গেইলদের ডেরায় কেকে-জিত
শাহরুখ খান ০-২।
দাদা ২-০।
এই দুই স্কোরলাইনে আক্রান্ত কলকাতা নাইট রাইডার্স স্কোরবোর্ডে নতুন রং যোগ করতে পারল।
সন্ধ্যা ছ’টা: ক্রিস গেইল কট লক্ষ্মীরতন শুক্ল বোল্ড জাক কালিস ২!
সন্ধ্যা ছ’টা পঁয়তাল্লিশ: বিরাট কোহলি কট মনোজ তিওয়ারি বোল্ড লক্ষ্মীপতি বালাজি!
মনোবিদ রুডি ওয়েবস্টার নন। আগামী এক মাসের ওপর যত দিন ধরে বেঁচে থাকবে কেকেআর-এর আইপিএল অভিযান, এটাই সবথেকে মনোবল-বর্ধক টনিক হয়ে থাকবে। কেকেআর রথ ফের বেচাল হয়ে পড়লেই গৌতম গম্ভীররা নিজেদের মধ্যে আওড়াতে পারবেন, গেইলদের ডেরায় গিয়ে আমরা গেইলদের ৪২ রানে উড়িয়ে দিয়ে এসেছি। কেউ কি তখন ভেবেছিল আমরা এটা করতে পারব? তা হলে কেন অন্য টিমদের হারাতে পারব না?
মনোবল-বর্ধক এই স্লোগান লিখে ফেলা যেত না, যদি না ১৬৫ রান হাতে নিয়ে শুরুতেই গেইল আর কোহলিকে স্তব্ধ করে দেওয়া যেত। কে না জানে প্রাক্তন নাইট মানে তাঁর অসির আঘাতে অবধারিত ভাবে কেকেআর-এর প্রাণ যাবে। গত বছর থেকে এটাই তো হয়ে আসছে। গত বার ইডেনে এসে গেইল উড়িয়ে দিয়ে গেলেন। কোচি ম্যাচে তেমনই ব্রেন্ডন ম্যাকালাম। জয়পুরে আগের ম্যাচে ব্র্যাড হজ। বেঙ্গালুরুতে গত কাল থেকে অনেকে তো পরামর্শ দিয়ে ফেললেন, শাহরুখ খান টিমের সঙ্গে কয়েকটা ম্যাচে না গিয়ে দেখুক কী হয়। তাতে যদি টিমের ভাগ্য পাল্টায়!
গেইল-বধের পরে নাইটরা। মঙ্গলবার।
এ দিনও জায়েন্ট স্ক্রিনে তাঁর মুখটা প্রথম উদয় হল। আর তৎক্ষণাৎ কেকেআর-এর ব্যাটিং বিপর্যয় শুরু হয়ে গেল! কিছুক্ষণ আগে পর্যন্ত কালিস-গম্ভীররা এমন খেলছিলেন মনে হচ্ছিল, আজ গেইলের ব্যাটিং পর্যন্ত ম্যাচ গড়ানোর আগেই এঁরা খেলা শেষ করে দিতে চান। প্রথম ৬ ওভারে ৬০। গম্ভীরের স্ট্রাইক রেট এক সময় দেখা গেল ২৩৩। তিন নম্বরে এসে মনবীন্দর বিসলা করে গেলেন ২৯ বলে ৪৬। তিনটে ছয়। তেরো ওভার শেষে কেকেআর ১২৩-১। সেখান থেকে শেষ সাত ওভারে হল মাত্র ৪২। উইকেট গেল সাতটা। তাঁর টুইটার অ্যাকাউন্টের নামকরণ তুলে বলাবলি শুরু হল: কী দরকার ছিল আইঅ্যামএসআরকে-এর আসার!
কিন্তু এই কেকেআর জয়পুরের হারের পর ড্রয়িংবোর্ডে ফিরে যাওয়া কেকেআর। হারের ময়নাতদন্ত করে ফেরত আসা কেকেআর। যারা একদম ঠিক বিশ্লেষণ করেছে যে, ওপরের দিককার ব্যাটিং বিপর্যয় আমাদের ভোগাচ্ছে। কালিসের সঙ্গে যার জন্য ওপেন করতে এলেন অধিনায়ক স্বয়ং। ও দিকে প্রাক্তন কেকেআর অধিনায়ক মগজাস্ত্রে পর-পর ম্যাচ জেতাচ্ছেন। কলকাতায় কেকেআর-এর সমর্থন কমছে। পুণে ওয়ারিয়র্সের সমর্থন বাড়ছে। এ রকম একটা কঠিন পরিস্থিতিতে ওপেন করতে এসে গম্ভীর করে গেলেন ৩৯ বলে ৬৪। কেকেআর-এর জয়ের রিংটোন-টা তিনিই সেট করে দিয়ে যান। মধুরেণ সমাপ্তি ঘটালেন লক্ষ্মীপতি বালাজি এবং তাঁর বোলাররা।
প্রথম দু’টো ম্যাচে উপেক্ষিত থেকেছেন বালাজি। এ দিন তাঁকে দিয়ে টানা চার ওভার করালেন গম্ভীর। বোলিং হিসেব: ৪-১-১৮-৪। কেকেআর-এর বোলিংকে অনেকে ভারতীয় বোলিংয়ের সঙ্গে তুলনা করেন। যখন-তখন ম্যাচ হারাবে। জনশ্রুতি আছে, কেকেআর-এর বোলিং পরামর্শদাতা হওয়ার পর ওয়াসিম আক্রমের ডায়বেটিস বেড়ে গিয়েছে। এই যেখানে টিমের বোলিং ইতিহাস সেখানে গেইলদের বিরুদ্ধে বালাজির আজকের হিসেব কেকেআর-এর আইপিএল ইতিহাসে সেরা আখ্যা পাওয়া উচিত। চার উইকেট নিয়ে বোলিং নায়ক হয়ে ফেরার পরেও বালাজি অবশ্য কৃতিত্ব দিয়ে গেলেন কালিস আর ব্রেট লি-কে। বললেন, “প্রথম চার ওভার ওরা যে রকম বোলিং করে দিয়েছে ওখানেই মঞ্চটা তৈরি হয়ে যায়। ওদের ভাল বোলিং আমাদের কাজটা অনেক সহজ করে দিয়ে গিয়েছিল।”
আর কেকে-হার নয়। অবশেষে কেকে-জিত। প্রথম তিন বছরের শূন্যতা। গত বার কোয়ালিফায়ার্সে ছিটকে যাওয়া। সব কিছু ভুলে তবু এ বারে প্রথম ম্যাচে ইডেন হাউসফুল। সেই জন-বিস্ফোরণ রক্তাল্পতায় ভুগতে শুরু করে একই সঙ্গে দু’টো টিমের বিপরীতমুখী ফলাফলে। কেকেআর-এর দিক থেকে দেখতে গেলে মারাত্মক চাপের ব্যাপার। এক দিকে তারা নিজেরা হারছে। অন্য দিকে দাদা-র পুণে ওয়ারিয়র্স জিতছে। ক্রিকেটারদের অনেকেরই টুইটার বা ফেসবুক অ্যাকাউন্ট আছে। সেখানে তাঁরা নিজেরাও তো দেখতে পাচ্ছিলেন কী সব ছবি টাঙানো হচ্ছে! কোথাও দর্শকের মুখ তুলে দিয়ে কম্পিউটার কারসাজির মাধ্যমে বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে শাহরুখ খানের মুখ। সৌরভের কাছে ‘ক্ষমা চাইছেন’! অপমানজনক সব এসএমএস ছড়িয়ে পড়ছে। কোনওটা বলছে, দাদা আগের বার নিলামে অবিক্রীত ছিল। সামনের নিলামে অবিক্রীত থাকবে পুরো কেকেআর টিম। এ দিন আবার নতুন ট্রেন্ড দেখা গেল এ বারের আইপিএলে। এ রকম হাই প্রেশার ম্যাচ। কিন্তু বেঙ্গালুরুর স্টেডিয়াম অর্ধেকও ভর্তি হল না। ব্যতিক্রমী একটা ম্যাচ? নাকি আইপিএল থেকে দর্শকদের মুখ ঘুরিয়ে নেওয়া শুরু হয়ে গেল, সেটাই এখন দেখার।
ক্রিকেট-জনতা যখন ‘দাদা বনাম খান’ নিয়ে উত্তাল তখন জয়পুরের ম্যাচ হেরে গম্ভীর টিমের কয়েক জনকে নিয়ে ময়নাতদন্তে বসলেন। বৈঠকে দু’টো বড় সিদ্ধান্ত হয়। ম্যাকালামকে আপাতত বসাতে হবে। সাকিব-আল-হাসানকে আনতে হবে। গম্ভীর নিজে ওপেন করবেন। আর একটা হচ্ছে, বালাজিকে প্রথম একাদশে ঢোকাতে হবে। তৃতীয় আর একটা বড় সিদ্ধান্তের কথা শোনা গিয়েছিল। ব্রেট লি-কে বসানো। অধিনায়ক অন্তত সুনীল নারিনকে বসানোর পক্ষপাতী ছিলেন না।
অবশেষে মুখে হাসি।
এ দিন ম্যাচ শুরুর আগে অদ্ভুত একটা দৃশ্য দেখা গেল। ব্রেট লি-কে ঘিরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন টিমের সব মস্তিষ্ক। গম্ভীর আছেন। আক্রম আছেন। কোচ ট্রেভর বেলিস আছেন। গম্ভীরের সঙ্গে লি-র কথাবার্তা হচ্ছে। দু’জনকেই বেশ উত্তেজিত দেখাচ্ছে। কারও কারও মনে পড়ে গেল বছর ছয়েক আগে পাকিস্তানের সেই বহু বিতর্কিত দৃশ্য। সৌরভ, রাহুল দ্রাবিড় আর গুরু গ্রেগ। অধিনায়ক রাহুল বোঝানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন। আর উত্তেজিত সৌরভ তত হাত নেড়ে নেড়ে কিছু বলছেন। এ দিনও ওপরের প্রেস বক্স থেকে দেখে মনে হল, গম্ভীর বোঝানোর চেষ্টা করছেন। লি যেন মানতে না চেয়ে ঘাড় নাড়ছেন।
তখনই কি তা হলে অস্ট্রেলীয় পেসারকে গম্ভীর-রা বলতে গিয়েছিলেন, আজ তুমি খেলছ না? আর লি মানতে চাইলেন না? জোর করে খেললেন গেইলদের বিরুদ্ধে? এক-এক সময় মনে হচ্ছে, জয়ের রোশনাইয়ের মধ্যে নাইটদের জন্য কোথাও যেন ব্রেট লি নামের কাঁটাও উৎপন্ন করে দিয়ে গেল বেঙ্গালুরু। আবার ৪২ রানে জয় সম্পন্ন হওয়ার পর-পরই দেখা গেল গম্ভীর আর লি হাসতে হাসতে মাঠ ছাড়ছেন। দু’জনে দু’জনের পিঠ চাপড়েও দিলেন। দেখে পুরনো ক্রিকেট প্রবাদ মনে পড়ে গেল। টিম জিতলে টিম স্পিরিট ঠিক আছে। টিম হারলে সব স্পিরিটই ধ্বংস হয়ে যায়! নাকি ক্রিকেট-প্রবাদ নয়? আজ ফিল্মি সংলাপের দিন?
হার কে জিতনেওয়ালো কো বাজিগর কহতে হ্যায়!

ছবি:পিটিআই




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.