সম্পাদকীয় ১...
যথার্থ মনোভাব
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারির ভারত সফর ছিল, আনুষ্ঠানিক ঘোষণা অনুসারে, একান্তই ব্যক্তিগত। তিনি প্রধানত আসিয়াছিলেন রাজস্থানের অজমেঢ় শরিফে ত্রয়োদশ শতকের সুফি সন্ত খাজা মইনুদ্দিন চিস্তির দরগায় প্রার্থনা করিতে। কিন্তু পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট যতই ব্যক্তিগত সফরে ভারতে আসুন, তাঁহার সফরের কিছু রাজনৈতিক মাত্রা রচিত হইয়াই যায়। তাই প্রেসিডেন্টের সহিত তাঁহার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা মন্ত্রী রহমান মালিকও আসিয়াছিলেন। আর প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহও এই সফরের সুযোগ গ্রহণ করিয়া প্রেসিডেন্টকে মধ্যাহ্নভোজে আমন্ত্রণ জানান। তৃতীয় কোনও ব্যক্তির উপস্থিতি ছাড়া কেবল দুই রাষ্ট্রপ্রধানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বিষয়ে আলোচনাও হয়। অত্যন্ত ইতিবাচক এই কূটনৈতিক উদ্যোগ।
পাকিস্তানের সহিত সম্পর্কে ধারাবাহিক উত্তেজনা প্রশমনের লক্ষণ স্পষ্ট। সত্য, সন্ত্রাসবাদীদের লালন করার কিংবা তাহাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না-লওয়ার বিষয়টি এই সম্পর্কে কাঁটার মতো বিঁধিয়া আছে। মুম্বই হামলা সহ ভারতে সংঘটিত একাধিক জঙ্গি হানায় জড়িত লস্কর-ই-তইবার প্রধান হাফিজ সইদের প্রতি পাক সরকারের প্রশ্রয়ের বিষয়টি কেবল নয়াদিল্লিকে নয়, মার্কিন প্রশাসনকেও যথেষ্ট বিরক্ত করিয়াছে। এখনও সইদের বিরুদ্ধে প্রমাণাভাবের অজুহাত সন্ত্রাসের প্রতি পাকিস্তানের সহিষ্ণুতাই প্রকট করে। এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী পাক প্রেসিডেন্টকে তাঁহার বিরক্তির কথাও জানাইয়াছেন। সইদ ও তাঁহার লস্কর বাহিনীর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থাগ্রহণের উপরে যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতি বহুলাংশে নির্ভরশীল, তাহা জানাইতেও ভোলেন নাই। কিন্তু কেবল এই বিষয়টির মধ্যেই ঘুরপাক খাইতে থাকাও যে কোনও বিচক্ষণ কূটনীতির পরিচয় নয়, মনমোহন সিংহ তাহাও বিলক্ষণ জানেন। তিনি তাই জারদারির শুভেচ্ছা সফরের ভাবনাকে যথোচিত সম্মান জানাইয়া চেনা ছকের বাহিরে পা রাখারও চেষ্টা করিয়াছেন। নভেম্বর মাসে পাকিস্তান সফরের আমন্ত্রণ গ্রহণ, দ্বিপাক্ষিক ক্রিকেটসূচি পুনরায় চালু করার প্রস্তাব, সীমান্তে উত্তেজনা হ্রাসে সিয়াচেন ও স্যর ক্রিকে সেনা-উপস্থিতি হ্রাস করার প্রস্তাব, সাবেক বাণিজ্যপথগুলি উন্মুক্ত করা, বন্দি-বিনিময় এবং ভিসা-আইন শিথিল করা বিষয়ক প্রস্তাব নয়াদিল্লির পাল্টা শুভেচ্ছারই ইঙ্গিত। উভয় দেশেরই রাষ্ট্রপ্রধানরা এই যে ভুয়া জাতীয়তাবাদের কোলাহল দূরে সরাইয়া বাস্তবসম্মত ও পরস্পরের পক্ষে উপকারী রাষ্ট্রনীতি অনুসরণে আগ্রহ দেখাইতেছেন, ইহা অতীতে বড় দেখা যায় নাই।
দুই দেশের জনসাধারণকেই নেতাদের এই মনোভাবকে সমর্থন জানাইতে হইবে। এ কথা ঠিক যে, রাজনৈতিক নেতৃত্বই প্রায়শ ‘শত্রুরাষ্ট্র’ সম্পর্কে বৈরী গণ-আবেগ নির্মাণ করিয়া কূটনীতির গ্রাহ্য এজেন্ডা পাল্টাইয়া ফেলিয়াছেন। আবার ইহাও ঠিক যে দীর্ঘ কাল ধরিয়া এ ভাবে পরস্পরকে শত্রু ভাবিতে-ভাবিতে জনসাধারণও নেতাদের উগ্র জাত্যভিমানী জিঘাংসায় ইন্ধন জোগাইয়াছে। সময় আসিয়াছে, দুই দেশের জনসাধারণের মধ্যেই পরস্পরের প্রতি যে অন্তঃসলিলা শুভেচ্ছা ও মরমি দরদ এতৎ সত্ত্বেও বহমান, তাহাকে উজ্জীবিত করিয়া তোলা। দুই দেশের রাজনৈতিক নেতৃত্বই তাহা করিতে পারেন। এ জন্য জারদারির অজমেঢ় শরিফ সফরের মতো অনেক শুভেচ্ছা সফর দরকার। আর প্রয়োজন অনাবশ্যক পরস্পরের প্রতি বিদ্বেষমূলক প্ররোচনা ছড়ানো হইতে নিবৃত্ত থাকা। মনমোহন সিংহ আসিফ আলি জারদারির বাড়ানো হাত ধরিতে তিনি দ্বিধা করেন নাই। তবে জারদারি নিজে কত দিন পাকিস্তানের হইয়া মৈত্রীর হাত বাড়াইবার মতো কর্তৃত্বের অবস্থানে থাকিবেন, সেটা ভিন্ন প্রশ্ন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.