নেশাসক্তকে বাঁচাতে লক-আপেই
মাদক দেয় পুলিশ, অভিযোগ
ক-আপের মধ্যে গুম হয়েই বসেছিল ছেলেটি। বিকেল-তক তার কোনও হেলদোল ছিল না। কিন্তু সন্ধে নামতেই আচমকা ছটফট শুরু করল সে। গরাদ ধরে ঝাঁকিয়ে, নিজের হাত-পা কামড়ে কিছুক্ষণ তাণ্ডব চালানোর পরে আচমকাই মাটিতে পড়ে খিঁচুনি শুরু হল তার।
কী কাণ্ড, পুলিশ কর্মীরা প্রথমে ভেবেছিলেন পাঁজকোলা করে থানার বাইরে কোথাও ফেলে এসে ল্যাটা চোকাবেন। কিন্তু গায়ে হাত দেওয়াই দায়। এমন চিৎকার জুড়ল যে তা করারও উপায় থাকল না। ডিউটি সেরে সবে নিজের কোয়ার্টারে ফিরেছিলেন বড়বাবু। খবর পেয়ে তিনিও হন্তদন্ত হয়ে লক-আপের সামনে এসে দাঁড়ালেন। অন্যেরা যাই বুঝুক তাঁর অবশ্য বুঝতে অসুবিধা হয়নি এ ছেলে মাদকাসক্ত। আর এই থানা মাতিয়ে ছটফট করার কারণ মাদক ছাড়ার প্রতিক্রিয়া, উইথড্রয়াল সিন্ড্রোম। সে যাত্রায় সীমান্তের ওই থানার পুলিশ কর্মীরা রেহাই পেয়েছিলেন যুবকের হাতে সামান্য মাদক তুলে দিয়েই। রাত ভর নিশ্চিন্তি! “কিন্তু এ ছাড়া আর উপায় কী বলুন?” প্রশ্নটা রাখলেন নদিয়া জেলা পুলিশের এক পদস্থ কর্তা। শুধু তাই নয়, তিনি জানালেন, সীমান্তের ওই সব থানায়, যেখানে মাদক পাচারের রমরমা বব্যসা চলে সেখানে প্রায় প্রতিটি থানাতেই কম-বেশি মাদক রাখতে হয়। নিয়ম এড়িয়েই। শুধু করিমপুর বা তেহট্ট নয়, বাধ্য হয়ে এ কাজ করতে হয় পড়শি জেলা মুর্শিদাবাদের রানিনগর বা ডোমকল থানাকেও। রাজ্য পুলিশের এক শীর্ষ কর্তা অবশ্য বলছেন, “শুধু সীমান্ত কেন, সামান্য পরিমাণ মাদক কলকাতার অধিকাংশ থানাকেও রাখতে হয়। রাত বিরেতে মাদকাসক্তের উইথড্রয়াল সিনড্রোম দেখা দিলে কী করা যাবে!”
কিন্ত এ কাজ কী বেআইনি নয়? পুলিশের সাফাই, মাদকাসক্তকে ধরে না আনলেও সমস্যা, আবার ধরার পরে অনেক সময়েই লক-আপে তাদের ওই ধরণের সমস্যা দেখা দিলে সামাল দেওয়ার দায় পুলিশেরই। কেননা এ সব ক্ষেত্রে নিজেকে আহত করলে পরের দিন আদালতে আহত মাদকাসক্তকে পেশ করলে প্রশ্ন উঠতে পারে ‘চোট লাগল কী করে?’ এক পুলিশ কর্তা বলেন, “মানবাধিকার সংগঠনগুলিই তখন চেপে ধরবে, পুলিশ লক-আপে রক্তাক্ত হস কী করেস নিশ্চয় পুলিশ মারধর করেছে। শুধু তাই নয়, অনেক সময়ে মাদক না পেয়ে ওই নেশাগ্রস্থের মৃত্যুও হতে পারে লক-আপে। তখন তো আরও বড় সমস্যা!”
জেলা স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার কথায়, ‘‘নেশার সামগ্রী না পেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে পুলিশ তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু অনেক সময়েই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ প্রশ্ন তোলে, নিজেই নিজেকে ক্ষত বিক্ষত করল কী করে ওই মাদকাসক্ত। তা এড়াতেই আদালতে তোলা পর্যন্ত তাই লক-আপেই অনেক সময়ে মাদক দেওয়া হয় রোগীকে বলে শুনেছি।” না পেলে কী হয়? ওই স্বাস্থ্যকর্তা বলছেন, “ওই রোগের চিকিৎসা কলকাতায় মেডিক্যাল কলেজ ও ডিঅ্যাডিকশন সেন্টারে হয়। মনোবিদের সাহায্য নিতে হয়। এত সব জেলার হাসপাতালগুলিতে কোথায়? দীর্ঘদিন ধরে যারা নেশায় আসক্ত তাঁরা নির্দিষ্ট সময়ে মাদক না পেলে অস্বাভাবিক আচরণ করে। মাত্রাতিরিক্ত ঘাম, বুক ধড়ফড় করা, মুখ দিয়ে ফেনা বেরনো, আত্মহত্যার প্রবণতা এমনকি মারাও যেতে পারে।’’ নদিয়ার পুলিশ সুপার সব্যসাচী রমন মিশ্র অবশ্য লক আপের মধ্যেই মাদকাসক্তকে সরাসরি মাদক দেওয়ার কথা মানতে চাননি। তিনি বলেন, ‘‘এ সব গল্প। তবে, ধৃত মাদকাসক্তকে জেল হেফাজতে পাঠানোর পর সেখানই তাঁর চিকিসার ব্যবস্থা করা হয়।’’



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.