ঐতিহ্য রক্ষা করছে স্কুল
রায়বাড়ি
তকাল কেটে গেছে, ছাপার অক্ষর চেহারা পাল্টেছে, বানান বদলেছে, কিন্তু উপেন্দ্রকিশোরের লেখা ছোটবড় কারুর কাছে এখনো পুরনো হয়নি। কোনদিন হবে কি?’ সত্তর দশকে লিখেছিলেন প্রেমেন্দ্র মিত্র। সেই সরস গদ্য আজও অম্লান, তা সে ছোটদের জন্যে লেখা রামায়ণ বা গল্পমালাই হোক, কিংবা পুরী দার্জিলিংয়ের ভ্রমণবৃত্তান্ত। কুড়ি বছর বয়সেই কলম ধরেছিলেন ১৮৮৩, বিলিতি যন্ত্র এনে ছবির চমৎকার ছাপাখানা ‘ইউ রায় অ্যান্ড সন্স’ তৈরি করেছিলেন ১৮৯৫-এ। আর ১৯১৪-য় উত্তর কলকাতার গড়পারে ষোলো কাঠা জমির ওপর তৈরি করেন রায় পরিবারের সেই বিখ্যাত বাড়ি। সপরিবার বসবাস করার পাশাপাশি ছাপাখানা ও অন্যান্য ব্যবসায়িক কাজকর্মও চলত ওই বাড়িতেই। তিনতলা বাড়ির সামনে লেখা ‘ইউ রায় অ্যান্ড সন্স’, বেরোত শিশুদের মাসিক পত্রিকা ‘সন্দেশ’, সম্পাদক খোদ গৃহকর্তাই। চোদ্দোটি ঘর বাড়িটার, দোতলার একটি ঘরে থাকতেন পুত্র সুকুমার রায়।
১৯২৩-এ সে ঘরেই অসুস্থ সুকুমারের শয্যাপাশে উপস্থিত হয়ে রোগীর ইচ্ছানুসারে গান শুনিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ১০০এ গড়পার রোডের এ-বাড়িকে ঘিরে কত ইতিহাস... ১৯২১-এর ২ মে এ বাড়িতেই তো সুকুমার-সুপ্রভার পুত্র, উপেন্দ্রকিশোরের পৌত্র সত্যজিতের জন্ম! নানা কারণে বাড়ির মালিকানা বদল হয় ১৯২৭-এ, ভাড়াটে হিসেবে ঠাঁই পায় একটি স্কুল অ্যাথেনিয়াম ইনস্টিটিউশন। ২০০১-এ বাড়িটি ‘হেরিটেজ’ মর্যাদা পায়। ২০০৭-এ বহু জনের সহযোগিতায় বাড়িটি কিনে নিয়ে তিন প্রজন্মের এই ঐতিহ্যবাহী ভবনটি সযত্ন রক্ষা করে চলেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ, জানালেন প্রধান শিক্ষক মনোরঞ্জন স্বর। ২০০৮-এ বসানো হয়েছে সুকুমার রায়ের অর্ধাবয়ব মূর্তি, এ বার তাঁর জন্মের ১২৫ বছর। উপেন্দ্রকিশোরের সার্ধশতবর্ষ আগামী বছর, মে মাসেই তাঁর জন্ম, আর এ বার মে মাসেই সত্যজিতের ৯২তম জন্মদিন। ৪ মে দুপুর ১টায় ভাস্কর সুনীল পালের তৈরি উপেন্দ্রকিশোর আর সত্যজিতের দু’টি অর্ধাবয়ব মূর্তি উন্মোচন করবেন যথাক্রমে ডি জি এ এস আই গৌতম সেনগুপ্ত ও রায়বাড়ির চতুর্থ প্রজন্মের সন্দীপ রায়।

চিত্রাঙ্গদা
দেড়শো বছরে পা দেওয়ার আগে থেকেই রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে কত না পরীক্ষানিরীক্ষা। ডান্সার্স গিল্ড-এর ‘চিত্রাঙ্গদা’ (ডান্স থিয়েটার) এমনই এক উদ্যোগ, যেখানে রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে আরও একটু গবেষণা করা হয়েছে। কলকাতার প্রিমিয়ার শো-টি হবে রবীন্দ্র সদনে, ২২ এপ্রিল সন্ধে সাড়ে ছ’টায়। এই চিত্রাঙ্গদায় পটের গল্পে স্টেজ সাজাচ্ছেন মেদিনীপুরের ময়না আর মালিক চিত্রকর (সঙ্গে তারই একটি নমুনা)। নৃত্য-ভাবনা ও মঞ্চ-বিন্যাসে ঐশিকা চক্রবর্তী, গিল্ড-এর বর্তমান নৃত্য-নির্দেশক জোনাকি সরকারের সঙ্গে। সংলাপ আর ভাষ্য মিলিয়ে সঙ্গীত-পরিচালনায় স্বপন পাকড়াশি। ডান্সার্স গিল্ড-এর প্রতিষ্ঠাত্রী মঞ্জুশ্রী চাকি সরকার আশির দশকে যখন প্রথম ‘চিত্রাঙ্গদা’ করেন, তখন মূল বিষয়ের বিশেষ অদলবদল করেননি, যেমনটি করেছিলেন ‘চণ্ডালিকা’ ভেঙে ‘তোমারি মাটির কন্যা’ বা তাসের দেশ থেকে ‘কোন নূতনেরই ডাকে’-তে। বরং সেই চিত্রাঙ্গদার আঙ্গিক ছিল সমকালীন, ছো, কালারিপায়াট্টু, থাং-তা আর তার সঙ্গে শাস্ত্রীয়, শাস্ত্র-বহির্ভূত শৈলীর মিশেল। কলকাতার স্টেজে তখন তা অপরিচিত, এবং ‘অন্যায়’ রকমের আধুনিক। কিন্তু গিল্ড-এর এই নবতম প্রয়াসে চিত্রাঙ্গদা অনেকটাই বদলেছে। এই উদ্যোগ মঞ্জুশ্রী ও রঞ্জাবতীর প্রতিও গিল্ডের শ্রদ্ধার্ঘ্য।

ডার্করুম
জার্মান কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে মানুষ মারার পদ্ধতিটা একটা চূড়ান্ত সফিস্টিকেশানে গিয়েছিল। তুলনায় স্তালিনের হত্যা করার পদ্ধতি ছিল ক্রুড হয় বরফের মধ্যে ছেড়ে দিত নয়তো মাথায় গুলি করত দুটো করে বুলেট আইজ্যাক ব্যাবলকে যা করা হয়েছিল। কিন্তু খুব অল্প সময়ের মধ্যে অনেকগুলো মানুষকে মেরে দেওয়ার যে-ব্যাপারটা সেটাকে একটা মাস্টারিতে নিয়ে গিয়েছিল জার্মানরা। এক আড্ডায় বলছিলেন নবারুণ ভট্টাচার্য, সঙ্গে ছিলেন রাজীব চৌধুরী গৌতম সেনগুপ্ত। সাহিত্যের মতো এমনই আরও দু’টি সিনেমা আর থিয়েটার নিয়ে আড্ডায় ছিলেন সৌমেন্দু রায় নিমাই ঘোষ দেবাশিস মুখোপাধ্যায় এবং বিভাস চক্রবর্তী দেবাশিস মজুমদার দেবেশ চট্টোপাধ্যায়। আড্ডার আয়োজন থেকে ছাপার বন্দোবস্ত ডার্করুম (সম্পা: অভীক ভট্টাচার্য) পত্রিকার, সংখ্যাটি সংগ্রহে রাখলে নতুন ভাবনার সন্ধান পেতেও পারেন পাঠক। উপরি পাওনা শঙ্খ ঘোষের আয়ওয়ায় লিখিত ব্যক্তিগত ডায়েরির অংশবিশেষ।

নাট্যোৎসব
১৯৯২-এ অত্যন্ত আর্থিক অনটনের মধ্যে বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব দেবাশিস দাশগুপ্ত প্রয়াত হন। এমন একটি মর্মান্তিক ঘটনায় সে সময় বিশিষ্ট নাট্যজনেরা তৈরি করেন ‘বঙ্গ নাট্য সংহতি’, যার উদ্দেশ্য নাট্যোৎসবের মাধ্যমে দুঃস্থ-অসুস্থ নাট্যশিল্পী-কলাকুশলীদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া। প্রায় কুড়ি বছর ধরে এই সংস্থা প্রায় ২২ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য দিয়েছেন ২২০ জন দুঃস্থ নাট্যশিল্পী ও কলাকুশলীকে। শুধু নাট্যোৎসবের মাধ্যমেই গড়া হয় তহবিল। এ বছরেও ২০-২৬ এপ্রিল রোজ সন্ধ্যায় মধুসূদন মঞ্চে নাট্যোৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। এই উৎসবে অভিনীত হবে এই সময়ের সাতটি মঞ্চসফল নাটক। থাকবেন শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি জগতের বিশিষ্ট জনেরাও।

রুদ্র বেশে কেমন খেলা
সুনামি, আয়লা, কাট্রিনা এমন সব সুন্দর সুন্দর নামের আড়ালে যে ভয়ংকর বাস্তবতা লুকিয়ে আছে, তাকে আর অস্বীকার করবার জো নেই। জলবায়ু পরিবর্তনের রাক্ষুসে চেহারাটা আমরা দেখে ফেলেছি। প্রকৃতির এই রুদ্ররোষের সামনে আমরা যে কত অসহায়, তা আমরা বুঝে ফেলেছি। বুঝিয়ে দিয়েছেন আবহবিদ আর পরিবেশবিদরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রকৃতির এই রুদ্রখেলা আমরা বন্ধ করতে পারব না, কিন্তু আগে থেকে কিছুটা সাবধান হলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণটা হয়তো কমাতে পারব। মুশকিল হচ্ছে, জলবায়ুর এই পরিবর্তন স্বাভাবিক না অস্বাভাবিক, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞ পণ্ডিতরা দু’দলে বিভক্ত। এক দিকে দ্বিধাবিভক্ত বিশেষজ্ঞজন, অন্য দিকে বিভ্রান্ত আমজনতা এঁদের মধ্যে একটা সেতু গড়তে চাইছে দিল্লির লিবার্টি ইনস্টিটিউট। এরা বিজ্ঞানের তথ্য ও তত্ত্বকে বিনা পালিশে সাধারণ মানুষের সঙ্গে ভাগ করে নিতে আগ্রহী। তাই ২১ এপ্রিল (৩-৭টা) গোখেল রোডে ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ার্স-এর প্রশস্ত সভাগৃহে জলবায়ুর পরিবর্তন নিয়ে একটি আলোচনাসভার আয়োজন করা হয়েছে। থাকবেন বিশিষ্ট আবহবিদ, প্রযুক্তিবিদ, সমুদ্রবিজ্ঞানী ও চিকিৎসকরা। প্রবেশ অবাধ।

অগ্রগতি
যাত্রা শুরু হয়েছিল বেলুড় থেকে। সম্প্রতি সে যাত্রা পূর্ণতা পেল শ্রীরামপুরের বড়বেলু গ্রামে ১২০ শয্যাবিশিষ্ট দ্বিতীয় হাসপাতালটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে। ছত্তীসগঢ়ের খনি অঞ্চলে শঙ্কর গুহনিয়োগীর নেতৃত্বে যে স্বাস্থ্য সচেতনতা আন্দোলন শুরু হয়েছিল, সেই দৃষ্টান্তকে সামনে রেখে ১৯৮৩ সালে প্রধানত শ্রমজীবীদের উদ্যোগে বেলুড়ে জাগৃতি হিন্দি স্কুলের এক চিলতে বারান্দায় শুরু হয় এই কর্মকাণ্ড। গত ২৯ বছর ধরে সঙ্গতিহীন মানুষকে স্বল্প ব্যয়ে উচ্চমানের চিকিৎসার সুযোগ করে দেওয়াই ছিল বেলুড় শ্রমজীবী স্বাস্থ্য প্রকল্প সমিতির লক্ষ্য। ধীরে ধীরে ছড়িয়েছে হাসপাতালের পরিষেবার পরিধি। চিকিৎসক সমাজের এক বড় অংশ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে নিজেদের কাঁধে দায়িত্ব তুলে নিয়েছেন। নিঃস্বার্থ শ্রমদান, আর্থিক সহায়তা আর কিছু স্বপ্ন দেখতে চাওয়া মানুষের উদ্যোগে তিল তিল করে তৈরি হয়েছে আধুনিক মানের এই হাসপাতালটি। স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে হাসপাতালের তরফ থেকে প্রকাশ করা হচ্ছে ‘শ্রমজীবী স্বাস্থ্য’ নামের ত্রৈমাসিক পত্রিকা। ছোট ছোট প্রবন্ধের সঙ্গে বিভিন্ন নিয়মিত বিভাগ, যেমন রোগ সচেতনতা, টুকরো খবর, স্বাস্থ্য পরিবেশের কথা ইত্যাদি।

শতবর্ষে
সদস্য করার জন্য পশ্চিমবঙ্গের ‘প্যারাসাইকলজিকাল সোসাইটি’-র প্রতিষ্ঠাতা ও সম্পাদক গিয়েছেন সত্যজিৎ রায়ের কাছে। পরিচালক মুগ্ধ। লিখে ফেললেন, ‘সোনার কেল্লা’। কয়েক বছর পর তাঁকেই সত্যজিৎ রায় ডাকলেন অভিনয়ের জন্য। অভিজ্ঞতা নেই, অথচ সাবলীল অভিনয় করলেন ‘মুকুল’-এর দাদুর ভূমিকায়। পরে অভিনয় করেন জয় বাবা ফেলুনাথ, জন অরণ্য, ঘরে বাইরে, হীরক রাজার দেশে এবং মৃণাল সেনের খারিজ-এ। তিনি বিমলচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। ভবানীপুরের বিখ্যাত চট্টোপাধ্যায় পরিবারে জন্ম। ব্যারিস্টার নির্মলচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ভাই। প্রথম জীবনে শ্যামাপ্রসাদের অনুগামী হলেও রাজনীতি করেননি। সমস্ত বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারতেন। শখ ছিল দুষ্প্রাপ্য জিনিস সংগ্রহ। স্মৃতিচারণায় সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বলেছেন, পরিণত বয়সে অভিনয়ে এলেও দক্ষ অভিনেতা ছিলেন। কণ্ঠস্বরে ফুটে উঠত ব্যক্তিত্ব। তাঁর শতবর্ষ উপলক্ষে গোর্কি সদনে ২১ এপ্রিল সন্ধে ছটায় বিমলচন্দ্র স্মৃতি সম্মান জানানো হবে সন্দীপ রায়, শুভাশিস মুখোপাধ্যায়কে। পর দিন প্রয়াত শিল্পীর ওপর আলোকচিত্র ও প্রদর্শনীরও আয়োজন করা হয়েছে। আয়োজনে ‘কিঞ্জল’ পত্রিকা ও আইজেনস্টাইন সিনে ক্লাব।

অভিনেত্রী
অভিনেত্রী না ক্রীড়াবিদ? বাঙালির কাছে পরিচিত তিনি প্রথম পরিচয়টিতেই। অনেকেই হয়তো জানেন না, তিনি জাতীয় ভলিবল এবং বাস্কেটবল চ্যাম্পিয়ন, জাগলিং-এও পারদর্শী ছিলেন। খেলার সূত্রেই বহু বার বিদেশ যাওয়া। থাকতেন ইলাহাবাদে। বিয়ের পর কলকাতা। খেলায় ছেদ পড়লেও শুরু করেন সাঁতার ও অভিনয়। পাড়ার নাটকে হাতেখড়ি। অ্যামেচার দল ‘কথাকলি’তে তাঁর অভিনীত ‘নূরজাহান’ চরিত্রটি প্রশংসিত হয়। নাটক করেছেন উৎপল দত্ত ও শম্ভু মিত্রের সঙ্গে। বড় পর্দায় প্রথম অভিনয় ‘দক্ষযজ্ঞ’-এ। আর ডি বনশল তখন খুঁজছেন ‘লোলা বোস’কে। মীনাক্ষি গোস্বামীকে পছন্দ হয়। প্রথম দেখা যায় ‘ওগো বধূ সুন্দরী’-তে লোলা বোসের ভূমিকায়। অভিনীত ছবি প্রায় ষাটটি। অভিনয় করেছেন ছোট পর্দা ও যাত্রায়। নির্দেশনা দিয়েছেন বহু ওয়াটার ব্যালে। তবে সঙ্গী ছিল পেসমেকার। তিন বার বসানো হয়েছিল। সম্প্রতি আবার পেসমেকার বসানো হয়। এ বার আর পারলেন না। ৮ এপ্রিল চলে গেলেন।

প্রেম ও প্রয়াণ
কালবৈশাখীর দাপটে চৈত্রদিনের ঝরাপাতা উড়ে গেলেও বসন্ত বিলীন হয় না! কলকাতায় তাই ফিল্মোৎসব: ‘ইয়োরোপ ইন লাভ’। ভালবাসা বা সম্পর্কের খুঁটিনাটিতে উঠে আসছে ইয়োরোপের সমাজ-সংস্কৃতির চেহারা এমন বাছাই ২৫টি ছবি নিয়ে ইয়োরোপিয়ান ইউনিয়ন-এর সদস্য দেশগুলির ১৭তম উৎসব নন্দন আর ম্যাক্সমুলার ভবনে, ২০-২৮ এপ্রিল। উদ্যোগে সিনে সেন্ট্রাল। অন্য দিকে সত্যজিতের প্রয়াণদিবস ২৩ এপ্রিল বিকেলে ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ দেখানোর আয়োজন নন্দন-এর। সত্তরের সে ছবিতে কেয়াকে লেখা সিদ্ধার্থর চিঠি যেন দমকা হাওয়া প্রেমের: ‘সবচেয়ে বেশি তোমার কথাই মনে পড়ছে; অথচ তোমার সঙ্গে আর কদ্দিনেরই বা আলাপ’। ছবিটি দেখানর আগে দর্শকের মুখোমুখি হবেন সেই সিদ্ধার্থ ওরফে ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়। আর ছবিটি নিয়ে বলবেন সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়।

স্বভাবত স্বতন্ত্র
তাঁর কাজ স্বভাবত স্বতন্ত্র। মিতবাক। বর্ণ-চয়নে সংযমী। অথচ, অভিঘাতে বিপুল। কারণ, হিরণ মিত্রের তূণে ব্রহ্মাস্ত্রটির নাম, পরিভাষায়, ‘কম্পোজিশন’। প্রতিকৃতি অঙ্কনে দক্ষ বটে, কিন্তু শিল্পকলায় তিনি মুখ্যত বিমূর্ত পথেই হাঁটেন। বিড়লা অ্যাকাডেমিতে, ১৮ এপ্রিল, শুরু হচ্ছে তাঁর বিপুল একক প্রদর্শনী, ‘আর্বানিয়া’। নগর জীবনের কিছু ‘ফর্ম’ বা আকার, কখনও দৃশ্যমান, কিছু আবার লুপ্ত, দেখা দিচ্ছে তাঁর কাজে। রং জাগিয়ে তুলছে অনুভূতি। সঙ্গে আছে হরফের মতো কিছু আখর। তারাও তো ‘ফর্ম’! চিত্রপটের বাকিটুকু জুড়ে কখনও বড়, কখনও ছোট শূন্যতা! বিচিত্র এই শূন্যতার ভাষা হিরণ মিত্রের শিল্পের আরও একটি মহৎ পরিচয়। কী ভাবে জাগিয়ে তোলেন তিনি, শূন্য পরিসরের সঙ্গে বিভিন্ন আকারের সংলাপ। উত্তর দেবে ‘আর্বানিয়া’, ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত। সঙ্গে প্রদর্শনীরই একটি ছবি।

শ্রুতিস্মৃতি
ঝটিতি সফরে এ শহর ঘুরে গেলেন রুমা গুহঠাকুরতা। এখন থাকেন মুম্বইয়ে, পুত্র অমিতকুমারের বাড়ি গৌরীকুঞ্জে। কয়েক বছর পরে ফের তাঁকে দেখা গেল মঞ্চে। ক্যালকাটা ইউথ কয়্যারের ৫৪তম বার্ষিক অনুষ্ঠানে রীতিমতো সঙ্গীত পরিচালনা করলেন। কিন্তু শুধু পরিচালনাতেই কি ভরে এ শহরের মন? ‘লুকোচুরি’র সেই দ্বৈত রবীন্দ্রসঙ্গীতে কিশোরকুমার আর হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে মুগ্ধ করেছেন যিনি, তার পরে ‘পলাতক’, ‘বাঘিনী’, ‘বেনারসী’র মতো বহু ছবির গান ছাড়াও বেসিক রেকর্ডে যাঁর অনেক গান অমর হয়ে আছে তাঁর কণ্ঠ শুনল কলকাতা, এই আশি ছুঁইছুঁই বয়সেও। মনে পড়ল আরও এক বার তাঁর সেই স্নিগ্ধ অভিনয়। তবে শুধু গানই নয়, শোনালেন গান তৈরির গল্পও। যেমন পল রোবসনের গান ভেঙে ভূপেন হাজারিকার সঙ্গে ‘বিস্তীর্ণ দুপারে...’ তৈরি। গাইলেন কয়্যারের আরও বেশ কয়েকটি গান। তার পরে ফিরে গেলেন মুম্বইয়ে, এখন যা তাঁর নিজ বাসভূমি। যাওয়ার আগে জাগিয়ে দিয়ে গেলেন সেই বহু পূর্ব যুগের শ্রুতিস্মৃতি। সঙ্গে তাঁর ছবি, হীরক সেনের ক্যামেরায়।

শিল্প-রসিক
আই এ এস পরীক্ষায় (১৯৫৬) নাম ছিল প্রথম সারিতে। বাংলা সংবাদপত্রে বড় করে খবরও হয়েছিল। সেটা স্বাভাবিক, কারণ নামটা ব্রিজেন্দ্রনাথ গোস্বামী। আসলে কিন্তু তিনি পশ্চিম পঞ্জাবের মানুষ, পাঁচশো বছর আগে চলে যাওয়া কোনও বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের সন্তান। এই মুহূর্তে দেশের প্রথম সারির শিল্প-ঐতিহাসিকদের অন্যতম এই পণ্ডিত চণ্ডীগড়ের পঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্প-ইতিহাস বিভাগের এমেরিটাস অধ্যাপক। পড়িয়েছেন জুরিখ, হাইডেলবার্গ, ক্যালিফর্নিয়ার মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্বের বহু জায়গায় ভারতীয় শিল্প, বিশেষত মিনিয়েচার ছবির বিখ্যাত নানা প্রদর্শনী তাঁরই পরিকল্পনায় আয়োজিত হয়েছে। তবে সম্প্রতি জুরিখে ভারতীয় চিত্রকলার এক অনন্য প্রদর্শনীর অন্যতম স্থপতি ছিলেন তিনি। এবেরহার্ড ফিশার এবং মিলো ক্লিভল্যান্ড বিচ-এর সঙ্গে ‘দি ওয়ে অব দি মাস্টার-- দি গ্রেট আর্টিস্টস অব ইন্ডিয়া ১১০০-১৯০০’ শীর্ষক এই প্রদর্শনীতে তিন বিশেষজ্ঞ দেখাতে চেষ্টা করেছেন ভারতীয় ঐতিহ্যের সবটাই ‘নামহীন’ শিল্পকর্ম নয়। মাস্টার্স অব ইন্ডিয়ান পেন্টিং নামে এই প্রদর্শনীর ক্যাটালগটিও ওঁরা তিনজন সম্পাদনা করেছেন (নিয়োগী বুকস)। অধ্যাপক বি এন গোস্বামী সম্প্রতি কলকাতায় এসেছিলেন ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে শক্তি বর্মনের প্রদর্শনী উপলক্ষে শিল্পীর সঙ্গে কথোপকথনের এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে। স্পষ্টই বললেন, জুরিখের মতো প্রদর্শনী ভারতে করা প্রায় অসম্ভব, প্রশাসনিক দীর্ঘসূত্রিতাই প্রধান বাধা। নৈশভোজে মোচার চপ খেয়ে তাঁর বিস্ময় প্রকাশও ছিল একই রকম অকৃত্রিম।
   


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.