী ঝাড়ুদার। কিন্তু ঝাঁটার অভাবে টানা ২৪ দিন ধরে তাঁদের কার্যত কোনও কাজই নেই। ঝাড়ুদার কবিতা হাজরা, রক্ষাকর হাজরা, সন্যাসী হাজরা-রা জানালেন, “ঝাঁটা না থাকায় আমরা প্রায় একমাস কোনও সাফাই করতে পারছি না। কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও ঝাঁটার কোনও ব্যবস্থা হয়নি।” |
|
ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে আবর্জনা। ছবি: সোমনাথ মুস্তাফি। |
সোমবার সকালে সেখানে গিয়ে দেখা গেল, মহিলা ওয়ার্ডের সর্বত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অজস্র পলিথিনের প্যাকেট, ওষুধের বাক্স, কলার খোসা, ডিমের খোল, মাছের কাঁটা। একই অবস্থা পুরুষ ওয়ার্ডেও। হাসপাতাল না বাজার দেখে বোঝার উপায় নেই। পুরুষ শৌচাগারের অবস্থাও তথৈবচ। পড়ে আছে পরিত্যক্ত স্যালাইনের বোতল। মেঝে-সহ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চত্বরে পুরু ধুলোর আস্তরণ, আবর্জনা, ব্যবহৃত তুলোর বান্ডিল। অন্তঃবিভাগে ভর্তি থাকা উচকরণের চাঁদ দেবাংশী নূরপুরের আবু তাহেরদের অভিযোগ, “নোংরা আর দুর্গন্ধে স্বাস্থ্যকেন্দ্র নরককুণ্ড হয়ে উঠেছে। বেশিক্ষণ থাকাই যাচ্ছে না।” বহির্বিভাগে চিকিৎসা করাতে আসা উকরুন্দির রিঙ্কু পাণ্ডা, সাওতা গ্রামের নারায়ণ কুণ্ডুদেরও একই অভিযোগ।
কেন ঝাঁটা নেই? স্বাস্থ্যকেন্দ্র সূত্রেই জানা গিয়েছে, ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের জন্য মাসে তিনটি ঝাঁটা লাগে। যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ৩০ টাকা। কিন্তু ঝাঁটা কেনার দায়িত্ব যার উপর রয়েছে, সেই ক্লার্ক মাস তিনেক আগে বদলি হয়ে গিয়েছেন। তাঁর জায়গায় কেউ যোগ দেননি। ফলে ঝাঁটা কেনার ব্যবস্থা হয়নি।
কিন্তু এই পরিস্থিতিতে মাত্র ৩০ টাকা দামের ঝাঁটা কেনার জন্য বিকল্প কোনও ব্যবস্থা করা হয়নি কেনও? উত্তরে ওই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের এক চিকিৎসক বলেন, “আমরা প্রথম দিকে কিছু ঝাঁটা কিনে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু স্থায়ী সমাধানের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেও কোনও লাভ হয়নি। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত বিএমওএইচ তথা সহকারি জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জয়ন্ত সুকুল বলেন, “বিষয়টি রবিবারই জেনেছি। জানার পরই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি। সোমবার থেকেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যাবে।” সংশ্লিষ্ট ক্লার্কের নিয়োগ নিয়ে জয়ন্তবাবু বলেন, “ক্লার্ক নিয়োগ হয়ে গিয়েছে। কিছু প্রশাসনিক জটিলতার জন্য তিনি এখনও যোগ দেননি। শীঘ্রই যোগ দেবেন।”
ব্লক স্বাস্থ্য কমিটির সভাপতি তথা স্থানীয় বিধায়ক, তৃণমূলের গদাধর হাজরা বলেন, “বিষয়টি জানতে পেরেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছি।” |
|
|
|
|
|