সম্পাদকীয় ১...
উদ্দেশ্য ও বিধেয়
দ্দেশ্য মহৎ হইলেই কি সিদ্ধান্ত বিধেয় হয়? ছাত্রছাত্রীদের চৌদ্দো বছর বয়স তথা অষ্টম শ্রেণি অবধি আসনের সিকিভাগ দরিদ্র শিশুদের জন্য সংরক্ষিত রাখিতে হইবে সুপ্রিম কোর্টের এই রায়ের লক্ষ্য লইয়া কোনও প্রশ্ন নাই। সমস্ত শিশু যাহাতে শিক্ষার সুযোগ পায়, তাহা নিশ্চিত করা অবশ্যই জরুরি। তিন বছরে আগে শিক্ষার অধিকার আইন সেই লক্ষ্যেই প্রণীত হইয়াছিল। সর্বজনীন শিক্ষার জন্য আইন প্রণয়ন শ্রেষ্ঠ পন্থা কি না, তাহা লইয়া তর্ক থাকিতে পারে, কিন্তু সেই তর্ক অন্যত্র। অতীতে সুপ্রিম কোর্টের প্রদত্ত অভিমত অনুসারে শিক্ষার অধিকারকে যদি জীবনের অধিকারের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ বলিয়া স্বীকার করা হয়, তাহা হইলেও সেই অধিকার নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কাজ। কিন্তু মহামান্য আদালতের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা পোষণ করিয়াও একটি প্রশ্ন পেশ করা জরুরি: বেসরকারি বিদ্যালয় কেন এই কাজের দায় লইতে বাধ্য থাকিবে? শিক্ষাকে একটি ‘চ্যারিটি’ বা দাক্ষিণ্য হিসাবে চিহ্নিত করিলে এক অর্থে কোনও ভুল হয় না, কিন্তু উহাই শিক্ষার একমাত্র অর্থ এবং যে শিক্ষা দান করিবে তাহাকে কেবল দাক্ষিণ্য হিসাবেই সেই কাজ সম্পাদন করিতে হইবে, শিক্ষাদান কথাটিকে সর্বদা তাহার আক্ষরিক অর্থেই গ্রহণ করিতে হইবে, এই অভিমত মানিয়া লওয়া কঠিন নয় কি?
সত্য, ভারতীয় বিধিতে স্কুল চালাইবার উদ্যোগ একটি ‘নন-প্রফিট’ বা মুনাফা-বহির্ভূত উদ্যোগ হিসাবে নির্ধারিত। কিন্তু তাহার একটি নির্দিষ্ট অর্থ আছে, কিছু নির্দিষ্ট শর্ত আছে। সেই শর্তগুলি কোনও প্রতিষ্ঠান না মানিলে আইন তাহার পথে চলিবে, ইহাই প্রত্যাশিত। কিন্তু দরিদ্র ছাত্রছাত্রীদের জন্য সংরক্ষণের বাধ্যবাধকতা তো সেই শর্তাবলির অঙ্গ নহে, একটি ভিন্ন দায় এবং ভিন্ন ধরনের দায়। এই দায় বহন করিতে হইলে স্কুলের পঠনপাঠনের গুণমান ক্ষতিগ্রস্ত হইবে, এমন আশঙ্কা অমূলক বা অযৌক্তিক নহে। প্রথমত, পঠনপাঠনের গুণমানের সহিত অর্থসংস্থানের একটি প্রত্যক্ষ সম্পর্ক রহিয়াছে। শিক্ষকের বেতন হইতে শুরু করিয়া স্কুলের পরিকাঠামো ও সরঞ্জাম, সব কিছুর ক্ষেত্রেই সেই সম্পর্ক জোরদার। দ্বিতীয়ত, ব্যয় কম রাখিয়া সংরক্ষণের দায় মানিবার তাগিদে যদি স্কুলে পড়ুয়ার সংখ্যা বাড়ানো হয়, তাহা হইলেও অল্প শিক্ষকের উপর অধিক পড়ুয়ার চাপ পড়িবে, তাহাতেও গুণমানের ক্ষতি। এ দেশে শিক্ষার মান লইয়া রীতিমত সমস্যা রহিয়াছে, ‘ভাল স্কুল’-এর সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্ত অপ্রতুল। শিক্ষার বিস্তারের জন্য যদি শিক্ষার উৎকর্ষের হানি ঘটে, তাহা দুর্ভাগ্যজনক হইবে না কি?
প্রশ্ন উঠিতে পারে, স্কুল তৈয়ারি করিবার জন্য সাধারণত সরকার কিছু বিশেষ সুবিধা দিয়া থাকে, যেমন সস্তা জমি, করের ক্ষেত্রে ছাড় ইত্যাদি। বিনিময়ে স্কুলগুলির কি সামাজিক দায়িত্ব নাই? জটিল প্রশ্ন। প্রথমত, সুযোগসুবিধার বিনিময়ে কী দায়িত্ব পালন করিতে হইবে, তাহা প্রথমেই স্পষ্ট করিয়া লওয়া দরকার, মধ্যপথে নূতন শর্ত যোগ না করাই বিধেয়। দ্বিতীয়ত, সরকারি সুযোগের বিনিময়ে স্কুলের নিকট সরকার প্রতিদান দাবি করিতে পারে, কিন্তু সেই প্রতিদান শিক্ষার মানের মূল্যে না হওয়াই বাঞ্ছনীয়। বস্তুত, যে সব স্কুলে সরকার অর্থসাহায্য করে, তাহাদের ক্ষেত্রেও এই একই যুক্তি প্রযোজ্য। দরিদ্র বা অনগ্রসর পড়ুয়াদের জন্য অবশ্যই বিশেষ বন্দোবস্ত জরুরি। এ দেশে সেই বন্দোবস্ত প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্ত অপ্রতুল, তাহা রাষ্ট্র, রাজনীতি এবং সমাজের এক বিপুল ব্যর্থতা। কিন্তু কী ভাবে সেই ব্যর্থতা দূর করা উচিত, সেই বিষয়ে গভীরতর চিন্তা প্রয়োজন। প্রকৃত অর্থেই, জনস্বার্থে প্রয়োজন। সর্বোচ্চ আদালত ভাবিবেন কি?


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.