ঝুঁকি এড়াতে পদক্ষেপ
লেবার রুমের লগে বাদ ‘মেল’, ‘ফিমেল’
শিশু বদলের ঝুঁকি এড়াতে নতুন ব্যবস্থা চালু করল স্বাস্থ্য দফতর। এ বার থেকে আর ‘মেল’ বা ‘ফিমেল চাইল্ড’ নয়। লেবার রুমের লগ বুকে এবং প্রসূতির ডিসচার্জ সার্টিফিকেটে লিখতে হবে ‘বয়’ বা ‘গার্ল চাইল্ড’। উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপার আশঙ্কায় নির্দেশ জারি করে চিকিৎসক ও নার্সদের সতর্ক করলেন স্বাস্থ্যকর্তারা।
কলকাতা ও জেলার বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে গত কয়েক মাসে শিশু বদলের বেশ কয়েকটি অভিযোগ জমা পড়েছে স্বাস্থ্য দফতরে। একাধিক ক্ষেত্রে এমন অভিযোগ নিয়ে হাসপাতালে উত্তেজনাও ছড়িয়েছে। স্বাস্থ্যকর্তাদের তদন্তে ধরা পড়েছে, লেবার রুমের লগ বুকের এন্ট্রি এবং ডিসচার্জ সার্টিফিকেটে যেভাবে সন্তানের বিষয়টি উল্লেখ থাকে, তা থেকেও কারচুপি শুরু হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়।
কী ভাবে? স্বাস্থ্যকর্তারা জানান, ‘মেল’ শব্দটির আগে সহজেই ‘ফি’ অক্ষরটি বসিয়ে নিলে কিংবা ‘ফিমেল’ শব্দ থেকে ‘ফি’ কথাটি মুছে দিলেই অর্থ বদলে যায়। ‘বয়’ বা ‘গার্ল’ লিখলে সেটা হওয়ার আশঙ্কা অনেক কম। আর তাই এ বার থেকে বাধ্যতামূলকভাবে লেবার রুমের খাতা এবং প্রসূতির ডিসচার্জ সার্টিফিকেট থেকে ‘মেল’ বা ‘ফিমেল চাইল্ড’ কথাগুলি বাদ পড়ছে।
শুধু তাই নয়, জন্মের পরে শিশুর হাতে যে চাকতি ঝুলিয়ে দেওয়া হয়, বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে তা নিয়েও। সেই কারণেই এ বার থেকে ইংরাজির ছয় ও নয় নম্বর চাকতি কোনও শিশুর হাতে না বাঁধার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই দুটি সংখ্যা থেকে নয়-ছয় ঘটে যাওয়ার নজির একাধিক রয়েছে। সমস্ত রকম বিভ্রান্তি এড়াতে তাই লেবার রুম থেকে ওই দুটি চাকতি সরিয়ে ফেলা হচ্ছে।
ইতিমধ্যেই সব জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক এবং মেডিক্যাল কলেজগুলির অধ্যক্ষদের কাছে এই সংক্রান্ত নির্দেশিকা পৌঁছে গিয়েছে। কলকাতার এক মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, “উদ্যোগটা ভাল সন্দেহ নেই। কিন্তু সর্ষের মধ্যে যে সব ভূত রয়েছে, তাদের তাড়াতে না পারলে এই ধরনের সমস্যা এড়ানো যাবে না।” তাঁর বক্তব্য,“ প্রসূতি বা তাঁদের পরিবারের তরফে ভুল হয় সে কথা ঠিক। কিন্তু কোনও কোনও হাসপাতালে লেবার রুমের ভিতরেও দুষ্ট চক্র সক্রিয়। সেখানেও রাশ টানা দরকার।”
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, বাঁকুড়ার এক গ্রামীণ হাসপাতাল থেকে মাস দেড়েক আগে এক প্রসূতি সন্তান সহ বাড়ি চলে যাওয়ার দু’দিন পরে এসে দাবি করেছিলেন, তাঁর পুত্র সন্তান হয়েছে। কিন্তু হাসপাতাল থেকে কন্যা সন্তান হয়েছে বলে জানিয়ে অন্যের শিশুকন্যাকে তাঁর সঙ্গে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে বিস্তর তোলপাড় হয়। থানা পর্যন্ত গড়ায়। তার পরে জানা যায়, ডিসচার্জ সার্টিফিকেটে ‘ফিমেল চাইল্ড’ কথাটি থেকে ‘ফি’ কথাটি মুছে দিয়েছিলেন প্রসূতির বাড়ির লোকজন! ঘটনাচক্রে এ ক্ষেত্রে লেবার রুমে শিশুর জন্মের বিষয়টি যথাযথভাবে নথিভুক্ত হয়নি। তাই জটিলতা আরও বেড়েছিল। লেবার রুমের এক কর্মী প্রসূতির পরিবারকে ওই দুর্বুদ্ধি দিয়েছিল বলে পরে তদন্তে জানা যায়। এই ঘটনা আরও বেশি করে তাঁদের চোখ খুলে দিয়েছে বলে এক স্বাস্থ্যকর্তার দাবি।
স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র অসিত বিশ্বাস বলেন, “কিছু সমস্যা হচ্ছিল। আমরা সেটা বাড়তে দিতে চাইনি। তাই সকলের সুবিধার জন্যই এই নতুন ব্যবস্থা চালু হয়েছে।”
কিন্তু সমস্যার উৎসটা উপড়ে না ফেলে এই ব্যবস্থায় স্রেফ ওপর থেকে তা চাপা দেওয়া হয়ে যাচ্ছে না কি? এই প্রশ্নের কোনও উত্তর অবশ্য পাওয়া যায়নি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.