স্কুলছাত্রীকে ‘উত্ত্যক্ত’ করার প্রতিবাদ করায় ‘হামলা’ হল তার পরিবারের উপরে। উত্তর দিনাজপুরের কালিয়াগঞ্জ থানার ফতেপুর এলাকার ওই কিশোরীর কাকাকে কুপিয়ে খুন করে পালানোর অভিযোগ উঠল পড়শি অষ্টম শ্রেণির এক ছাত্রের বিরুদ্ধে।
বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনা। পুলিশ জানায়, নিহতের নাম নিখিল সরকার (৩৫)। হাঁসুয়ার আঘাতে জখম হয়ে কিশোরীর বাবা যামিনী সরকার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। হামলায় অভিযুক্ত অভিজিৎ রায় ও তার পরিবার এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে।
কালিয়াগঞ্জ থানার আইসি অভিজিৎ দাস বলেন, “প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য অভিজিৎ দীর্ঘ দিন ধরে প্রতিবেশী কিশোরীকে উত্ত্যক্ত করছিল বলে অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ, ঘটনার প্রতিবাদ করায় কিশোরটি হাঁসুয়া দিয়ে যামিনীবাবুর উপরে হামলা করে। দাদাকে বাঁচাতে গিয়ে হাঁসুয়ার কোপে নিখিলবাবুর মৃত্যু হয়। অভিজিৎ ও তার পরিবারের খোঁজ চলছে।” |
পেশায় ইটভাটার কর্মী যামিনীবাবুর দুই ছেলে, দুই মেয়ে। তাঁর বড় মেয়ে স্থানীয় ফতেপুর হাই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। পার্বতীসুন্দরী হাই স্কুলে একই শ্রেণিতে পড়ে অভিজিৎ। যামিনীবাবুদের দু’টি বাড়ি পরেই তার বাড়ি। তার বাবা রমেন রায় অসম রাইফেলসের কর্মী। নিখিলবাবু অবিবাহিত। তিনি কাজ করতেন ইটভাটায়। থাকতেন যামিনীবাবুর পাশের বাড়িতে। যামিনীবাবুর অভিযোগ, প্রায় এক বছর আগে তাঁর বড় মেয়েকে অভিজিৎ প্রেমের প্রস্তাব দেয়। মেয়েটি রাজি না হওয়ায় বছর ষোলোর ছেলেটি তাকে ‘উত্ত্যক্ত’ করতে শুরু করে।
পুলিশ সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার রাত ৯টা নাগাদ ওই কিশোরী বাড়িতে নিজের ঘরে পড়ছিল। সেই সময় টিনের চালার ফাঁকা দিয়ে অভিজিৎ ‘আপত্তিকর’ ছবি-সহ একটি চিঠি ছুড়ে দেয় বলে অভিযোগ। কিশোরী চিৎকার জুড়লে অভিজিৎ পালায়। যামিনীবাবু অভিজিৎদের বাড়িতে গিয়ে ওই কিশোরের মা স্বপ্নাদেবীকে ব্যাপারটা জানান। যামিনীবাবুর দাবি, ফেরার পথে তাঁর সঙ্গে অভিজিতের দেখা হয়। কেন সে তাঁর মেয়েকে ‘উত্ত্যক্ত’ করছে জানতে চান তিনি।
অভিযোগ, কথার জবাব না দিয়ে অভিজিৎ আচমকা এক দৌড়ে বাড়িতে ঢুকে হাঁসুয়া বার করে যামিনীবাবুকে কোপাতে শুরু করে। তাঁর দুই হাতে ও পেটে চোট লাগে। চিৎকার শুনে নিখিলবাবু ছুটে গিয়ে দাদাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। অভিযোগ, সেই সময় অভিজিৎ আচমকা নিখিলবাবুর গলায় কোপ মেরে পালায়। স্থানীয় বাসিন্দারা দু’ভাইকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় কালিয়াগঞ্জ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসকেরা নিখিলবাবুকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। শুক্রবার যামিনীবাবুর দাদা শ্রীমন্ত সরকার কালিয়াগঞ্জ থানায় অভিজিতের বিরুদ্ধে খুন এবং হামলার অভিযোগ দায়ের করেন।
যামিনীবাবুর বক্তব্য, “মেয়েকে কেন উত্ত্যক্ত করছে জানতে চাওয়ায় ছেলেটা এ ভাবে হামলা চালাবে ভাবতে পারিনি! তবে কি খারাপ কাজের প্রতিবাদ করা যাবে না!” |