বাধা লাল ফিতের ফাঁস
ভিন্ রাজ্যে যাচ্ছে সৌরবিদ্যুৎ সংস্থা
শ্চিমবঙ্গে অপ্রচলিত বিদ্যুৎ নীতি না-থাকায় ভিন্ রাজ্যে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ছে এখানকারই বেশ কিছু সংস্থা। তাদের আরও অভিযোগ, এ ক্ষেত্রে সরকারি স্তরে অন্য রাজ্যে যে উৎসাহ দেওয়া হয় এখানে এখনও তা নেই।
অন্য রাজ্যে পা রাখতে চলেছে, রাজ্যের এমনই একটি সংস্থা শ্রী গণেশ জুয়েলারি। তাদের দাবি, লাল ফিতের ফাঁস এবং সরকারি উদাসীনতার জেরেই অন্যত্র লগ্নি সরাতে হচ্ছে তাদের। কী বলছে রাজ্য? রাজ্যের বিদ্যুৎ দফতরের বক্তব্য, অপ্রচলিত বিদ্যুৎ নীতি তৈরি হচ্ছে। রাজ্যও এই ক্ষেত্রকে উৎসাহ দিতে চায়।
কিন্তু বাজারের নিয়ম মেনেই এ রাজ্যে সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়তে হবে। ভর্তুকি বা গ্রাহকদের উপর চাপ বাড়িয়ে নয়।
সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, সূর্যালোকের বিকিরণ বেশি বলে গুজরাত, রাজস্থানের মতো পশ্চিম ভারতের রাজ্যগুলিতে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প গড়ার খরচ তুলনায় কম। পূর্বাঞ্চলে তা বেশি। ফলত, ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গীর দিক দিয়ে লগ্নিকারী সংস্থাগুলি সে দিকেই বেশি উৎসাহী।
যদিও তা মানতে নারাজ এই বিদ্যুৎ প্রকল্প গড়তে আগ্রহী শিল্পমহল। যেমন শ্রীগণেশ জুয়েলারি গুজরাতে সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি গড়তে ৪০০ কোটি টাকা লগ্নি করছে। সংস্থার কর্তা নীলেশ পারেখ জানান, গুজরাতে আরও লগ্নির পাশাপাশি ইতিমধ্যেই তাঁরা ওড়িশা, বিহার, ঝাড়খণ্ড, উত্তরপ্রদেশেও সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়ার পরিকল্পনা নিয়েছেন। ওড়িশা সহ দু’একটি রাজ্যে আলোচনা প্রায় চূড়ান্ত পর্বে পৌঁছেছে। তিনি বলেন, “উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে সূর্যালোকের সমস্যা এড়ানো সম্ভব।” তিনি জানান, মাস তিনেক আগে পশ্চিমবঙ্গেও লগ্নির প্রস্তাব দেন তাঁরা। কিন্তু নীতি না থাকার পাশাপাশি তাঁদের মনে হয়েছে, এখনও রাজ্য এ ব্যাপারে প্রস্তুত নয়।
ভিডিওকন, অ্যাস্টনফিল্ড, রিলায়্যান্সের মতো কয়েকটি সংস্থাও এ রাজ্যে সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র গড়তে চেয়ে বছর কয়েক আগে প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু প্রশাসনিক জটেই এখনও সেগুলি আটকে। ভিডিওকনের পূর্বাঞ্চলীয় কর্তা গৌতম সেনগুপ্তর-ও দাবি, উন্নত প্রযুক্তির সাহায্যে পূর্বাঞ্চলেও এই বিদ্যুৎ তৈরি করা সম্ভব। কিন্তু নীতি বা প্রশাসনিক দক্ষতার অভাবেই তা আটকে যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের হিসেবে, রাজস্থান বা গুজরাতের বিদ্যুৎ কেন্দ্রে এক মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রে যেখানে বার্ষিক প্রায় ১৬ হাজার ইউনিট সৌরবিদ্যুৎ তৈরি করা সম্ভব, এ রাজ্যে তা ১৪ হাজারের মত। সে জন্যই পশ্চিম ভারত সৌরবিদ্যুৎ ক্ষেত্রে লগ্নিকারীদের কাছে পছন্দের গন্তব্য।
এই পরিপ্রেক্ষিতেই পূর্বাঞ্চলে সরকারি ভর্তুকি বা বেশি মাসুল হারের চাহিদা তৈরি হয়। রাজ্যের বিদ্যুৎ দফতরের সচিব মলয় দে-র বক্তব্য, বাজারের নিয়ম মেনেই এ রাজ্যে প্রকল্প গড়তে হবে। ভর্তুকি দেওয়া যাবে না। গ্রাহকদের উপরও বাড়তি চাপ ফেলা যাবে না। তাঁর মতে, সৌরবিদ্যুৎই একমাত্র অপ্রচলিত বিদ্যুৎ শক্তি নয়। অন্য সব উৎসকেও উৎসাহ দেওয়া জরুরি। তবে তিনি জানান, খসড়া অপ্রচলিত বিদ্যুৎ নীতি তৈরি। সরকারের সম্মতি পেলেই তা চূড়ান্ত হবে।
যদিও বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, লগ্নি টানতে ভর্তুকি ছাড়াও উৎসাহব্যঞ্জক সরকারি নীতি থাকা দরকার। পাশাপাশি পরিবেশ রক্ষায় অপ্রচলিত বিদ্যুৎ উৎপাদন জরুরি। তাই বিদ্যুৎ বণ্টন সংস্থাগুলির একটা নির্দিষ্ট অংশ অপ্রচলিত বিদ্যুৎ হতে হবে বলে কেন্দ্র নির্দেশ দিয়েছে। বিভিন্ন রাজ্যের বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ কমিশনও তা চালু করেছে।
এ রাজ্যেও তা হয়েছিল। কিন্তু শিল্পমহলের বক্তব্য, তা কার্যত খাতায়-কলমেই আটকে থেকে গিয়েছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সে ক্ষেত্রে সৌরবিদ্যুতের উপর সকলকেই ভরসা করতে হবে। যেমন কেন্দ্রীয় অপ্রচলিত শক্তি মন্ত্রকের পরামর্শদাতা শান্তিপদ গণচৌধুরির দাবি, পশ্চিমবঙ্গে বার্ষিক প্রায় ১৬ হাজার মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনের সম্ভাবনা থাকলেও অন্য অপ্রচলিত বিদ্যুৎ শক্তির মোট সম্ভাবনা মাত্র ১২০০ মেগাওয়াট। গোটা দেশে তা যথাক্রমে ৯ লক্ষ মেগাওয়াট এবং এক লক্ষ মেগাওয়াট।
পাশাপাশি সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কর্মসংস্থান সবচেয়ে বেশি, মেগাওয়াট প্রতি ২১ জন। তিনি আজ জানিয়েছেন, “অন্য রাজ্যগুলি সৌর বিদ্যুৎ ক্ষেত্রে যখন লগ্নিকারীদের যথেষ্ট উৎসাহ দিচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গ সেখানে একমাত্র ব্যতিক্রম। যেমন রাজস্থান, ওড়িশার মতো রাজ্যে সৌর বিদ্যুৎ গ্রিডে পৌঁছে দেওয়ার জন্য পরিকাঠামো গড়ে দিচ্ছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.