জলের চাপে ধসে গিয়েছে তিস্তা মহানন্দা লিঙ্ক ক্যানাল। সোমবার সকাল ৬টা নাগাদ রাজগঞ্জের মান্তাদরি গ্রামপঞ্চায়েতের পানাসগুড়ি এলাকায় ক্যানালের প্রায় ২০ মিটার ধসে পড়ে। ক্যানালের একপাশের বাঁধ ভেঙে জল পাশের শিকারপুর জঙ্গলে ঢুকতে শুরু করে। গোটা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, দ্রুত গতিতে জল ঢুকে যাওয়ায় জঙ্গলের বেশ কিছু গাছের ক্ষতি হয়েছে। ঘটনার পরেই গজলডোবার মূল ক্যানাল থেকে জল ছাড়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। এদিন দুপুরের পর ভাঙা ক্যানাল থেকে জল বের হওয়া বন্ধ হয় বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। ভাঙা ক্যানাল থেকে বের হতে থাকা জলের তোড়ে মান্তাদরির ফোকোটিয়া মোড় থেকে পানাসগুড়ির রাস্তাও ভেঙে গিয়েছে বলে জানা গিয়েছে। ক্যানাল ভাঙার খবর পেয়ে রাজ্যের সেচ মন্ত্রী মানস ভুঁইয়া বিষয়টি হস্তক্ষেপ করেছেন। গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তিস্তা সেচ কর্তৃপক্ষের এক শীর্ষ কর্তার নেতৃত্বে এক প্রতিনিধি দলকে মন্ত্রী উত্তরবঙ্গে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। বছর তিনেক আগে ফুলবাড়ি এলাকায় তিস্তা ক্যানালেরই একটি বড় অংশ ভেঙে যায়। সে সময়ে নিম্নমানের সিমেন্ট দিয়ে ক্যানাল তৈরির অভিযোগ উঠেছিল। তার পরেও বেলাকোবা থেকে শুরু করে মালবাজারের বিভিন্ন এলাকায় ক্যানালের বিভিন্ন অংশ জলের চাপে ভেঙে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ক্যানালের পাশের রাস্তা দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল করার কারণেই ক্যানাল ভেঙেছে বলে তিস্তা সেচ দফতর থেকে দাবি করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে মেরামতি ও দেখভালের অভাবেই ক্যানালের বড় অংশ ধসে গিয়েছে বলে বিভিন্ন মহল থেকে অভিযোগ করা হয়েছে। তিস্তা সেচ দফতরের নির্বাহী বাস্তুকার শুভঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, “এলাকা দিয়ে সারা দিন ভারী যানবাহন চলাচল করে। এর ফলেও ওই ঘটনা ঘটতে পারে। ঘটনার পরেই ব্যারেজ থেকে জল ছাড়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তার ফলে দ্রুত ভাঙা ক্যানেলের জল শেষ হয়ে যায়। শীঘ্রই ক্যানেল মেরামতির কাজ শুরু হবে। ক্যানাল ভেঙে কোনও ক্ষয়ক্ষতির খবর নেই।” ঘটনায় এলাকায় বোরো চাষের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জলের স্রোতে শিলিগুড়ি-গজলডোবা ক্যানাল রাস্তা প্রায় ৪০ ফুটের বেশি ভেঙে গিয়েছে। জলের স্রোতে পানাসগুড়ি কাছে শিমুলডাঙ্গা জঙ্গলের বেশ কিছু গাছ ভেঙে পড়ে। বাসিন্দারা জানান, ক্যানালের নিচের একটি নালা মাধ্যমে জঙ্গলের একটি ঝোড়ায় জল যায়। সেটির সংস্কার প্রয়োজন। সেচ দফতরকে বহুদিন সেটি মেরামত করতে বলা হয়। ওই দিন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান রাজগঞ্জের বিধায়ক খগেশ্বর রায়। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান প্রভাবতী মণ্ডল বলেন, “এলাকার গ্রামগুলিতে মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। প্রধান ক্যানাল রাস্তার ভাঙা অংশের আশপাশ থেকে মানুষকে সরিয়ে দেওয়া হয়। দ্রুত ক্যানালের মেরামতির জন্য বলা হবে।” জলপাইগুড়ির সদর মহকুমাশসাক সাগর চক্রবর্ত্তী বলেন, “বড় ক্ষয়ক্ষতির খবর নেই। তিস্তা সেচ দফতরের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। পরিস্থিতির ওপর নজর রাখা হচ্ছে।” এলাকার গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান প্রভাবতী মন্ডল বলেন, “এলাকার বাসিন্দারাই ক্যানাল ভাঙার খবর সেচ দফতরকে জানায়। মেরামতি প্রয়োজন। না হলে বোরোয় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে।” |