|
|
|
|
সরভাজা-সরপুরিয়া ‘রেসিপি’ জানাতে চায় না কৃষ্ণনগর |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কৃষ্ণনগর |
ঘরের দরজা-জানলা বন্ধ। খুব গোপনে পাক তৈরি হচ্ছে। এটাই রীতি। কারণ, মিষ্টি তৈরির এই গোপন পদ্ধতি যেন ফাঁস না হয়ে যায়। কিন্তু সে খবর ঠিকই ছড়িয়ে পড়ত শহরে। কথিত রয়েছে, মাছির ঝাঁক তখন ঘিরে ধরত অধরচন্দ্র দাসের বাড়ি। কৃষ্ণনগরের বিখ্যাত সরপুরিয়া ও সরভাজা তখন তৈরি হচ্ছিল তাঁর সেই ঘরে।
এই মিষ্টি কিন্তু খুব বেশি প্রাচীন নয়। মাত্র একশো বছর আগের কথা। তখনই এই মিষ্টিকে ঘিরে কৃষ্ণনগরের আরও একটি পরিচয় তৈরি হচ্ছিল আস্তে আস্তে। তারপরে সেই মিষ্টি সত্যিই কৃষ্ণনগরের বৈশিষ্ট্য হয়ে ওঠে। মাটির পুতুল, জগদ্ধাত্রী পুজো, মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের পরিবারের কথার সঙ্গে সঙ্গে সরপুরিয়া, সরভাজার কথাও ছড়িয়ে পড়ছিল। দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে সে কথা বাইরেও ছড়িয়ে পড়ে। নানা দোকানেই তৈরি হতে থাকে সরপুরিয়া, সরভাজা। শহরের নেদেরপাড়ায় অধরবাবুর পরিবারের লোকেরাই দু’টি মিষ্টির দোকান করেন। কার হাতের মিষ্টি ভাল, তাই নিয়ে তর্কাতর্কিও ছিল স্বাভাবিক। শহরের আরও কিছু দোকানেও এই মিষ্টি তৈরি করা শুরু হয়ে যায়। সিনেমা, সাহিত্যেও এই মিষ্টি নিজের স্থান করে নেয়। |
|
|
কিন্তু এখন আর সেই গন্ধ পান কি? কৃষ্ণনগরের মানুষ জানান, এই মিষ্টি তৈরি হওয়ার সেই গন্ধ আর নেই। সেই স্বাদই বা কোথায়? তবু এত বছর পরেও এই দুই মিষ্টির বিকল্প মেলা ভার। কৃষ্ণনগরের মানুষের দাবি, এখনও যখন শহরে বাইরে থেকে কেউ এসে এই মিষ্টি খান, এখনও তাঁরা আগের মতোই মুগ্ধ হয়ে যান। তারপরে শুরু হয় স্বাদের তারতম্য নিয়ে বিতর্ক।
যে কোনও অনুষ্ঠানের সময়েই এই দুই মিষ্টিরই কদর বাড়তে থাকে। নববর্ষের সময়েও তার ব্যতিক্রম হয় না। এ বারেও চড়চড় করে বেড়েছে মিষ্টির দাম। শহরের প্রায় দেড়শোটি মিষ্টির দোকানে কিন্তু নিখুতি, ক্ষীরের পুলির মতো মিষ্টির পাশাপাশি রয়েছে সাবেকি সন্দেশ, রসগোল্লার থেকে সরপুরিয়া, সরভাজার চাহিদা এখনও বেশি।
কিন্তু চাহিদার তুলনায় ছানার জোগান কম। দামও ক্রমশ তাই বাড়ছে। উৎসবের সময়ে চাহিদার তুলনায় জোগান আরও কমে যায়। পশ্চিমবঙ্গ মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী সমিতির নদিয়া জেলা সভাপতি গৌতম দাস বলেন, “পয়লা বৈশাখের সময় মিষ্টির চাহিদা অনেকটাই বেড়ে যায়। ফলে অনেক আগে থেকেই আমাদের ছানার জোগানও তৈরি রাখতে হয়।” তবে ছানার দাম বাড়ায় মিষ্টিরও দাম বাড়ে। গৌতমবাবু বলেন, “সরপুরিয়া, সরভাজা তৈরির প্রকৃত পদ্ধতি কিন্তু এখনও সবাই জানেন না। তাই সব দোকানে এই মিষ্টি বিক্রি হলেও গুণগত মানে টেক্কা দিয়ে যায় মাত্র কয়েকটি দোকানই।” গৌতমবাবু বলেন, “কিন্তু কী ভাবে এই কৃষ্ণনগরের সরভাজা বা সরপুরিয়া তৈরি হয়, তা কোনও কারিগরই বলবেন না। তবে অন্যত্র যে সরভাজা পাওয়া যায়, তা কৃষ্ণনগরের পদ্ধতি মেনে হয় না।” |
|
|
|
|
|