এ বার ব্যারাকপুর
‘পক্ষপাতের’ সক্রিয়তায় ফের অভিযুক্ত পুলিশ
ভিযোগ পেয়ে কখনও তারা ‘নিষ্ক্রিয়’, কখনও ‘অতি সক্রিয়।’ গত ক’দিনে দক্ষিণ ২৪ পরগনার নিউ গড়িয়া, গরফা বা বারুইপুরে পুলিশের বিরুদ্ধে ‘এফআইআর রাজ’ চালানোর যে অভিযোগ বারবার উঠেছে, মঙ্গলবারও তার ধারাবাহিকতা বজায় থাকল।
এ বারের ঘটনাস্থল উত্তর ২৪ পরগনা। অভিযোগের তির ব্যারাকপুর পুলিশের দিকে। অভিযোগ, দেড় মাস আগের এক মারধরের ঘটনায় যে অভিযুক্তদের গ্রেফতারে প্রথমে তারা কোনও গা করেনি, এ বার সেই অভিযুক্তদেরই তরফে দাখিল অভিযোগের ভিত্তিতে ‘চূড়ান্ত তৎপরতা’ দেখিয়ে তারা রাতারাতি থানায় তুলে এনে গ্রেফতার করেছে ‘প্রতিপক্ষের’ দু’জনকে। শুধু তা-ই নয়, বাড়ি থেকে তুলে আনার পরে ঘণ্টা তিনেক দু’জনের কোনও খোঁজও পুলিশ দেয়নি বলে পরিজনদের অভিযোগ।
গত বৃহস্পতিবার রাতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্রের ‘অশ্লীল ব্যঙ্গচিত্র’ ই-মেলে ফরওয়ার্ড করার অভিযোগ দায়ের করেছিল একদল তৃণমূলকর্মী। যার ভিত্তিতে পূর্ব যাদবপুরের পুলিশ সেই রাতেই ‘অতি সক্রিয়’ হয়ে নিউ গড়িয়ার এক আবাসনের বাসিন্দা অম্বিকেশবাবুকে গ্রেফতার করে হাজতবাস করায়। পরে অম্বিকেশবাবু তাঁকে ‘মারধরের’ জন্য ওই যুবকদের বিরুদ্ধে এফআইআর করলেও পুলিশ ‘দায়সারা ভাবে’ তাদের কয়েক ঘণ্টা আটকে রেখে আদালতে হাজির করে বলে অভিযোগ। গত শনিবার রাতে এক তরুণী শ্লীলতাহানির অভিযোগ করার পরেও গরফা থানা অভিযুক্ত যুবককে ছেড়ে দেয়। আবার রবিবার বারুইপুরে প্রহার-শ্লীলতাহানির নালিশ পেয়েও পুলিশ নড়েচড়ে বসেনি বলে অভিযোগ উঠেছে।
আর মঙ্গলবার বিকেলে জগদ্দল থানায় এক তৃণমূলকর্মীর স্ত্রীর অভিযোগ পাওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রাতেই দুই সিপিএম সমর্থককে থানায় তুলে এনে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁরা ওই তৃণমূল কর্মীর বাড়ি গিয়ে তাঁর স্ত্রীকে ‘প্রাণনাশের’ হুমকি দিয়েছিলেন। ধৃত সোমনাথ রায় ও সুকুমার ভট্টাচার্য অবশ্য বুধবার ব্যারাকপুর আদালতে জামিন পেয়ে গিয়েছেন।
এবং একে ঘিরে ইতিমধ্যেই পুলিশের বিরুদ্ধে ‘পক্ষপাতিত্বের’ অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। কেন?
পুরো ব্যাপারটির নেপথ্যে রয়েছে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বামেদের ডাকা শিল্প ধর্মঘটের দিনের একটি মারধরের ঘটনা। সে দিন অপু কুণ্ডু নামে এক সিপিএম সমর্থক অভিযোগ করেছিলেন, ধর্মঘটের সমর্থনে প্রচার করার সময়ে তিনি ও তাঁর সঙ্গীরা জয়দেব রায় ও মৃত্যুঞ্জয় গুহ নামে দুই তৃণমূলকর্মীর হাতে প্রহৃত হন। কিন্তু তার পরেও পুলিশ ‘নিষ্ক্রিয়’ থাকে বলে অপুবাবুর অভিযোগ। অপুবাবুর স্ত্রী কাকলি ঘোষকুণ্ডু নিজেও পুলিশকর্মী। অভিযুক্তদের গ্রেফতারে পুলিশের ‘হেলদোল’ না-দেখে কাকলিদেবী শেষে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন। পুলিশ কেন ব্যবস্থা নেয়নি, তা জানতে হাইকোর্ট তলব করে ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়কে। অপুবাবুদের দাবি, পুলিশ তখনই ‘চাপে পড়ে’ জয়দেববাবু ও মৃত্যুঞ্জয়বাবুকে ‘আত্মসমর্পণ’ করায়। ঘটনার পরে তখন এগারো দিন কেটে গিয়েছে। আদালত তাঁদের জামিনের আবেদন খারিজ করে জেল হেফাজতে পাঠায়।
মঙ্গলবারের ঘটনা এরই জের। ওই রাতে দুই সিপিএম সমর্থকের বিরুদ্ধে ‘প্রাণনাশের’ হুমকির অভিযোগ এনেছেন যিনি, তিনি জেল হেফাজতে থাকা জয়দেববাবুরই স্ত্রী। আর তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে ব্যারাকপুরের পুলিশ গভীর রাতে যে দু’জনকে বাড়ি থেকে থানায় তুলে এনেছিল, সেই সোমনাথবাবু-সুকুমারবাবুরা শিল্প ধর্মঘটের দিন ‘প্রহৃত’ অপুবাবুদের হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন বলে ওঁদের আইনজীবীদের দাবি। ওই মারপিটের ঘটনার সাক্ষীও তাঁরা।
কী ভাবে থানায় আনা হয় ওঁদের?
সোমনাথবাবুর স্ত্রী এ দিন বলেন, “রাত দু’টোয় তিন গাড়ি পুলিশ আসে। ওঁকে থানায় যেতে বলে। কারণ জানতে চাইলে বলে, দরকার আছে, সকালেই ছেড়ে দেব। সকালে আমরা জগদ্দল থানায় যাই। কিন্তু ওঁদের দেখা পাইনি।” সুকুমারবাবুর স্ত্রীরও একই বক্তব্য। তাঁর কথায়, “অনেক খোঁজ করে ঘণ্টা তিনেক বাদে জানতে পারলাম, ওঁদের দু’জনকে ব্যারাকপুর থানার লক-আপে রাখা হয়েছে।”
মারপিটের অভিযোগের পরে ‘নিষ্ক্রিয়’ থাকলেও মঙ্গলবার অভিযোগ পেতেই পুলিশ ‘অতি সক্রিয়’ হয়ে উঠল কেন?
ব্যারাকপুরের পুলিশ কমিশনার সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, “শিল্প ধর্মঘটের দিনের অভিযোগটিকেও পুলিশ যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখেছে। তখন একাধিক বার তল্লাশি চালিয়েও অভিযুক্তদের ধরা যায়নি। মঙ্গলবার মহিলার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেয়ে পুলিশ ওই দুই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.