মাটির মানুষ
প্রচারের আড়ালেই থেকে গিয়েছেন দারুশিল্পী দুলাল
য়স যখন পনেরো, হাতে তুলে নিয়েছিলেন ছেনি-বাটালি-হাতুড়ি। কাঠ নিয়ে কোনও অবয়ব তৈরি করাটা ছিল তখন নেহাতই শৌখিনতা। যদিও বাবা কাঠের মিস্ত্রী হওয়ার সুবাদে পারিবারিক জীবিকায় এ ভাবেই জুড়ে গিয়েছিলেন দুলাল। পুরুলিয়া রঘুনাথপুরের বাবুগ্রাম পঞ্চায়েতের প্রাক্তন শিক্ষক দুলালচন্দ্র রায়।
পনেরো বছর বয়সে যে শুকনো এক টুকরো কাঠের সঙ্গে সম্পর্ক শুরু, হয়েছিল তা আজও সমান সচল এই সত্তর বছরের জীবনে। পারিবারিক জীবিকা কাঠের কাজ হলেও গ্রামীণ এই কাষ্ঠশিল্পীর মন শুধু মাত্র কাঠের আসবাব তৈরিতেই বাঁধা পড়েনি। শুরু হয়েছিল দেবদেবী, পশুপাখির মূর্তি খোদাই দিয়ে। সবই ওই শুকনো কাঠেই। মধ্যবিত্ত ছাপোষা সংসারে লেখাপড়াকে প্রাধান্য দিলেও ছেলের কাঠ নিয়ে মেতে ওঠার নেশায় কখনও বাধা দেননি বাবা। ছেলেও কাঠের কাঠের কাজে মেতে থাকলেও চালিয়ে গিয়েছেন পড়াশোনাও। যার সূত্রে চল্লিশ বছর ধরে রঘুনাথপুর ঝাণ্ডাপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা। স্কুলে শিক্ষকতা পাওয়ার পর সংসারের অভাব কিছুটা কমল। আর দুলালচন্দ্র রায় শিল্পকর্মে, দারু ভাস্কর্যে পূর্ণ শিল্পী হয়ে উঠলেন।
“গাঁয়ে কিছু কাঠের মিস্ত্রি থাকেই। জীবিকার কারণে। কেউ বাড়ি-ঘরের কাঠামো গড়েন। কেউ কৃষিযন্ত্র তৈরি করেন। কেউ তৈরি করেন দামি আসবাবপত্র। সাধারণের কাছে এঁদের পরিচয় কাঠের মিস্ত্রী হলেও আমার কাছে কিন্তু এঁরা শিল্পী। তবে আমি নিজেকে একটু ভিন্ন পথে সরিয়ে এনেছি।” এ ভাবেই নিজের কাজের কথা জানালেন শিল্পী।
কেমন সে পথ?
ফের শুরু করেন দুলাল, “এক টুকরো কাঠ দেখলেই আমি তার ভিতর নানা রকমের ‘অবয়ব’ দেখতে পাই। যেগুলি আমাদের গ্রামজীবনে নিত্যদিন দেখি। যেমন মা ও ছেলে। যেমন গরুর পাল। একঝাঁক সরাল পাখি। কোনটা গড়ব মনের মধ্যে তা গেঁথে নিয়ে কাঠে বাটালি লাগাই। এই যে দেখছেন দাঁড়ে বসা ময়নার পায়ে শিকলি। ওটা কিন্তু একটা মাত্র কাঠেই। একটা মাত্র পিসে। কোনও জোড়া না দিয়েই। এ ধরনের কাজ কিন্তু কঠিন। এরকমই প্রচুর মূর্তি রয়েছে।” না, এর জন্য কোনও শিক্ষাগুরু পাননি। শিল্পীর কথায়, “গুরু যদি বলতে হয় তবে তা বাবাই। কাজের চেয়ে ভাবনাটাই বড়। আপনি যদি কারও কোনও কাজ দেখেন, তবে আগে তা বুঝতে হবে। আর ভাবতে হবে ওই কাজটি থেকে নতুন কী করা যেতে পারে। তা না হলে তো একই কাজের কপি কাল, পরশু, তরশু।” একেবারে শিল্পের গূঢ় রহস্যটি ভেদ করলেন রঘুনাথপুরের অতিপরিচিত ও শ্রদ্ধেয় কাষ্ঠশিল্পী। রঘুনাথপুর জি ডি ল্যাং স্কুলের প্রধান শিক্ষক দেবাশিস সরখেলের খেদ, “প্রত্যন্ত গ্রামে পড়ে থাকা এমন শিল্পীদের আর কতটুকুই বা কদর! কিন্তু দারুভাস্কর্যে দুলালবাবু পুরুলিয়ার এই অঞ্চলের অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় মানুষ।”
দুলালবাবুর কাজ একাধিক মেলায়, প্রদর্শনীতে গিয়েছে। রাজ্যের গণ্ডী ছাড়িয়ে বিহার-ঝাড়খণ্ডের শিল্পমেলায় অংশগ্রহণ করে একাধিক পুরস্কারও পেয়েছেন শিল্পী। রাজ্য সরকারের পুরস্কারও দু’বার উঠেছে ঝুলিতে। ‘নিজের ঢাক নিজে পেটানো’-র এই যুগে উপযুক্ত স্বীকৃতি না পাওয়া নিয়ে কোনও খেদ? “না, ওই পন্থায় আমার বিশ্বাস নেই। নিষ্ঠা নিয়ে কাজ করলে তার মূল্য অবশ্যই মেলে। তবে এটাও ঠিক, প্রচার রাস্তাকে একটু মসৃণ করে বই কী। না হলে আজ পর্যন্ত আমার কোনও কাজ এখনও ভিন রাজ্যে পাঠানো হয়নি।’’ হতাশা ফুটে উঠল শিল্পীর গলায়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.