সম্পাদকীয় ১...
অনেক পিছনে
ভারতের প্রথম আন্তর্মহাদেশীয়, পরমাণু-বোমা-বহনক্ষম ক্ষেপণাস্ত্র অগ্নি-৫-এর পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ সফল হইয়াছে। এই ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা পাঁচ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি। অর্থাৎ অতঃপর সমগ্র চিন, রাশিয়ার অধিকাংশ, গোটা ইউরোপ, পশ্চিম এশিয়া এবং উত্তর-পূর্ব আফ্রিকা সহ ভারত মহাসাগরের বিস্তীর্ণ অঞ্চল ভারতীয় পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লার মধ্যে আসিয়া গেল। ইহা নিঃসন্দেহে ভারতীয় বিজ্ঞানী ও প্রযুক্তিবিদদের অভিনন্দনীয় সাফল্য। দেশের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা বন্দোবস্তকে আরও নিশ্ছিদ্র করিতে এই আন্তর্মহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র সহায়ক হইবে। প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ এই সাফল্যে বিজ্ঞানীদের প্রতি দেশবাসীর কৃতজ্ঞতা ও গর্বের কথাও উচ্চারণ করিয়াছেন।
ভারতীয় ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির এই সাফল্য সত্ত্বেও বিশ্বের অন্য শক্তিধর রাষ্ট্রের তুলনায় ভারতের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতার বিষয়টিও স্মরণে রাখা দরকার। অন্য যে পাঁচটি দেশের হাতে দূরপাল্লার পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র রহিয়াছে, তাহারা সকলেই নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য। প্রত্যেক দেশেরই অগ্নি-৫-এর দ্বিগুণ পাল্লার (অর্থাৎ ১০ হাজার কিলোমিটারের) পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র রহিয়াছে। চিনের হাতে তো ১২ হাজার কিলোমিটার পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রও আছে। এবং অনেক আগে হইতেই আছে। ভারতকে যদি এই শক্তিধরদের সহিত অভিন্ন পঙ্ক্তিতে বসিতে হয়, তবে এখনও অনেক পথ পার হইতে হইবে। চিন যে সামরিক শক্তিতে ভারতের তুলনায় অনেক অগ্রগামী, তাহা লইয়া সংশয় নাই। চিনের সহিত এ ব্যাপারে টক্কর দিতে হইলে ভারতের প্রতিরক্ষা-প্রস্তুতির গুণগত উন্নতি ঘটাইতে হইবে। ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র-পরীক্ষা চিনের তীব্র গাত্রদাহ ঘটাইয়াছে। চিনা সরকারের মুখপত্রে অসহিষ্ণু প্রতিক্রিয়া-- ভারত এই সফল পরীক্ষার দ্বারা কিছুই অর্জন করিবে না, কেননা চিন তাহার তুলনায় মারণাস্ত্র নির্মাণে অনেক অগ্রবর্তী। কথাটি মিথ্যাও নয়। চিনা মুখপত্রে হুমকির সুর প্রচ্ছন্ন নয়, প্রকাশ্য এবং পশ্চিমী রাষ্ট্রগুলি ভারতের প্রতি কড়া মনোভাব না লওয়ায় চিন হতাশ। বিশেষত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতের এই সফল উৎক্ষেপণে আপত্তিকর কিছু না-দেখায় এবং পরমাণু প্রসার রোধে নয়াদিল্লির ভূমিকার বিশ্বাসযোগ্যতা লইয়া শংসাপত্র দেওয়ায় বেজিং যৎপরোনাস্তি ক্ষুব্ধ। বেজিংয়ের এই প্রতিক্রিয়ার মধ্যে ঔদ্ধত্য ও ছেলেমানুষি রহিয়াছে। কারণ দক্ষিণ এশিয়ায় চিন ও পাকিস্তান মারফত যে সামরিকীকরণ ঘটিতেছে, তাহার মধ্যে দাঁড়াইয়া নয়াদিল্লির পক্ষে শান্তির ললিত বাণী আওড়ানো ব্যর্থ পরিহাসের মতোই শুনাইবে। তাহাকে নিদেনপক্ষে আত্মরক্ষার ন্যূনতম সাধন সংগ্রহ করিতেই হইবে। মনে রাখা দরকার, এই দুই প্রতিবেশীর সঙ্গেই ভারতের রীতিমত যুদ্ধ হইয়াছে। পাকিস্তানের সমরসজ্জা, তাহার পরমাণু বোমার মজুত ভাণ্ডারও সম্ভবত ভারতের চেয়ে বেশি এবং তাহার নির্মাণে চিনের সহযোগিতার বিষয়টি আজ আর জল্পনার স্তরে নাই। চিনও নিয়মিত ভারতের উত্তর সীমান্তে নানা সামরিক প্ররোচনা দিয়া চলিয়াছে। এই অবস্থায় অন্তত আক্রান্ত হইলে প্রত্যাঘাত করার মনস্তাত্ত্বিক নিবারক নয়াদিল্লির হাতে থাকা উচিত। অগ্নি-৫-এর উৎক্ষেপণের পরিপ্রেক্ষিত সেটাই।
ভারতের সমরসজ্জা লইয়া অসহিষ্ণুতা ব্যক্ত করিলেও চিন পাকিস্তানের প্রতি পরম সহিষ্ণু। পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের বিতর্কিত জমিতে চিন রাস্তাঘাট, পরিকাঠামো-প্রকল্প নির্মাণ করিয়াছে। এশিয়ার ভূরাজনৈতিক মানচিত্রে আধিপত্যের প্রতিযোগিতায় ভারত চিনের প্রতিদ্বন্দ্বী। অরুণাচল প্রদেশের উপর অন্যায় দাবি এবং আনুষঙ্গিক সীমান্ত-বিরোধ লইয়া উত্তেজনা জিয়াইয়া রাখিয়া সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা তীব্রতর করা হইতেছে। ভারতকে পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ ও মায়ানমারস্থ নৌঘাঁটি দিয়া ঘিরিয়া চাপে রাখার আধিপত্যকামিতা চিনের বৃহৎশক্তিসুলভ উচ্চাকাঙ্ক্ষারই ফল। ব্রহ্মপুত্র নদের উপর ডজন-ডজন বাঁধ নির্মাণ করিয়া তাহার জলধারা শুকাইয়া ভারতকে ভাতে-পানিতে মারার নিকৃষ্ট সংকীর্ণতা অনুশীলনেও বেজিংয়ের দ্বিধা নাই। ভারতকে তাহার প্রতিরক্ষা-প্রস্তুতি শিথিল করিলে চলিবে না। অল্পে সন্তুষ্ট হইয়া নিজেরা নিজেদের পিঠ চাপড়াইলেও চলিবে না।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.