নিজস্ব সংবাদদাতা • শিলিগুড়ি |
উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগমের (এনবিএসটিসি) অব্যবহৃত জমির সঠিক ব্যবহার করে সংস্থার আয় বাড়ানোর হবে বলে ঘোষণা করলেন এনবিএসটিসি’র নতুন চেয়ারম্যান তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। বৃহস্পতিবার বিকালে রাজ্য পরিবহণ দফতরের নির্দেশে এনবিএসটিসি চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব নিয়েছেন গৌতমবাবু। দায়িত্ব নেওয়ার ২৪ ঘন্টার মধ্যেই শুক্রবার সকালে শিলিগুড়িতে তিনি সংস্থার ম্যানেজিং ডিরেক্টর সি মুরুগনের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের আধিকারিকেরাও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকের পর গৌতমবাবু বলেন, “এনবিএসটিসি’র উন্নতি হলে উত্তরবঙ্গেরও তো উন্নতি হবে। মূলত আর্থিক সমস্যা থেকেই আমাদের বার হতে হবে। এর জন্য নানা পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। অব্যবহৃত জমির ব্যবহার এর অন্যতম। উল্টোডাঙা, ডালখোলা, তিনবাতি, ময়নাগুড়ি-মত এলাকায় সংস্থার জমি রয়েছে। রাজ্য পরিবহণ দফতরের অনুমতিক্রমে সেগুলিকে ব্যবহার করে আয়ের রাস্তা বার করতে হবে। সেখানে পিপিপি মডেল বা নিজেই নানা প্রকল্প নেওয়া হবে” মন্ত্রী জানান, উল্টোডাঙায় জমিটি প্রায় ৪০০ কোটি টাকা দাম। বাম আমলে তা সংস্থায় একটি সংস্থাকে দেওয়া হয়। এই নিয়ে মামলা চলছে। দ্রুত মামলার নিষ্পত্তির জন্য আইনি দফতরের পরামর্শ নেওয়া হবে। |
ডালখোলায় জমি পুরসভা ব্যবহার করছে। কিন্তু কোনও টাকা দিচ্ছে না। এগুলি সবই দেখা হচ্ছে। মন্ত্রীর কথায়, “আগামী ২২ এপ্রিল কোচবিহারে যাচ্ছি। শ্রমিক সংগঠন, কর্মী-অফিসারদের সঙ্গে কথা বলব। এরমধ্যে এমডিকে একটি স্ট্যাটাস রিপোর্ট তৈরি করতে বলেছি। তার পরে এক এক করে প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে।” এনবিএসটিসি সূত্রের খবর, বর্তমানে রাজ্য সরকারকে নিগমকে ৪ কোটি টাকা ভর্তুকি দিচ্ছে। কিছুদিন আগেও এই পরিমাণ ছিল ৫ কোটি। ইতিমধ্যে রাজ্য সরকারের তরফে ব্যায় সঙ্কোচ করে সংস্থাকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, যে কোনও ভর্তুকি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। মন্ত্রী বলেন, “গত কয়েক মাসে এক কোটি টাকা মাসে ক্ষতি কমেছে। সবাইকে নিয়ে পুরোটাই কমাতে হবে। সংস্থার গত ১০ বছরের কাজকর্ম নিয়ে একটি স্পেশাল অডিট করানো হচ্ছে। লাভজনক রুটে আরও অতিরিক্ত বাস চালাতে হবে। সংস্থাকে ঘুরে দাঁড় করাতে তামিলনাড়ুর বিশেষজ্ঞরা নানা মতামত দিয়েছেন। আমরা দিল্লি পরিবহণ সংস্থার সঙ্গেও যোগাযোগ করেছি। তাঁরা রিপোর্ট দেবেন।” নতুন রাজ্য সরকার ক্ষমতায় আসার পর এনবিএসটিসি’র চেয়ারম্যান হন রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। গত দশ মাসে রবীন্দ্রনাথবাবুর নেতৃত্বে পরিচালন বোর্ড একাংশ অস্থায়ী কর্মীকে ছাঁটাই, বদলি নীতি পুরোপুরি কার্যকরী করার সিদ্ধান্ত নেন। যা নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনার ঝড়ও ওঠে। বদলির ক্ষেত্রে ওই নীতির মেনে চলা হবে বলে এদিন নতুন চেয়ারম্যান জানান। গৌতমবাবু বলেন, “তিন বছরের বেশি এক জায়গায় থাকা যাবে না। কর্মীদের বদলি হতেই হবে। এই ক্ষেত্রে কোনও বৈষম্য থাকবে না। সবার ক্ষেত্রে একই নিয়ম মানা হবে। এ ছাড়া একাংশ কর্মীকে গত ৩৪ বছরে পদোন্নিত দেওয়া হয়েছে। এর ঠিকঠাক কাগজপত্র নেই। এরজন্য মাসে সংস্থার ৬০ লক্ষ টাকা খরচ হচ্ছে। নিরপেক্ষ কোনও সংস্থাকে দিয়ে বিষয়টি দেখা হবে।” এনবিএসটিসি’র চেয়ারম্যান জানান, কেন্দ্রীয়ভাবে মালপত্র কেনা, তেল সাশ্রয় এবং ব্যায় সঙ্কোচ, সঠিক পদ্ধতিতে সমস্ত কিছুর টেন্ডার, শিলিগুড়ি ডিপোর সামনে থেকে বেসরকারি বাসের রমরমা বন্ধ করা, বাসে বাসে টিকিটের স্পেশাল চেকিং মত বিষয়গুলিতে জোর দেওয়া হবে। বিষয়গুলি নিয়ে এদিন এমডির সঙ্গে কথা হয়েছে। এদিন দুপুরেই প্রাক্তন চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথবাবু নতুন চেয়ারম্যানকে টেলিফোন করে শুভেচ্ছা জানান। গৌতমবাবু বলেন, “ওঁর সঙ্গে আমার খুব ভাল সম্পর্ক। চেয়ারম্যান বদলের সিদ্ধান্ত সরকারি সিদ্ধান্ত। এটা ব্যত্তিগত কিছু নয়। ২২ এপ্রিল কোচবিহারে ওঁর বাড়িতে আমরা যাওয়ার কথা রয়েছে।” |