দিল্লি-জয়ের উৎসব হবে কী! আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের পুণে ওয়ারিয়র্সকে নেমে পড়তে হচ্ছে ফিরতি চ্যালেঞ্জে! এ বার সহবাগ বনাম সৌরভ লড়াই পুণের মাঠে। এর মধ্যে আবার দিল্লি থেকে ফ্লাইট যাত্রার ধকল রয়েছে। কেউ কেউ বলে ফেলছেন, লাগেজ নামানোর সময়টা পর্যন্ত পাওয়া যাচ্ছে না। তার আগেই একটা ম্যাচ শেষ করে পরের ম্যাচের জন্য ফ্লাইট ধরতে ছুটছি। হ্যান্ড ব্যাগ থেকে শুধু ব্ল্যাকবেরি চার্জারটা বের করছি আর রাতে পরার শর্টস-টা। বাকি লাগেজ ও রকমই পড়ে থাকছে।
পুণে থেকে ব্রেকিং নিউজ হল, দেশ জুড়ে প্রচুর জল্পনা-কল্পনার মধ্যেও ‘দাদা’ সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত চুল কাটেননি। জেল-টেল লাগাবেন বলেও লক্ষণ নেই। বরং গ্যালারিতে চমকের লক্ষণ আছে। বেঙ্গালুরুতে পুণে ওয়ারিয়র্সের ভিআইপি গ্যালারিতে ছিল সানিয়া মির্জা-শোয়েব মালিক জুটি। এখানে মঙ্গলবার থাকছে ভারতীয় হকি দল। সহারা হকি টিমেরও স্পনসর। অলিম্পিকের জন্য ছোটখাটো শুভেচ্ছা অনুষ্ঠানও দেখা যেতে পারে।
হকি টিম ক্রিকেট টিমকে তাতাক বা না তাতাক। পুণের ঝলসে যাওয়া রোদ্দুরে নতুন তৈরি সুব্রত রায় সহারা স্টেডিয়ামে দাঁড়িয়ে পুণের যোদ্ধাদের দেখে সশ্রদ্ধ হওয়া ছাড়া উপায় নেই। বেঙ্গালুরুর নিলামে একটা টিম ঢেলে নিজেদের সাজালো। দিল্লি ডেয়ারডেভিলস। তাদের যা ব্যাটিং লাইন আপ, যে কোনও বোলার আতঙ্কিত হয়ে পড়তে পারে। বীরেন্দ্র সহবাগ। কেভিন পিটারসেন। মাহেলা জয়বর্ধনে। রস টেলর। কে নেই? সেখানে পুণে নিলামেই অংশ নিল না। নামীদামী প্লেয়ারদের তোলার সুযোগই পেল না। অথচ দিল্লিতে গিয়ে দিল্লিকে হারিয়ে এল!
এ দিন প্র্যাক্টিসের ফাঁকে দেখলাম, দেশি এক ক্রিকেটার স্মিথকে হিন্দি শেখানোর চেষ্টা করছেন। স্মিথ তক্ষুনি প্রচণ্ড গরমে ব্যাটিং করে এসেছেন। ঘেমেনেয়ে একেবারে নাজেহাল অবস্থা। কিন্তু হিন্দি শেখার বেলাতেও একই রকম ছটফটানি। প্রবল আগ্রহ নিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছেন ‘ক্যায়সা হো’ ঠিকঠাক উচ্চারণ করে বলার জন্য।
আলফানসো থমাস আর এক জন। দেশের হয়ে তিনি প্রায় খেলেনই না। বিভিন্ন জায়গায় টি-টোয়েন্টি বা ওয়ান ডে খেলে বেড়ান। এটাই তাঁর রোজগার। পুণের হয়ে দুর্দান্ত বোলিংয়ের পর সেই থমাসের কাছে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট বোর্ডের ফোন এসে গিয়েছে। সেপ্টেম্বরে শ্রীলঙ্কায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। দক্ষিণ আফ্রিকা তাঁকে স্কোয়াডে রাখতে চায়। থমাস এখনও ‘হ্যাঁ’ বলেননি। ইংল্যান্ডের নাগরিকত্বের জন্য তিনি আবেদন করে বসে আছেন। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলার জন্য সেটা মুলতবি রেখে দেশে ফিরবেন কি না সিদ্ধান্ত নিয়ে উঠতে পারছেন না। ও দিকে দিন্দা সকালে জানালেন, অন্তত আরও দু’ম্যাচ তিনি মাঠের বাইরে।
ক্যাপ্টেন সহবাগকে পুণেতে দেখে মনে হবে, ব্যাটসম্যান সহবাগের সঙ্গে কোনও মিল নেই। ব্যাটসম্যান সহবাগ সব সময়ই থাকেন ওড়ানোর ভঙ্গিতে। কিন্তু দিল্লিতে হেরে আসা ক্যাপ্টেন সহবাগ কিছুটা চাপের মধ্যে। কথা উঠছে তাঁর বাঁ হাতি স্পিনার টিমে রেখেও এক ওভার বোলিং না দেওয়া নিয়ে। সহবাগের যুক্তি হচ্ছে, রাইডার আর সৌরভ দুই বাঁ হাতি ব্যাট করছিলেন। বাঁ হাতি স্পিনার আনব কী করে? তবু ইতিউতি অনুযোগ শোনা যাচ্ছে, পুণে এর চেয়ে অনেক কম যোগ্যতার প্লেয়ার নিয়ে খেলছে। কিন্তু তফাত হচ্ছে, পুণে অধিনায়ক তাঁদের ওপর আস্থা দেখাচ্ছেন।
পুণের পিচ কোটলার মতো ব্যাটিং-স্বর্গ নয়। মুরলী কার্তিক বনাম পিটারসেন এখানে বেশি সংঘাতপূর্ণ হওয়ার কথা। বিকেলের দিকে পুণে ওয়ারিয়র্স মাঠ ছাড়ার সময় এক জনকে দেখলাম পিচের কাছে ঘুরঘুর করছেন। দূর থেকে দেখে তো পুরনো সেই ক্যাপ্টেন গাঙ্গুলিই মনে হল! |