বসিরহাট-বারাসতে দুষ্কৃতী-দৌরাত্ম্য
বৃদ্ধাকে ভোজালির কোপ, প্রতিবন্ধীকে বন্দুক দিয়ে মারধর
তিন দিনে চারটি ঘটনা ছিনতাই, ডাকাতি ও তোলাবাজির। উত্তর ২৪ পরগনার বারাসত ও বসিরহাট সংলগ্ন এলাকায় শনিবার থেকে মঙ্গলবারের মধ্যে ঘটে যাওয়া প্রতিটি ঘটনাতেই ‘বাধা পেয়ে’ দুষ্কৃতীরা মারধর করেছে। রেহাই পাননি বৃদ্ধা, প্রতিবন্ধী যুবকও।
প্রশাসনিক সুবিধার্থে সম্প্রতি জেলা পুলিশকে ভাগ করে এক জন পুলিশ সুপার ও দু’জন কমিশনার (ব্যারাকপুর ও সল্টলেক) নিয়োগ করার পরেও এলাকায় অপরাধ যে কমেনি, তার ইঙ্গিত এই সব ঘটনায়। সম্প্রতি ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চলেও একাধিক খুনের ঘটনা ঘটেছে। চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি তো রয়েইছে। অধিকাংশ ঘটনারই কিনারা না হওয়ায় মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
সোমবার রাতে বারাসত থানার দত্তপুকুরের উত্তর গঙ্গাপুকুরে সফিকুল ইসলামের বাড়িতে লুঠপাট চালায় ডাকাতেরা। বাধা দিতে গিয়ে তাঁর বৃদ্ধা মা জুবেদা বিবি ভোজালির আঘাতে জখম হন। ওই দিন দুপুরেই বিশ্বনাথ চট্টোপাধ্যায় নামে এক চাল ব্যবসায়ী টাকি রোড ধরে স্বরূপনগর থেকে বসিরহাটে ফিরছিলেন। মাটিয়ার কাছে বাস থামিয়ে বিশ্বনাথবাবুর কাছ থেকে টাকার ব্যাগ কেড়ে নেয়। বাধা দেওয়ায় রিভলভারের বাঁট দিয়ে মারা হয় বিশ্বনাথবাবুকে। রবিবার সন্ধ্যায় বারাসতের কাজিপাড়ায় যশোহর রোডের উপরেই নববধূর গয়না ছিনতাই রুখতে গিয়ে দুষ্কৃতীদের হাতে বেধড়ক মার খান তাঁর স্বামী আনিসুর রহমান। ওই ঘটনায় এক জন গ্রেফতার হলেও অন্য তিনটি ঘটনায় এখনও কেউ ধরা পড়েনি।
ভোজালির কোপে জখম হাত দেখাচ্ছেন দত্তপুকুরের জুবেদা বিবি। ছবি: সুদীপ ঘোষ
দুষ্কৃতীদের ‘দৌরাত্ম্যের’ প্রতিবাদে মঙ্গলবার দেগঙ্গায় রাস্তা অবরোধ করেন ব্যবসায়ীরা। গত শনিবার রাতে দেগঙ্গার হামাদামা বাজারে হাবিব রোজ চৌধুরী নামে এক ব্যবসায়ীর গাড়ির চালককে মারধর ও গাড়িতে ভাঙচুর করে তিন দুষ্কৃতী। প্রতিবাদ করতে গিয়ে বেধড়ক মার খান শওকত আলি নামে স্থানীয় এক প্রতিবন্ধী যুবক। আরজি পার্টির সদস্য ওই যুবকের দোকান ভাঙচুর করেছিল দুষ্কৃতীরা। বাসিন্দাদের অভিযোগ, ওই তিন দুষ্কৃতী এলাকায় তোলাবাজি, মারধর করে সন্ত্রাস চালিয়ে যাচ্ছে। পুলিশের কাছে নালিশ জানিয়েও সুরাহা মিলছে না। এর প্রতিবাদেই এ দিন হামাদামা বাজারে রাস্তা অবরোধ করা হয়। অবরোধ তুলতে গিয়ে পুলিশ লাঠি চালায় বলেও অভিযোগ। ক্ষুব্ধ জনতা পুলিশের একটি গাড়ি ভাঙচুর করে।
স্থানীয় মানুষের ক্ষোভ, সোমবার বারাসত স্টেডিয়ামে মুখ্যমন্ত্রীর সভাকে ঘিরে গত তিন দিন ধরেই বারাসত ও সংলগ্ন এলাকা কার্যত ‘মুড়ে’ দেওয়া হয়েছিল পুলিশে। অথচ, এই সময়ের মধ্যেই ঘটে গেল চারটি ঘটনা। জেলার পুলিশ সুপার চম্পক ভট্টাচার্যের অবশ্য দাবি, “এগুলি বিক্ষিপ্ত ঘটনা। এর সঙ্গে জেলার সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপ হওয়ার কোনও প্রশ্ন নেই। এক একটা ঘটনা ঘটছে। আবার দুষ্কৃতীরা গ্রেফতারও হচ্ছে।”
বারাসত-বসিরহাট সংলগ্ন এই এলাকায় দুষ্কৃতী তাণ্ডব নতুন নয়। গত বছর ফ্রেব্রুয়ারিতে ‘ভ্যালেন্টাইন্স ডে’-র রাতে দুষ্কৃতীদের হাত থেকে দিদিকে বাঁচাতে গিয়ে খুন হয়েছিল মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী রাজীব দাস। ‘কড়া নিরাপত্তা’য় ঘেরা জেলাশাসকের বাংলোর সামনে ওই ঘটনায় রাজ্য জুড়ে তোলপাড় হয়। তার পরেও ওই এলাকায় ছিনতাই করতে গিয়ে এক মহিলাকে জখম করে দুষ্কৃতীরা। পুলিশকে লক্ষ করে গুলি চালানোর ঘটনাও ঘটেছে।
দুষ্কৃতী-দৌরাত্ম্য নিয়ে মুখ খুলেছে রাজনৈতিক দলগুলিও। জেলায় ‘সমাজবিরোধী কাজকর্ম’ বেড়ে যাওয়ার প্রতিবাদে কিছু দিন আগেই আন্দোলন করেছেন বামেরা। জেলা সিপিএম নেতারা ‘পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা’র অভিযোগও তুলেছেন। মঙ্গলবার তৃণমূলের জেলা সভাপতি নির্মল ঘোষও বলেন, “সমাজবিরোধীদের দৌরাত্ম্য এ ভাবে বাড়তে দেওয়া যায় না। পুলিশকে আরও সক্রিয় হতে এবং অপরাধীদের গ্রেফতারের দাবি জানাব।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.