দেদার ওষুধ আর অযত্নেই ক্ষতির মুখে মালদহের আম
লন বাড়ানোর জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিকের ব্যবহার আর বাগানের অযত্ন মালদহে আম চাষের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি করে দিয়েছে। আমের কারবারিরা এত দিনে এই ক্ষতি টের পেতে শুরু করেছেন। আমের ফলন কমেছে। তার উপর এই বছর দুর্যোগে ৩২ হাজার মেট্রিক টন আম ইতিমধ্যেই নষ্ট হয়েছে।
রাজ্যের ৪০ শতাংশ আম মালদহ জেলা একাই জোগান দেয়। কোনও একটি জেলায় আমের এই বিপুল পরিমাণ চাষ দেশে আর কোথাও নেই। আমের ক্ষেত্রে সাধারণ ভাবে এক বছর ভাল ফলন হলে পরের বছর মন্দা যায়। এই বছর আমের ফলন ভাল হওয়ার কথা। কিন্তু প্রকৃতি মালদহ জেলায় এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়েছে। গাছে যে পরিমাণ মুকুল আসার কথা ছিল, আসেনি। মালদহে চাষিরা আমের মুকুল আনেন ‘প্যাক্টো বুটাজোল’ নামে এক ধরনের বৃদ্ধি-প্রতিরোধী হরমোন প্রয়োগ করে। গাছের ডাল-পাতার বৃদ্ধি আটকে তাকে দ্রুত ফলবতী করার জন্য এই হরমোনের সীমিত প্রয়োগ বিধিসম্মত। কিন্তু মালদহে ফি বছর মূলত বয়স্ক আমগাছে মুকুল আনার জন্য ওই হরমোন দেদার ব্যবহার করা হচ্ছে।
অথচ বিশেষজ্ঞদের মতে, ওই হরমোনের যথেচ্ছ প্রয়োগে আমগাছ বন্ধ্যা হয়ে যেতে পারে। মালদহে রাজ্য হর্টিকালচার বিভাগের উপ-অধিকর্তা (আম) প্রিয়রঞ্জন সানিগ্রাহী বলেন, “কোনও গাছে ওই হরমোন ৮/১০ বছর ব্যবহার করলে সেই গাছ সম্পূর্ণ বন্ধ্যা হয়ে যাবে।” বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিবিজ্ঞানী কৌশিক ব্রহ্মচারীও মালদহে আম চাষের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতির বিষয়টা মেনে নিয়ে বললেন, “যে কোনও ফসলের উৎপাদন বাড়াতে গিয়ে যদি প্রকৃতিকে প্রতিহত করা হয়, তা হলে তার ফল ভুগতেই হবে। কিন্তু চাষি সব সময়েই বেশি ফলন চাইবেন। গাছে হরমোন প্রয়োগ করলে বছরের দু’বার করে যথেষ্ট পরিমাণে জৈব সার দিতে হবে গাছের গোড়ায়। গাছের স্বাস্থ্য ভাল থাকলে সে হরমোন প্রয়োগের ধকল সইতে পারবে।” ফি বছর ভাল ফলন পাওয়ার জন্য চাষিরা ‘আম্রপালি’ বা ‘মালতী’র মতো আমের চাষে ঝোঁকেন। কিন্তু বাজারে সেই আমের কদর নেই। কৌশিকবাবুর সুপারিশ, একটা বাগানে বিভিন্ন জাতের আম গাছ লাগালে কোনও বছরই ফলনে তেমন মন্দার মুখে পড়তে হবে না।
মালদহে প্রায় ২৯ হাজার হেক্টর জমিতে আমের বাগান। কিন্তু বাগানগুলোর সিংহভাগই পুরনো। একশো-দেড়শো বছরের পুরনো প্রচুর বাগান আছে জেলায়। কিন্তু দালালদের কাছে আম বাগান বিক্রি করে দেওয়ার সূত্রেই আমের স্থায়ী ক্ষতির শুরু বলে মনে করেন মালদহ ম্যাঙ্গো মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুবোধকুমার মিশ্র। সুবোধবাবু জানালেন, গাছে মুকুল ধরার আগে থেকে আম পেড়ে নেওয়া পর্যন্ত একটা বাগান অন্তত ছয় বার হস্তান্তর হয়। তাঁর কথায়, “মালদহে বাগান মালিকেরা নিজেরা সাধারণত আম চাষ করেন না। ব্যবসায়ীদের কাছে বাগান বিক্রি করে দেন। ফলে সেই বাগানের যত্ন বা পরিচর্যার দায় কারও থাকে না। বাগান থেকে বছরের পর বছর লক্ষ লক্ষ টাকা আয় হচ্ছে। কিন্তু তার একটি টাকাও গাছের পুষ্টির জন্য খরচ করা হয় না।”
শুধু হরমোনের যথেচ্ছ প্রয়োগই নয়। ফল বড় করার চেষ্টায় ওষুধের প্রয়োগ এবং বিভিন্ন ছত্রাক আর পোকার মোকাবিলায় কীটনাশকের বেপরোয়া ব্যবহার আম চাষের সর্বনাশকে আরও ত্বরান্বিত করেছে বলে মনে করেন হর্টিকালচার বিভাগের কর্তা। প্রিয়রঞ্জনবাবু বলেন, “একটি মরসুমে আমগাছে ৫ থেকে ৬ বারের বেশি স্প্রে করা উচিত নয়। কিন্তু চাষিরা বেশি ফলনের আশায় দশ বারেরও বেশি নানা রকম সস্তার কীটনাশক স্প্রে করছেন।” তার ফলে আম গাছের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি তো হচ্ছেই, পোকাগুলোও কীটনাশক প্রতিরোধী হয়ে যাচ্ছে। পরিচর্যার অভাবে এমনিতেই বেশির ভাগ পুরনো বাগানে আলো-হাওয়া ঢোকে না। ফলে পোকা এবং ছত্রাকের সম্ভাবনাও ক্রমশ বেড়ে যায়।
আম গাছের স্বাস্থ্য ঠিক রেখে ভাল ফলন কী ভাবে পাওয়া যায়? প্রত্যেক মরসুমেই হর্টিকালচার বিভাগ এই বিষয়ে ৫০ হাজার লিফলেট বিলি করে চাষিদের মধ্যে। কিন্তু তাতেও চাষিদের তেমন সাড়া মিলছে না বলে জানালেন প্রিয়রঞ্জনবাবু। মালদহের পুরনো বাগানগুলো পুনরুজ্জীবিত করার একটি প্রকল্প নিয়েছে জাতীয় হর্টিকালচার মিশন।ওই প্রকল্পে প্রতি হেক্টর বাগানের জন্য মালিককে ১৫ হাজার টাকা করে অনুদান দিয়েছে কেন্দ্র। প্রিয়রঞ্জনবাবু জানালেন, জেলার প্রায় সব আম চাষি ওই অনুদান পেয়েছেন। কিন্তু সেই অনুদান যে বাগানের স্বাস্থ্য ফেরানোর কাজে লাগেনি, তা আমের ফলন দেখেই টের পাওয়া যাচ্ছে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.