শ্রমিক বস্তির ঘরে-ঘরে হাহাকার। দুবেলা খাবার জোটাই দায়। চিকিৎসা পরিষেবাও মিলছে না। মৃত্যুর সঙ্গে ধুঁকছেন বেশ কয়েকজন। এক মাস ধরে অচল ডুয়ার্সের মালবাজার মহকুমার মানাবাড়ি চা বাগানের হাল সংক্ষেপে এমনই। ওই অচলাবস্থা কাটাতে পারেনি প্রশাসন। চা বাগানের প্রায় ৬৫০ জন শ্রমিক ও কর্মী চরম দুরবস্থায় পড়েছেন। কয়েক দফায় ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হলেও জট খুলছে না কেন তা নিয়ে উদ্বিগ্ন সকলেই। মালবাজারের মহকুমা শাসক দেবযানী ভট্টচার্য বলেন, “অবিলম্বে ফের মানাবাড়ির বিষয়ে বৈঠক ডাকা হবে। ব্লক অফিসের মাধ্যমে যাতে জরুরি ভিত্তিতে সাহায্য করা যায় তা দেখা হচ্ছে।”
বাগান সূত্রের খবর, গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে শ্রমিক-কর্মীদের বেতন বন্ধ বলে অভিযোগ। কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে কাজ না-হওয়ায় গত ১৩ মার্চ থেকে একযোগে বাগানের ৬৫০ শ্রমিক ও কর্মীরা কর্মবিরতি শুরু করেন। |
মালবাজারের সহকারী শ্রম কমিশনারের দফতরে প্রথমে মানাবাড়ি চা বাগান নিয়ে বৈঠক করা হয়। সেখানে সুরাহা হয়নি। পরে মহকুমা শাসকের দফতরে ত্রিপাক্ষিক বৈঠকও করা হয়। তাতেও জট কাটেনি। সেখানেও কোন বৈঠকেই বাগানের মালিকপক্ষের কেউ না যোগ দেওয়ায় আর্থিক বকেয়া মেটানোর আশ্বাস শ্রমিকরা পাননি। বাগান বন্ধের ব্যাপারে মালিক পক্ষ উদ্যোগী না হওয়ায় সমস্যা আরও বেড়েছে। গত এক মাস কী ধরে কী ভাবে চলছে মানাবাড়ির চা শ্রমিকদের? বাগানের লোকজনেরা জানান, প্রায় বিনা চিকিৎসায় মারা গিয়েছেন মানাবাড়ি চা বাগানের টপ লাইনের শ্রমিক শুক্রা লোহার (৩৫)। বাসিন্দারা জানালেন, বাগানে কোন স্বাস্থ্য পরিষেবা মেলে না ৩ কিলোমিটার দূরের ওদলাবাড়ি গ্রামীন হাসপাতালে সাইকেলে বসিয়ে কিংবা ভ্যান রিক্সায় করে রোগী নিয়ে যেতে হয়। এখন বাগান বন্ধ থাকায় সে টুকুও অনেকে পারছেন না। টপ লাইনের আরেক বাড়িতে দেখা গেল উঠোনে মরণাপন্ন অবস্থায় পড়ে রয়েছেন বছর পঞ্চাশের বাজের মুন্ডা ও তাঁর স্ত্রী জোহানি মুন্ডা। দুজনেই বাগানের শ্রমিক। তাঁরা বললেন, “ঘরে টাকা নেই। কী ভাবে ওদলাবাড়ি গিয়ে চিকিৎসা করাব জানি না।” পাশেই থাকেন অনিতা লোহার। তাঁর শ্রমিক আবাসের ঘরের চাল দিয়ে বৃষ্টির জল ঢুকছে। জোরে হাওয়া হলে পুরো চালটাই উড়ে যেতে পারে আশঙ্কা। অনিতা বললেন, “দুবেলা খাবার জোটাই মুশকিল হয়ে পড়েছে।” চা বাগানে গিয়ে ম্যানেজার কে পাওয়া যায়নি। বন্ধ অফিসে গিয়ে গত ৭ এপ্রিল তারিখে সাঁটানো নোটিশে লেখা রয়েছে, গত ১৩ মার্চ থেকে যারা কাজে আসছেন না তাদের লিখিত ভাবে কারণ দর্শাতে হবে। অন্যথায় কড়া পদক্ষেপ করা হবে। চা বাগান মালিকদের অন্যতম সংগঠনের জলপাইগুড়ি শাখার উপদেষ্টা অমিতাংশু চক্রবর্তী বলেন , “মানাবাড়ি চা বাগানে এখন কাজ রয়েছে। নতুন পাতা তোলা হয়নি। শ্রমিকরা কাজে যোগ না-দিলে বাগানটির ক্ষতি হয়ে যাবে।” |