রাতে মামার বাড়িতে ঘুমোতে গিয়েছিল দীপক। সকালে বাড়ি ফিরে দেখে, রক্তে ভেসে যাচ্ছে ঘর। তারই মধ্যে পড়ে মায়ের মুণ্ড-কাটা দেহ। ওই দৃশ্য দেখে অসুস্থ হয়ে পড়ে বছর পনেরোর ছেলেটি। শুক্রবার ঘটনাটি ঘটেছে সন্দেশখালির ১০ নম্বর দক্ষিণ কানমারি গ্রামে। পুলিশ কুকুর আনা হলেও কাটা-মুণ্ডর হদিস করা যায়নি। উদ্ধার হয়েছে একটি রক্তমাখা ভোজালি। খুনের কারণ নিয়ে পুলিশ ধন্ধে। বসিরহাটের এসডিপিও আনন্দ সরকার বলেন, “একটি খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে।” দেহ পাঠানো হয়েছে ময়না-তদন্তে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর বারো আগে শুভদ্রা খারবিন (৩৬) নামে আদিবাসী ওই মহিলার বিয়ে হয়েছিল সন্দেশখালির দুর্গামণ্ডপ গ্রামে। কয়েক দিনের মধ্যে স্বামীর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। পরে ফের বিয়ে করেন শুভদ্রা। সেই সম্পর্কও বেশি দিন টেঁকেনি। বছর ছ’য়েক ধরে দু’জন এক সঙ্গে থাকেন না। বানতলার এক মহিলাকে বিয়ে করে সেখানেই থাকতেন ওই ব্যক্তি। তবে শুভদ্রার সঙ্গে সম্পর্ক পুরোপুরি ছিন্ন হয়নি। যাতায়াত ছিল।
শুভদ্রা দিনমজুরির কাজ করতেন। সম্প্রতি ঝুপড়ির পিছন দিকে অ্যাসবেস্টসের ছাউনির পাকা ঘর তৈরি করেন। পয়লা বৈশাখ সেখানেই ওঠার কথা ছিল তাঁর। শুভদ্রার দ্বিতীয় পক্ষের এক ছেলে ও এক মেয়ে। ছেলে দীপক থাকত মায়ের সঙ্গেই। মেয়ে টুম্পার বিয়ে হয়েছে পাশের গ্রামে। দীপক জানায়, কাছেই মামার বাড়ি। বৃহস্পতিবার রাতে সেখানে শুতে গিয়েছিল সে। শুক্রবার সকালে এসে দেখে, চটার বেড়া দেওয়া দরজার চৌকাঠের এক পাশে মায়ের মুণ্ডহীন দেহ পড়ে আছে। তার চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। খবর দেওয়া হয় পুলিশকে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, প্রথমে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছিল ওই মহিলাকে। পরে ধারাল অস্ত্র দিয়ে মাথা কেটে ফেলা হয়।
নিহত মহিলার পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, বৃহস্পতিবারই এক প্রতিবেশীর সঙ্গে শুভদ্রার তুমুল ঝগড়া হয়। সে সময়ে এক ব্যক্তি শুভদ্রার ‘মুণ্ড কেটে নেওয়ার’ হুমকি দিয়েছিলেন। পুলিশ বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। তদন্তকারী অফিসারেরা স্থানীয় সূত্রে জানতে পেরেছেন, একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে মেলামেশা ছিল শুভদ্রার। তা ‘ভাল চোখে’ দেখতেন না তাঁর দ্বিতীয় স্বামী। শুভদ্রার দাদা বর্ণ বিষয়ী বলেন, “কারা এই কাণ্ড ঘটাল বুঝতে পারছি না। যারা এমন নৃশংস ভাবে খুন করেছে আমার বোনকে, তাদের কঠোর শাস্তি চাই।” |