অসম-অরুণাচলে অনুসন্ধান
বিশ্বযুদ্ধে ভেঙে পড়া বিমান খুঁজতে অভিযানে আমেরিকা
‘হট অ্যাজ হেল’!
নিয়তির পরিহাস ছাড়া কী-ই বা বলা যায় এই নামকরণকে? ১৯৪৪ সালের জানুয়ারিতে কনকনে ঠান্ডায় যে মার্কিন বিমানটি অসমের উপর দিয়ে তৎকালীন ‘বর্মা’র (মায়ানমার) দিকে ধেয়ে গিয়েছিল, তাকে এই নামেই ডাকা হত। শত্রুবিমানের আক্রমণে বিস্ফোরণ ঘটে তাতে। গ্যাসোলিন ভর্তি বিমানটি আছড়ে পড়ে উত্তর পূর্বাঞ্চলের প্রত্যন্ত পাহাড়ি খাদে। মৃত্যুর আগে ‘নরককুণ্ডের উষ্ণতাই’ নির্ঘাত প্রত্যক্ষ করেছিলেন বিমানের অসহায় সেনারা।
ওই ঘটনার ঠিক এক বছর আগে, জাপানি মিৎসুবিশি বিমান থেকে ছোড়া গুলিতে অরুণাচল প্রদেশে ভেঙে পড়েছিল বি-২৫ ডি নামের একটি মার্কিন বিমান।
অসম-অরুণাচলের পাহাড়ে লুকিয়ে আছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের এমন অন্তত ৯০টি মার্কিন বিমানের ধ্বংসাবশেষ। ভারত ও আমেরিকা ওই এলাকায় যৌথ অনুসন্ধান-অভিযান চালাবে। যেটুকু সম্ভব ওই ভগ্নস্তূপ ফিরিয়ে নিয়ে যাবে আমেরিকা।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ভেঙে পড়া বিমানের ধ্বংসাবশেষ। নিজস্ব চিত্র
সোমবার দিল্লিতে ভারত ও আমেরিকার মধ্যে রাজনৈতিক-সামরিক আলোচনায় এটিই ছিল মুখ্য বিষয়বস্তু। বিদেশ মন্ত্রকের আমেরিকা বিষয়ক যুগ্মসচিব জাভেদ আশরফের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর মার্কিন সহ-সচিব অ্যান্ড্রু শাপিরো বলেন, “দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্যবহৃত মার্কিন বিমানগুলির ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করে ওয়াশিংটনে নিয়ে যাওয়া হবে। সহযোগিতা করবে নয়াদিল্লি। দু’দেশের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে।” বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের খবর, অভিযানের খুঁটিনাটি স্থির হয়নি। আপাতত ঠিক হয়েছে, অরুণাচল এবং উত্তর-পূর্বাঞ্চলের অন্য রাজ্যগুলিতে (যে সব এলাকায় বিমান ভেঙে পড়েছিল) অভিযানের জন্য আমেরিকার সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদলকে যেতে অনুমতি দেওয়া হবে। সঙ্গে থাকবেন ভারতীয় কর্তারা। তবে এলাকাটি চিন সীমান্তে বলে সেখানে মার্কিন সেনা নিয়ে যাওয়া সংক্রান্ত স্পর্শকাতরতার দিকটিও বিশেষ ভাবে বিবেচনা করছে সাউথ ব্লক। এ কারণেই বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব করছিল দিল্লি। কিন্তু সব দিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ‘মানবিকতার’ কারণে এই কাজ আর ফেলে রাখা ঠিক নয়।
দিল্লিতে নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাস সূত্রে জানানো হয়েছে, জাপানের হাতে ধ্বংস হওয়া ওই বি-২৫ ডি বিমানটির চালকের নাম ছিল জন পোর্টার। তাঁর ভাইপো জন হাউলে এবং পরিবারের অন্যরা আজ পর্যন্ত হত্যে গিয়ে পড়ে রয়েছেন, ‘নিখোঁজ’ পোর্টারের শেষ পরিণতি জানার জন্য। এত বছর পর ওই ধ্বংসাবশেষ ঘেঁটে পোর্টারের দেহাবশেষ পাওয়া যাবে কি না, তা অবশ্য খুবই অনিশ্চিত। তবুও গোটা বিষয়টির মধ্য দিয়ে এক ধরনের সান্তনা পাচ্ছেন তাঁর পরিবার।
সরকারি ভাবে না হলেও ব্যক্তিগত উদ্যোগে উত্তর-পূর্বাঞ্চলের পাহাড়ে ঘুরে ঘুরে স্মৃতিচিহ্ন খোঁজার কাজটি অবশ্য হয়ে এসেছে। গত কয়েক বছর ধরে মার্কিন নাগরিক ক্লেটন কুলেস এই কাজটি অক্লান্ত ভাবে করে যাচ্ছেন। বি-২৫ ডি-এর ভগ্নাবশেষ খোঁজার কাজে বেশ কিছুটা অগ্রসরও হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু দু’দেশের মধ্যে সরকারি চুক্তি না থাকার জন্য তা দেশে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি। গত বছর নভেম্বর মাসে পোর্টারের এক বোনের ছেলে জিন পেরেস একটি চিঠিতে কুলেসকে জানিয়েছিলেন, “আমার উননব্বই বছরের বৃদ্ধা মা এখনও মনে করতে পারেন তাঁর ভাইয়ের (পোর্টার) যুদ্ধে যাওয়ার দিনগুলি। পোর্টারের হারিয়ে যাওয়ার ঘটনাটি তিন প্রজন্ম ধরে আমাদের পরিবারের এক তীব্র মনোবেদনার কারণ। আমার ছোটবেলা কেটেছে এই গল্প শুনেই। আপনি কিছু করতে পারলে কৃতজ্ঞ থাকব।”
উদ্ধারকার্যে ভারতের সহায়তার সিদ্ধান্তকে তাই স্বাভাবিক ভাবেই স্বাগত জানিয়েছেন ক্লেটন কুলেস। বলেছেন, “আমি জানি ওই যুদ্ধে মৃত এবং নিখোঁজ সব মার্কিন সেনার পরিবারবর্গ কী তীব্র হতাশার মধ্যে এতগুলি বছর কাটিয়েছেন! দু’দেশের মধ্যে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার ফলে তাঁরা কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবেন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.