|
|
|
|
‘সেরা’ পঞ্চায়েতেই থমকে উন্নয়ন |
সিপিএম প্রধানের কাছে ‘তোলা’ দাবি কংগ্রেসের |
সুজাউদ্দিন • রানিনগর |
সিপিএম প্রধানের কাছে ‘তোলা’ দাবি করার জেরে শেষ পর্যন্ত থমকে গিয়েছে এমন একটি পঞ্চায়েতের কাজকর্ম খাতায় কলমে যারা মুর্শিদাবাদ জেলার অন্যতম ‘সেরা’ পঞ্চায়েত হিসাবে স্বীকৃত।
রানিনগর-১ ব্লকের লোচনপুর পঞ্চায়েতে ১০০ দিনের প্রকল্পের আওতায় কাজ বন্ধ। বন্ধ বার্ধক্য, বিধবা ভাতা বিলির কাজও। পঞ্চায়েত প্রধান আলতাফ হোসেনের অভিযোগ, “কংগ্রেসের দুষ্কৃতীরা পঞ্চায়েতে গেলেই হামলা করছে। তারা মোটা টাকার দাবি করছে। টাকা না দিলে প্রাণে মেরে ফেলারও হুমকি দিয়ে চলেছে অনবরত। কিছুটা প্রাণ ভয়েই এখন আর পঞ্চায়েত অফিসে যেতে সাহস পাচ্ছি না।”
কংগ্রেস অবশ্য এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। তাদের পাল্টা অভিযোগ, ওই প্রধান দুর্নীতিগ্রস্ত। তাদের দাবি, মারধরের হুমকি নিছকই ‘কল্পনাপ্রসূত’। প্রধানের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তিনি ভয়ে পঞ্চায়েতে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন। এই চাপানউতোরে লোচনপুরে উন্নয়ন কার্যত স্তব্ধ। স্থানীয় বিডিও আবনের ভুটিয়া বলেন, “প্রধানকে কিছু লোক পঞ্চায়েত কার্যালয়ে যেতে বাধা দিচ্ছে বলে শুনেছি। জেলাশাসকও এ ব্যাপারটা জানেন। সম্প্রতি তাই উপ-প্রধানকে দায়িত্ব দিয়েই ওই পঞ্চায়েতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কাজের তদারকি করছে তারাই।” গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে লোচনপুরে জয়ী হয় সিপিএম। প্রধান হন আলতাফ হোসেন। উন্নয়নের দৌড়ে কেবল ডোমকল মহকুমা নয়, মুর্শিদাবাদ জেলাতেও নজর কাড়ে ওই পঞ্চায়েত। ২০০৯ সালে ১০০ দিনের কাজে জেলায় প্রথম স্থান পায় ওই পঞ্চায়েত। স্বমূল্যায়নের ক্ষেত্রেও পর পর তিন বার লোচনপুরই ছিল সেরা। আলতাফ বলেন, “জেলার প্রত্যন্ত ও সীমান্তের পিছিয়ে পড়া এলাকার লোচনপুর পঞ্চায়েত মাথা উঁচু করেছিল জেলায়। সেই পঞ্চায়েতেই উন্নয়ন থমকে গেল। বিধানসভা নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর দিন থেকেই ওই কাণ্ড শুরু করেছে কংগ্রেস। আমায় মিথ্যা খুনের মামলায় জড়িয়ে দিয়ে উন্নয়নে বাধা দেওয়ার পাশাপাশি খুনের হুমকিও দিয়ে চলেছে স্থানীয় কংগ্রেস আশ্রিত দুষ্কৃতীরা। ওই মামলায় আমি জামিনে মুক্তি পেলেও পঞ্চায়েতে ঢুকতে পারিনি।”
এ ব্যাপারে পুলিশে অভিযোগ করেননি কেন? আলতাফ বলেন, “বারবার পুলিশকে জানিয়েও ফল তো পাইনি কিছু।” তবে ডোমকলের এসডিপিও দেবর্ষি দত্ত বলেন, “প্রধানের অভিযোগ পেয়েই জেলার বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালিয়ে ইতিমধ্যেই এক জনকে ধরা হয়েছে।”
জেলা কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী অবশ্য স্থানীয় কংগ্রেসের ওই ‘তোলাবাজি’ ভাল চোখে দেখছেন না। তিনি বলেন, “সকলকেই এককাট্টা হয়ে উন্নয়নের কাজে এগিয়ে আসতে হবে। তবে ওই পঞ্চায়েতের প্রকৃত অবস্থা আমার জানা নেই। গোটা বিষয়টি আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।”
রাজনৈতিক চাপানউতোরে থমকে গিয়েছে বার্ধক্য ভাতাও। গ্রামের বেশ কয়েক জন বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে। গত ৮ মাসে বার্ধক্য ভাতা পাননি জেকের শেখ। তাঁর কথায়, “ওই টাকায় প্রতি মাসে ওষুধ কিনতাম। এখন চড়া সুদে টাকা ধার করে ওষুধ কিনতে হচ্ছে।” একই অবস্থা আকেলমা বিবির। তিনি বলেন, “মাসে ৪০০ টাকা করে বার্ধক্য ভাতা পাই। ওই ভাতার সঙ্গে ছাগল-মুরগি পুষে কোনওরকমে সংসার চলে। ভাতা বন্ধ। সংসার চালানোই দায় হয়েছে।” সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য নারায়ণ দাস বলেন, “রাজ্যে পরিচিতি পেয়েছিল লোচনপুর। পালা বদলের পর সেখানেই কংগ্রেসিদের গুণ্ডামিতে উন্নয়ন থমকে গিয়েছে।” রানিনগর-১ ব্লক কংগ্রেস সভাপতি নারায়ণ দাস অবশ্য বলছেন, “প্রধানের বিরুদ্ধে অজস্র দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। নিজের দুর্নীতি ঢাকতেই তিনি কংগ্রেসকে দোষারোপ করছেন।” |
|
|
|
|
|