|
|
|
|
প্রকল্পের বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয় ডেবরায় |
মুখ্যমন্ত্রীর হাতে উড়ালপুল, হাসপাতালের শিলান্যাস আজ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • ডেবরা |
নানা প্রকল্পের শিলান্যাসে আজ, মঙ্গলবার পশ্চিম মেদিনীপুরে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ডেবরার বালিচকে একটি উড়ালপুল ও ডেবরাতেই একটি ‘সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে’র শিলান্যাস করবেন মুখ্যমন্ত্রী। উদ্বোধন হবে কম্পিউটারচালিত রেলের যাত্রী সংরক্ষণ কেন্দ্রেরও। তবে প্রস্তাবিত প্রকল্প যথাসময়ে রূপায়িত হবে তো? স্বপ্ন দেখার পাশাপাশি সংশয়েও রয়েছেন ডেবরার মানুষ। |
|
শিলান্যাসের একগুচ্ছ ফলক। ডেবরায় রামপ্রসাদ সাউয়ের তোলা ছবি। |
জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ডেবরা। পাশ দিয়েই চলে গিয়েছে ৬ নম্বর জাতীয় সড়ক। রয়েছে রেল যোগাযোগ। বাড়ছে ব্যবসা। ডেবরা থেকে সবং, পিংলা প্রভৃতি রুটে বাস চলাচল করে। বালিচক লেবেল ক্রসিং দিয়ে ছোট-বড় মিলিয়ে দিনে প্রায় দেড় লক্ষ গাড়ি চলাচল করে। কিন্তু উড়ালপুল না থাকায় প্রায়ই যানজট হয়। সার দিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে বাস, লরি। ভোগান্তিতে পড়েন পথচলতি মানুষ। উড়ালপুল নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোরও শুরু হয়েছে। সিপিএমের বক্তব্য, তাদের আমলেই বালিচকে উড়ালপুল তৈরির তোড়জোড় শুরু হয়েছিল। ডেবরার প্রাক্তন বিধায়ক সিপিএমের জাহাঙ্গির করিম বলেন, “এক সময় সিপিআই সাংসদ গীতা মুখোপাধ্যায় তাঁর সাংসদ তহবিল থেকে উড়ালপুলের জন্য ২০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছিলেন। কিন্তু রেল দফতর তৎপর না হওয়ায় পরে আর কাজ এগোয়নি।” ডেবরার বর্তমান বিধায়ক তৃণমূলের রাধাকান্ত মাইতির অবশ্য মত, “বাম সরকারের উদাসীনতাতেই এখানে উড়ালপুল তৈরি হয়নি। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে এখানে উড়ালপুল তৈরির কাজ শুরু হতে চলেছে।” তবে উড়ালপুল চালু হলে উপকৃত হবেন এলাকার মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দা উদয় হাজরা’র কথায়, “প্রায়ই এখানে যানজট হয়। উড়ালপুল ভোগান্তি কমবে।”এ ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারকে সব রকম সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে বালিচক ব্যবসায়ী সমিতি। সমিতির সম্পাদক কাজল গোস্বামী বলেন, “এখানে উড়ালপুল তৈরি করা জরুরি। সরকার উদ্যোগী হয়েছে। আমরাও সহযোগিতা করব।” লেভেল ক্রসিংয়ের অদূরে ছোট-বড় দোকান রয়েছে। উড়ালপুল হলে অনেক দোকানই সরাতে হবে। সে ক্ষেত্রে বাধা আসতে পারে। তা ছাড়া, বিকল্প রাস্তা তৈরি না করে এখানে উড়ালপুল তৈরির কাজ শুরু করা সম্ভব নয়। এই সব সমস্যা কী ভাবে কাটিয়ে উঠে দ্রুত কাজ শুরু হয়, সে দিকেই তাকিয়ে বালিচকের মানুষ।
সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল নিয়েও ডেবরাবাসী স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। শুধু ডেবরা নয়, আশপাশের সবং, পিংলা, খড়্গপুর গ্রামীণ, কেশপুর থেকেও বহু রোগী আসেন ডেবরা গ্রামীণ হাসপাতালে। শয্যা রয়েছে ৪০টি। অথচ রোগী ভর্তি থাকেন গড়ে ৬০ থেকে ৬৫ জন। অনেকেরই ঠাঁই হয় মাটিতে। ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে গ্রামীন হাসপাতালে উন্নীত হওয়ার পর এই হাসপাতালকে ‘ফাস্ট রেফারেল ইউনিট’ বলেও চিহ্নিত করে স্বাস্থ্য দফতর। জানানো হয়, সবং, পিংলা থেকে কোনও রোগীকে ‘রেফার’ করতে হলে শুরুতে ডেবরা গ্রামীণ হাসপাতালেই করতে হবে। কিন্তু গ্রামীণ হাসপাতালের পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়নি। ডাক্তার রয়েছেন ৭ জন। নার্স ১৮ জন। চতুর্থ শ্রেণীর কর্মী ১১ জন। অথচ, থাকার কথা ১৬ জন। প্রধান করণিকের একটি পদও শূন্য। ডাক্তার, নার্সরা ছুটিতে থাকলে সমস্যা জটিল হয়। ‘সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল’ হলে যাবতীয় সমস্যা মিটবে বলেই আশা স্থানীয় মানুষের। ডেবরা গ্রামীণ হাসপাতালের অদূরে একটি জায়গাও চিহ্নিত করা হয়েছে। পাঁচ তলা ভবনে থাকার কথা সদ্যোজাত শিশুদের জন্য বিশেষ ইউনিট, মেডিসিন, সার্জারি-সহ বিভিন্ন বিভাগের পৃথক ইউনিট।কিন্তু হাসপাতাল প্রস্তাবিত সময়ের মধ্যে গড়ে উঠবে তো? |
|
এখানেই হবে নতুন সেতু। লালগড়ের সভায় আমকলার এই সেতুরই
শিলান্যাস করবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবি: দেবরাজ ঘোষ। |
স্থানীয় মানুষের বক্তব্য, “আগেও শুনেছিলাম গ্রামীণ হাসপাতালের পরিকাঠামো ঢেলে সাজা হবে। কোথায় কী! ব্লাড স্টোরেজ ইউনিটও নেই। এক বোতল রক্ত পাওয়া যায় না। খড়্গপুর বা মেদিনীপুরে যেতে হয়।” স্বাস্থ্য দফতরের অবশ্য আশ্বাস, সময়ের মধ্যেই সব কাজ শেষ করার চেষ্টা চলছে। ১৯৫৭ সালে ডেবরায় ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র গড়ে ওঠে। পরে সেটি গ্রামীণ হাসপাতালে উন্নীত হয়। ২০০২ সালে হাসপাতাল চত্বরে নতুন একটি ভবন তৈরি করা হয়। এখন এখানে রয়েছে মেল ওয়ার্ড, ফিমেল ওয়ার্ড, অপারেশন থিয়েটার। সমস্যার মধ্যে থেকেও ভাল কাজ করার জন্য একাধিকবার পুরস্কৃত হয়েছে এই হাসপাতাল। ২০০৮-’০৯ সালে জেলা পরিষদ থেকে এই হাসপাতালকে জেলার মধ্যে ‘শ্রেষ্ঠ’ চিকিৎসালয়ের পুরস্কার দেওয়া হয়। প্রসবের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য সাফল্যের জন্য সম্প্রতি এই হাসপাতাকে পুরস্কৃত করেছে রাজ্য সরকার। ডেবরার বিএমওএইচ রজত পাল বলেন, “কিছু সমস্যা রয়েছে। তার মধ্যেই আমরা যথাসাধ্য কাজ করার চেষ্টা করছি।” |
|
|
|
|
|