মৃত শতাধিক
রানওয়ে ছোঁয়ার একটু আগেই যাত্রা শেষ
যাত্রা শুরুর আনন্দ বদলে গেল শেষ যাত্রার শোকে!
করাচি থেকে ইসলামাবাদনতুন রুটে বেসরকারি ভোজা এয়ারলাইন্সের প্রথম উড়ানটির সফল যাত্রা শেষ হতে বাকি ছিল মাত্র তিন-চার মিনিট। কিন্তু তার আগেই প্রবল ঝড়বৃষ্টির মুখে পড়ে ১২১ জন আরোহী নিয়ে রাওয়ালপিন্ডির কাছে আবাসিক এলাকায় ভেঙে পড়ল পাক যাত্রিবাহী বিমান। শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটে রাওয়ালপিন্ডির চাকলালা বায়ুসেনা ঘাঁটির কাছে। পাক প্রশাসন জানিয়েছে, রাত পর্যন্ত বিমানের ১১৮ জন আরোহীর মৃতদেহ উদ্ধার হয়েছে। কোনও জীবিত ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া যায়নি।
দুর্ঘটনার কথা শুনে ইসলামাবাদের সমস্ত হাসপাতালে বিশেষ সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। উদ্ধারকারীরা যদিও জানিয়ে দিয়েছিলেন, জীবিত কাউকে উদ্ধারের আশা প্রায় নেই। পাক প্রতিরক্ষামন্ত্রী চৌধুরী আহমেদ মুখতার জানান, দুর্ঘটনার সময় মাটির যথেষ্ট কাছাকাছিই ছিল বিমানটি। এমনকী, ইসলামাবাদের বেনজির ভুট্টো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে অবতরণের অনুমতিও দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সম্ভবত খারাপ আবহাওয়ার মধ্যে পড়েই ইসলামাবাদের রানওয়ে পর্যন্ত পৌঁছতে পারেননি পাইলট। রাওয়ালপিন্ডির বাহরিয়া এলাকায় হুসেন আবাস গ্রামের কাছে বিমানটি ভেঙে পড়ে। সঙ্গে সঙ্গেই ইসলামাবাদ বিমানবন্দর বন্ধ করে দেওয়া হয়। বাতিল হয় সমস্ত উড়ানও।
প্রাণের খোঁজে: দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানের ভগ্নাংশ সরিয়ে চলছে
উদ্ধারকাজ। শুক্রবার রাওয়ালপিন্ডিতে। ছবি: এএফ পি
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের জুলাই মাসে করাচি থেকে ইসলামাবাদ আসার পথেই রাস্তা হারিয়ে পাহাড়ের উপর ভেঙে পড়েছিল একটি যাত্রীবাহী বেসরকারি বিমান। সেই ঘটনায় বিমানের ১৫২ জন আরোহীই মারা যান। শুক্রবারের দুর্ঘটনা সেই অভিশপ্ত যাত্রার স্মৃতিকেই আরও এক বার উসকে দিল। ঘটনাচক্রে, প্রমোদতরী টাইটানিকের অভিশপ্ত প্রথম তথা শেষ যাত্রার শতবর্ষও পেরিয়েছে মাত্র ক’দিন আগেই!
খারাপ আবহাওয়াকে দায়ী করছেন পাক বিশেষজ্ঞরাও। মনে করা হচ্ছে, ইসলামাবাদে বিকেল থেকে যে প্রচণ্ড বৃষ্টি ও ঝড় চলছে, তার মধ্যে পড়েই ইসলামাবাদগামী প্রধান সড়কের দু’মাইল দূরে ভেঙে পড়ে প্রায় ৩০ বছর ব্যবহৃত বোয়িং ৭৩৭ বিমানটি। প্রাথমিক ভাবে সন্দেহ, পাইলট হয়তো একটি উল্লম্ব মেঘের মধ্যে পড়ে গিয়েছিলেন, যে পরিস্থিতি থেকে বিমানটি বের করে আনা যথেষ্ট কষ্টকর। প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশের দাবি, তাঁরা আকাশ থেকে একটি আগুনের গোলা পড়তে দেখেন। কিছু গ্রামবাসী ও উদ্ধারকারীর দাবি, মাটিতে আছড়ে পড়ার পরেই আগুন ধরে যায় বিমানটিতে। কয়েক কিলোমিটার জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে জ্বলন্ত টুকরো। বিমানটি বিদ্যুতের খুঁটির উপর ভেঙে পড়ায় বিস্তীর্ণ এলাকা অন্ধকার হয়ে যায়। ফলে প্রথম দিকে মোবাইলের আলোতেই উদ্ধারকাজ শুরু করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। পরে ইসলামাবাদ থেকেও উদ্ধারকারী দল পাঠানো হয়। গিয়েছে সেনা, কপ্টারও। জরুরি অবস্থা জারি হয় রাওয়ালপিন্ডিতে। খোঁজ চলছে বিমানের ব্ল্যাকবক্সের। দুর্ঘটনার কারণ জানতে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে পাক অসামরিক বিমান মন্ত্রক।
পাক বিমান মন্ত্রকের মুখপাত্র পারভেজ জর্জ জানান, এ দিন যাত্রী ও বিমানকর্মী মিলিয়ে ১২১ জনকে নিয়ে বিকেল পাঁচটা নাগাদ করাচির জিন্না আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে যাত্রা শুরু করে ভোজা এয়ারলাইন্সের বি-৪২১৩ বোয়িং বিমানটি। নব্বইয়ের দশকে এই বিমানসংস্থা সংযুক্ত আরব আমিরশাহি ও পাকিস্তানের মধ্যে যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম হিসেবে কাজ করলেও আর্থিক দৈন্যের কারণে ২০০১ সালে বিমান পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছিল তারা। সংস্থার পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে ফের এই বছরের জানুয়ারিতে পাকিস্তানে ছোট ছোট রুটে বিমান পরিষেবা শুরু করে ভোজা। তার মধ্যে করাচি-ইসলামাবাদ রুটে এটাই সংস্থার প্রথম উড়ান। সন্ধ্যা ৬টা ৫০-এ ইসলামাবাদে বেনজির ভুট্টো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামার কথা ছিল বিমানটির। ইসলামাবাদ এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল সূত্রে জানা যাচ্ছে, ৬টা ৪০ মিনিটে বিমানটিকে অবতরণের অনুমতিও দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তার পরেই বিমানটির সঙ্গে এটিসির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তার কয়েক মিনিটের মধ্যেই ইসলামাবাদ সংলগ্ন রাওয়ালপিন্ডির গ্রামে সেটি ভেঙে পড়ে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.