|
|
|
|
সম্পাদক সমীপেষু... |
লাগামহীন দলতন্ত্র |
মানসিকতার সন্ধানে’ (২২-৩) সম্পাদকীয় প্রবন্ধটিতে আজকের দিনের অধিকাংশ মানুষের উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার প্রকাশ ঘটেছে। ‘গণতান্ত্রিক ভারতে’ শুধু নয়, ‘পশ্চিমি দুনিয়া’তেও প্রতিটি সচেতন ও স্বাধীনচেতা মানুষেরই প্রশ্ন গণতন্ত্র কি সার্থক হতে পেরেছে? রাষ্ট্রপুঞ্জ কি জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত নয় যে, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ সেখানে একটি বৃহত্তর শক্তির দম্ভের কাছে পরাভূত? অ্যারিস্টটল বলেছিলেন, গণতন্ত্র আসলে জনতাতন্ত্র। শ্রীঅরবিন্দের ‘জনগণেশ’ আমরা প্রসঙ্গত স্মরণ করতে পারি। সাহিত্যে, নাটকে এবং বাস্তবে দেখা যায়, ‘গণতন্ত্র’ থাকা সত্ত্বেও মানুষ কার্যত রুদ্ধকণ্ঠ। নোয়াম চমস্কিদের শ্রদ্ধা জানিয়েও বলতে পারি গণতন্ত্র বর্তমানে ধনতান্ত্রিক জীবনধারা রক্ষায় অতি তৎপর। তার জন্য এখনও মানুষের অধিকার তথা স্বাধীনতা রক্ষার লড়াইয়ের বিরুদ্ধে সৈন্য-প্রেরণ ঘটত না। বলপ্রয়োগে হত না। মানসিক সন্ত্রাস সৃষ্টি হত না। এবং বিশ্ব জুড়ে বৃহৎ শক্তিগুলির গোপন সামরিক রক্ষাবলয় গড়ে উঠত না।
আজকের গণতন্ত্রের একটি ভয়ঙ্কর নঞর্থক দিক হল রাষ্ট্রশক্তির বিভিন্ন ক্ষেত্রে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের পেশি আস্ফালন। দলতন্ত্র গণতন্ত্রের এই সর্বনাশটি ঘটিয়েছে। কারণ, গণতন্ত্রের বিকাশ একটি বদ্ধ জায়গায় উপনীত হয়েছে। বাণিজ্যভিত্তিক অর্থশক্তির ক্ষীয়মাণতা মানুষকে অন্য একটি জীবনব্যবস্থার দিশা দেখতে বলছে। সেই জীবনব্যবস্থা গ্রহণ করার পথে বৈভব একটি বড় বাধা। এবং বৈভব-সমৃদ্ধ এলিটদের বড় অংশই কার্যত বস্তুভারহীন বিমূর্ত গণতন্ত্রের স্তাবকে পরিণত হয়ে নতুন দিশা গ্রহণ করতে পারছে না।
গণতন্ত্রের সংকট হল, সংখ্যালঘিষ্ঠদের মধ্যেও যে সত্য নিহিত থাকে, এই ধারণাটি অনেক সময়ই বাতিল হয়ে যায়। সংখ্যাগরিষ্ঠতাই গণতন্ত্রের প্রধান কার্যকর উপাদান হয়ে ওঠে। গণতন্ত্রের মানস-প্রক্রিয়াটি কার্যকর হয়নি বলেই বাহুবলীদের হাতে সাধারণ মানুষ মার খাচ্ছে। তা হলে কোন পন্থা? পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ডা. বিধানচন্দ্র রায় ‘বঙ্গ-বিহার একত্রীকরণ চুক্তি’ প্রত্যাহার করেছিলেন জনগণের প্রতিরোধ-প্রতিবাদকে সম্মান জানিয়ে। প্রয়াত লালবাহাদুর শাস্ত্রী রেলের দুর্ঘটনার দায়িত্ব গ্রহণ করে পদত্যাগ করেছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে। প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী বিশ্বনাথপ্রতাপ সিংহ সিংহাসন ত্যাগ করেছিলেন নীতির ক্ষেত্রে আপস না-করে।
এই দৃষ্টান্তগুলি কি আর পাওয়া যাবে? তা হলেই বুঝব, গণতন্ত্র বদ্ধ জলাশয়ে আটকে পড়েনি। কমিউনিস্টরা গণতন্ত্রের পতাকা ঊর্ধ্বে তুলে ধরতে পারেনি। অন্য দিকে, গণতন্ত্রে বিশ্বাসীরাও পারছে না পার্টিতন্ত্রের সংকীর্ণতাকে উপেক্ষা করতে। |
মুরারি ঘোষ। অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক, বিবেকানন্দ ইনস্টিটিউশন, হাওড়া
|
প্রসঙ্গ: বলাকা |
শ্রদ্ধেয় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘স্বপ্নে দেখা এবং ভয় পেয়ে কেঁপে ওঠা’ লেখাটির প্রসঙ্গ ধরে উৎপল মুখোপাধ্যায় যে-চিঠি (৫-৪) দিয়েছেন, তাতে তিনি ‘বলাকা’ পত্রিকার ‘নবচেতনায় বঙ্গনারী প্রাক্স্বাধীনতা পর্ব’ বিষয়ে বলেছেন যে, ‘ওই সংখ্যার পরিশিষ্টে লেখিকাদের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দেওয়া থাকলে বইটি আরও পরিপূর্ণতা লাভ করত’।
এই সূত্রে জানাতে চাই, বোধহয় এই লেখিকাদের পরিচয় বিষয়টি শ্রীমুখোপাধ্যায়ের দৃষ্টিগোচর হয়নি, কেননা সে-সংখ্যার ৩৫৮ পৃষ্ঠায় কিন্তু বিভিন্ন রচনার লেখিকাদের পরিচিতি মুদ্রিত হয়েছে। অবশ্য, পত্রদাতা সংখ্যাটি
পাঠের জন্য যে শ্রমস্বীকার করেছেন, তার জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানাই। |
ধনঞ্জয় ঘোষাল। সম্পাদক, বলাকা, কলকাতা-৫৭
|
সম্পর্কে দখলদারি
দায় শুধু পুরুষের? |
|
প্রেমপথে। কত বাধা? ‘পথে হল দেরি’ ছবিতে সুচিত্রা সেন-উত্তমকুমার |
শিলাদিত্য সেনের লেখা ‘প্রেম=দখল’ (১-৪) নিবন্ধটি অমোঘ সত্যকে তুলে ধরেছে। সম্পর্কের মধ্যে যেখানে অধিকারবোধ প্রাধান্য পায়, সেখানে ভালবাসা উধাও হয়। সত্যিকারের ভালবাসায় অধিকারবোধ থাকে না। তাই ‘পজেশন’-এর প্রশ্ন আসে না। কিন্তু এই অধিকারবোধ প্রধানত পুরুষদেরই থাকে বললে ভুল হবে। এই অভ্যাস সমান ভাবে থাকে মেয়েদেরও (কোনও কোনও ক্ষেত্রে পুরুষদের থেকে বেশি)।
ঘটনা হল, সন্দেহপ্রবণ হওয়ার ফলে এবং দখলদারির অভ্যাসে মেয়েরা অনেক সময়ই তাদের পুরুষ সঙ্গীদের জীবন দুর্বিষহ করে তোলে অত্যধিক নজরদারি ও সাবধানতার ফলে। বিশেষ করে বৈবাহিক জীবনে এই মেয়েরা স্বামীর দেরি করে বাড়ি ফেরা, ফোনে দীর্ঘক্ষণ কথাবার্তা বা স্বামীর ছেলেবেলার কোনও বান্ধবীর ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করতে বা তির্যক মন্তব্য করতে খুব কমই
পিছপা হন।
শিলাদিত্য সেন ঠিকই বলেছেন, দখলদারির অভ্যাস ‘আসলে কোনও ব্যক্তিগত ব্যাপার নয়, একটি সামাজিক ব্যবস্থার অংশীদার আমরা সবাই’। আমরা যারা স্কুলের গণ্ডি পেরোনোর মুখে বিভিন্ন লেখা পড়ে এবং কিছু মানুষকে দেখে নারী-পুরুষের সম্পর্কটি নিয়ে প্রায়ই ভাবছি, এই নিবন্ধটি তখন আমাদের ভাল লেগেছে। যদিও আমরা মনে করি, দখলদারিতে শুধু পুরুষদের দায়ী করলে আলোচনা একতরফা শোনাবে। সম্পর্ক দাঁড়িয়ে থাকে ভালবাসার উপর। যা প্রধানত বিশ্বাস ও আপসের সমন্বয়। সেখানে দখলদারি অর্থহীন। |
সুনন্দিনী মুখোপাধ্যায় ও অন্যান্যরা। কারমেল স্কুল, স্টিল টাউনশিপ, দুর্গাপুর-৭১৩২০৫
|
জাতীয় বাঙালি! |
নববষের্র ছুটি বাতিল’ (১১-৪) শীর্ষক পত্রে মিলন রায়চৌধুরী কলকাতা প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ নিয়ন্ত্রিত বিদ্যালয়ে অম্বেডকরের জন্মদিন পালন করার লক্ষ্যে নববর্ষের ছুটি বাতিলের সিদ্ধান্তকে সমালোচনা করে লিখেছেন, ‘সব প্রদেশেই নববর্ষ উৎসব প্রাদেশিক ছুটির দিন’। তিনি ভুলে গেছেন, আমরা ‘উদার’ বাঙালিরা যে কখনওই প্রাদেশিক হতে সফল হব না! ভারতীয়ত্ব রক্ষার যাবতীয় দায়দায়িত্ব বহন করার একক গুরুভার যে শুধুমাত্র বাঙালির স্কন্ধে!
ভূ-ভারতের প্রতিটি রাজ্যে সরকারি কাজকর্ম যখন শুধুমাত্র ভূমিজ ভাষায় হয়, তখন পশ্চিমবঙ্গ কিন্তু ভুলেও সরকারি দফতরে ভূমিজ ভাষা বাংলার ব্যবহার আবশ্যিক করেনি। ভারতের অন্য রাজ্যে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় ভাষায় পারদর্শী না-হয়ে রাজ্য সরকারি চাকরি করা সম্ভব নয়। এমনকী মাধ্যমিক স্তর অতিক্রম করাও অসম্ভব। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে বা স্কুলে বাংলা বিষয়কে বাধ্যতামূলক করার প্রাদেশিকতা বাঙালির ‘উদার’ মননের দ্বারা সম্ভব নয়। ভারতের প্রতিটি রাজ্যে যখন বহিরাগতরা ভূমিজ ভাষা সংস্কৃতিকে গ্রহণ করতে বাধ্য হয়, তখন পশ্চিমবঙ্গ কী ভাবে চলবে, কোন পথে চলবে, তা নির্ণয়ের অধিকারী বহিরাগতরা! |
কাজল চট্টোপাধ্যায়। সোদপুর, উত্তর চব্বিশ পরগনা |
|
|
|
|
|