বন্ধ কারখানায় অবাধে লুঠপাট
বাধে লুঠ চলছে সাঁতুড়ির একটি বন্ধ স্পঞ্জ আয়রন কারখানায়। অভিযোগ, ওই কারখানায় প্রথম দিকে বিক্ষিপ্ত ভাবে চুরির ঘটনা ঘটলেও সম্প্রতি সংগঠিত ভাবে লুঠতরাজ শুরু করছে স্থানীয় লোহা মাফিয়ারা। পুলিশের অবশ্য দাবি, লুঠপাট ঠেকাতে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে।
রঘুনাথপুরের এসডিপিও দ্যুতিমান ভট্টাচার্য বলেন “গত দু’দিনে আটক করা হয়েছে তিনটি ট্রাক, একটি মিনিট্রাক, দু’টি বাইক, ন’টি সাইকেল ও গ্যাসকাটার যন্ত্র। উদ্ধার হয়েছে প্রায় ৫০ টন লোহার ছাঁট ও যন্ত্রাংশ। লুঠের ঘটনায় জড়িত অইভিযোগে গ্রেফতার হয়েছে ৯ জন।” এলাকাবাসীর বক্তব্য, উদ্ধার হওয়া সামগ্রীর পরিমাণেই স্পষ্ট কারখানাটিতে ব্যাপক লুঠ চলছে।
প্রশাসন সূত্রের খবর, ২০০৪-এ পুরুলিয়ার সাঁতুড়ি থানার পড়াডিহা গ্রামের অদূরে গড়ে ওঠে কারখানাটি। মূলত ইস্পাত তৈরির কাচাঁমাল উৎপাদন হত সেখানে। কলকাতার এক শিল্পগোষ্ঠী ৩০০ কোটি টাকারও বেশি ব্যয়ে কারখানাটি গড়েছিল। গত বছর অক্টোবরে শ্রমিক বিক্ষোভের জেরে কারখানাটি বন্ধ হয়ে যায়। পরে ‘সাসপেনশন অফ ওয়ার্ক’ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কারখানাটি অস্থায়ী ভাবে বন্ধ করে দেন কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় সূত্রের খবর, বন্ধ কারখানায় নিরাপত্তারক্ষী না থাকায় সহজেই সংগঠিত আকারে লুঠপাট শুরু করেছে লোহা মাফিয়ারা। অবস্থা এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে, দিনেও ট্রাক বোঝাই করে কারখানার যন্ত্রাংশ, লোহার ছাঁট এমনকি উৎপাদিত পণ্য লুঠ করছে দুষ্কৃতীরা। সম্প্রতি পুলিশ দিনেই অভিযান চালিয়ে লোহা উদ্ধার করেছে। কিছু দুষ্কৃতীকেও ধরেছে। কারখানার মালিক বিকাশ পাটনি জানান, কারখানার সীমানা প্রাচীর ভেঙে দুষ্কৃতীরা নির্বিচারে লুঠ করছে। নিরাপত্তারক্ষীদের মারধর করে তাড়িয়ে দিয়েছে। তাঁর অভিযোগ, “বিভিন্ন সময়ে থানা ও জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লুঠের অভিযোগ জানিয়েছি। কাজ হয়নি।”
স্থানীয় সূত্রে জানা যাচ্ছে, কারখানা থেকে লুঠ হওয়া যন্ত্রাংশ, লোহার ছাঁট বা উৎপাদিত পণ্য পাচার হচ্ছে বাঁকুড়ার শালতোড়া বা আসানসোলের বিভিন্ন এলাকায়। শালতোড়ার কিছু এলাকায় চুরি হওয়া ছাঁট লোহার গুদামও বানিয়ে ফেলেছে দুষ্কৃতীচক্র। তবে, লুঠপাটের পরিমাণ জানাতে পারেননি কারখানা কর্তৃপক্ষ। বিকাশবাবু বলেন, “টেকনিক্যাল টিম পাঠিয়ে কারখানার অবস্থা খতিয়ে দেখার পরেই ওই বিষয়ে কিছু বলা সম্ভব। কিন্তু এলাকার যা অবস্থা, তাতে কর্মীদের কারখানায় পাঠাতে ভরসা হচ্ছে না।”
সাঁতুড়ি ব্লক তৃণমূল সভাপতি রামপ্রসাদ চক্রবর্তী বলেন, “কারখানাটি বন্ধ হওয়ার পরেই সংগঠিত আকারে লুঠ চলছে। বিক্ষিপ্ত ভাবে পুলিশি অভিযান হয়েছে। লুঠ বন্ধ হয়নি।” তৃণমূলের আশঙ্কা, লুঠ আটকানো না গেলে কারখানা পুরোপুরি বন্ধ করে দেবেন কর্তৃপক্ষ। কাজ হারাবেন এলাকার বাসিন্দারা। তবে কারখানা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে পুলিশেরও তরফেও। প্রশাসন সূত্রের খবর, কারখানাটি খোলার বিষয়ে রঘুনাথপুরের মহকুমাশাসকের দফতরে জানুয়ারিতে ত্রিপাক্ষিক বেঠক হয়েছিল। সিদ্ধান্ত হয়েছিল, কর্তৃপক্ষ কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করবেন। চারদিকে আলোর ব্যবস্থা করে কারখানার যন্ত্র ও উৎপাদিত পণ্য রক্ষণাবেক্ষণের কাজ শুরু হবে। এসডিপিও বলেন “বৈঠকে গৃহীত কোনও সিদ্ধান্তই কার্যকরী করেননি কারখানা কর্তৃপক্ষ। তাঁরা কারখানা সুরক্ষিত রাখতে নিজেদের দায়িত্ব পালন করেনি। তবে কারখানায় লুঠের ঘটনার খবর পেলেই পুলিশ অভিযান চালিয়ে ব্যবস্থা নেয়।”
সব মিলিয়ে দুষ্কৃতী-দৌরাত্মের জেরে একটি কারখানার ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে পুরুলিয়ার অন্যতম শিল্পাঞ্চল এলাকায়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.