এক বছরের দীর্ঘ লড়াই। অবশেষে স্বস্তি!
নরওয়ের আদালতের রায়ে প্রবাসী বাঙালি দম্পতি অনুরূপ ও সাগরিকা ভট্টাচার্যের দুই সন্তান অভিজ্ঞান ও ঐশ্বর্যার ভারতে ফিরে আসার পথে আপাতত কোনও বাধা রইল না। আজ নরওয়ের এক আদালত জানিয়েছে, শিশু দু’টির কাকা অরুণাভাস ভট্টাচার্যের হাতে তুলে দেওয়া হবে দু’জনকে। তাদের নিয়ে দেশে ফিরে আসবেন অরুণাভাস। সব ঠিকঠাক থাকলে আগামিকালই নয়াদিল্লি পৌঁছতে পারেন তাঁরা। গোটা প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করতে বিদেশ মন্ত্রকের কয়েক জন আধিকারিকও নরওয়েতে রয়েছেন।
বাচ্চাদের দেখভাল ঠিক ভাবে হচ্ছে না, এই অভিযোগে গত মে মাসে অনুরূপ-সাগরিকার দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে যায় নরওয়ের শিশুকল্যাণ বিভাগ। তার পর থেকেই শিশুদের ফেরত পেতে মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছেন এই প্রবাসী দম্পতি। রায়ের পর প্রাথমিক প্রতিক্রিয়ায় শিশুদের বাবা অনুরূপ ভট্টাচার্য বলেন, “বিরাট স্বস্তি। এক বছরের দুঃস্বপ্নের পর আজকের রায় যে কতটা শান্তি দিল বলে বোঝাতে পারব না!” তবে শিশুরা না ফেরা পর্যন্ত এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি সাগরিকা ভট্টাচার্য। এই মুহূর্তে তিনি কলকাতায়। তবে বাচ্চারা ফিরলেও এখনই ভারতে ফিরতে পারছেন না অনুরূপ। কারণ আদালতের রায়, কোনও ভাবেই যেন শিশুদের সঙ্গে দেশে না ফেরেন তিনি। অনুরূপ জানান, আপাতত কিছু দিন সে দেশেই থাকবেন। তার পর ফিরবেন ভারতে।
১৭ এপ্রিল নরওয়ের আদালতে এক শুনানিতে শিশুদের কাকার সঙ্গে ভারতে ফেরত পাঠানোর আবেদন করেন অনুরূপ-সাগরিকা। তাঁদের আবেদনে সায় দিয়ে নরওয়ের শিশুকল্যাণ বিভাগও শুনানিতে শিশুদের দেশে ফেরানোর সুপারিশ করে। আজকের শুনানিতে আদালত দু’তরফের ওই যৌথ আবেদন অনুমোদন করেছে। রায়ে আদালত জানায়, যে কারণে শিশু দু’টিকে তাদের বাবা-মায়ের থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল, তার কোনও সুরাহা এখনও হয়নি। কিন্তু যে-হেতু দুই শিশু ভারতে ফিরে তাদের কাকার সঙ্গেই থাকবে, তাই তাদের আর এ দেশে পালক বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকার প্রয়োজন নেই। শিশুকল্যাণ বিভাগের প্রধান গানার টোরসেন জানান, আদালতের রায়ে তাঁরা খুশি। এ ব্যাপারে সহযোগিতা করার জন্য ভারতের বিদেশ মন্ত্রক এবং অসলোর ভারতীয় দূতাবাসকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন তিনি। শিশু দু’টিকে যত দ্রুত সম্ভব দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।
এতেও অবশ্য পুরোপুরি আশ্বস্ত হতে পারছে না সাগরিকার পরিবার। অনুরূপের স্ত্রী সাগরিকা এবং তাঁর বাবা-মা মনোতোষ ও শিখা চক্রবর্তীর সঙ্গে এ দিন যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে মনোতোষবাবুর ভাই দেবতোষ চক্রবর্তীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি আনন্দবাজারকে জানান, বাচ্চারা ফিরে না আসা পর্যন্ত এ নিয়ে তাঁরা কোনও মন্তব্য করবেন না। তাঁর কথায়, “টিভিতে তো অনেক কিছুই শুনছি। এর আগেও বহু বার সব ঠিকঠাক থেকেও শেষরক্ষা হয়নি। ওঁরা (সাগরিকা এবং তাঁর বাবা-মা) এখনও খুব ঘাবড়ে আছেন। সব ঠিকঠাক না হওয়া পর্যন্ত ওঁরা কিচ্ছু বলতে চাইছেন না।” এক বছরের লড়াই বোধ হয় বিশ্বাস করার ক্ষমতাটুকুও কেড়ে নিয়েছে তাঁদের কাছ থেকে! |