কাটোয়ায় অবরোধ
চৌবাচ্চায় লাশ চুবিয়ে কঙ্কাল তুলে আনে গপসা
গ্রামের নাম দেবনগর।
পূর্বস্থলীর সীমানায় নদিয়া ঘেঁষা গ্রামটি। পাশেই বয়ে চলেছে ভাগীরথী। খেয়াঘাট থেকে কিলোমিটার খানেক হাঁটলে কিছু জনবসতি। তা বাদে প্রায় জনশূন্য চরই বলা চলে।
ঘাটে বাঁধা ডিঙি নৌকা। কিন্তু গ্রামবাসীদের আনাগোনা অন্য পথে, অন্য ঘাট ঘুরে। নৌকা-বাঁধা ঘাটটি এখন কঙ্কালের দখলে!
মর্গ থেকে পাচার হওয়া বেওয়ারিশ লাশ নৌকায় চেপে চলে আসে ঘাটে। কখনও সখনও মিলে যায় নদীতে ভেসে আসা লাশও। চৌবাচ্চায় রাসায়নিক মেশানো জলে তা ডুবিয়ে পচানো হয়। শেষে বেরিয়ে আসে কঙ্কাল। তা পাচার হয়ে যায় খদ্দেরদের কাছে।
নিজস্ব চিত্র।
বছর চারেক আগেই বর্ধমানে কঙ্কালের কারবার নিয়ে এক বার হইচই হয়েছিল। রাতের অন্ধকারে গোদা বা কালনার কোম্পানিডাঙার মতো বেশ কিছু এলাকার কবরস্থান মৃতদেহ সরাচ্ছিল দুষ্কৃতীরা। তা প্রকাশ্যে আসায় অনেকে গ্রেফতারও হয়। কিছু দিন সব চুপচাপ। তার পর যে ফের কারবার শুরু হয়েছে, তার প্রমাণ পূর্বস্থলীর এই ‘ডেরা’।
ডেরার মালিকের নাম মনোজ পাল ওরফে গপসা। গত বার ধরপাকড়ের সময়েও সে কারবারে ছিল। তবে তখনও মালিক হয়নি। অন্য কঙ্কাল কারখানার কর্মচারী ছিল। এখন যদিও তার কর্মী সাকুল্যে দু’জন, তবু সে নিজেই মালিক। গপসা নিজেই জানায়, চার বছর আগে কঙ্কাল পিছু তার আয় ছিল সাকুল্যে তিন-চারশো টাকা। এখন সরাসরি তার থেকেই দু’তিন হাজার টাকায় এক-একটি কঙ্কাল কেনে দালালেরা। সড়ক বা রেলপথে পাচার হয়ে নানা প্রতিষ্ঠানে দু’তিন গুণ দামে বিক্রি হয় সে সব। গপসার দাবি, “সরকারি হাসপাতাল থেকে মর্গের ডোমদের হাত করে বেওয়ারিশ লাশ মেলে। ভাগ্য ভাল থাকলে নদীতেও লাশ পাই। কবর থেকে আমি লাশ তুলি না।” যদিও এলাকার বাসিন্দাদের সন্দেহ, আগের মতো কবরস্থান থেকেও লাশ আসে তার ডেরায়। আগের বারই পুলিশ সন্দেহ করেছিল, খুন করে লাশ লোপাটের জন্য কঙ্কাল কারবারিদের দিয়ে দেয় দুষ্কৃতীরা। এ ক্ষেত্রেও তা হচ্ছে না তো? “না না, ও সব কারবারে আমি নেই” প্রবল মাথা নেড়ে অস্বীকার করে গপসা।
লাশ না হয় এল, তার পরে?
ডেরার আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বেশ কয়েকটা চৌবাচ্চা। তাতে ভরা থাকে রাসায়নিক মেশানো জল। ছেঁড়া কাপড়ে লাশ মুড়ে ওই সব চৌবাচ্চায় চুবিয়ে দেয় গপসার শাগরেদরা। কিছু দিন পরে কাপড়ের মোড়ক খুলে ফেললেই খসে যায় হাড় ছাড়া বাদবাকিটা। এর পরে ভাগীরথীর জলে ধুলেই সাফসুতরো কঙ্কাল! কখনও-সখনও ওই পথে যেতে এলাকার লোকজনেরও চোখে পড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা পচা দেহাবশেষ। তীব্র পচা গন্ধও এসে লাগে নাকে। লম্বা পা ফেলে তাঁরা তড়িঘড়ি পেরিয়ে যান জায়গাটা।
যাঁরা দেখেন, তাঁরা কিন্তু ভুল করেও প্রকাশ্যে মুখ খোলেন না। নাম গোপন রাখার শর্তে এলাকার কিছু লোকজন জানান, ডেরায় সন্দেহজনক লোকজনের আনাগোনা আছে। তারা সম্ভবত দুষ্কৃতী। সে কারণেই এ রকম বেআইনি কারবার চলছে জেনেও, পরিবেশ দূষিত হচ্ছে দেখেও তাঁদের মুখ বুজে থাকতে হয়। ঘাটে বাঁধা ডিঙি নৌকাতেই পাচার করা হয় কঙ্কাল। যদিও গপসার দাবি, প্লস্টিকের বস্তায় মুড়ে রেল বা সড়কপথে দালালেরা কঙ্কাল নিয়ে যায়। পূর্বস্থলী থানা থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে মেড়তলা পঞ্চায়েত এলাকার ওই গ্রাম। কিন্তু পুলিশের দাবি, এলাকায় এ রকম কোনও কারবারের কথা তাদের জানা নেই।
ভাগীরথীর পাড়ে এই সেই ‘কারখানা’। পূর্বস্থলীর দেবনগর গ্রামে তোলা নিজস্ব চিত্র।
শুধু দেবগ্রামেই নয় কিন্তু। স্থানীয় সূত্রের খবর, পূর্বস্থলী ২ ব্লকের বেলের হল্ট বা পাটুলিতে ভাগীরথীর পাড়েও চলছে এই কারবার। পূর্বস্থলী ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি মানসী দাস অবশ্য দাবি করেন, “অতীতে এ রকম ব্যবসা হত শুনেছি। ফের হচ্ছে বলে খবর নেই। সত্যি তা ঘটলে, পুলিশকে ব্যবস্থা নিতে বলা হবে।” কালনার মহকুমাশাসক সুমিতা বাগচি আবার বিস্মিত, “এমনটা ঘটলে তো মারাত্মক ব্যাপার। পুলিশ-প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব।”
গপসা কিন্তু একার ঘাড়ে দায় নিতে রাজি নয়। তার দাবি, “শুধু এখানে নয়, অনেক জায়গাতেই নদীর ধারে রমরমিয়ে এই ব্যবসা চলছে। পুলিশ তা হলে সবাইকেই ব্যবসা বন্ধ করতে বলুক। শুধু আমায় কেন?”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.