লগ্নিকারীদের আশায় ছাই ঢেলে বাজেটের পর ঘুরে দাঁড়াল না শেয়ার বাজার। কবে হাল ফিরবে সে ব্যাপারেও অন্ধকারে বিশেষজ্ঞরা। মহাবীর জয়ন্তী এবং গুড ফ্রাইডের ছুটিতে টানা দু’দিন বন্ধ থাকার পর সোমবার ফের ২৬৩.৮৮ অঙ্ক পড়ল বাজার। এর আগে গত বুধবার শেষ লেনদেনের দিনেও সূচক পড়েছিল ১১১.৪০ অঙ্ক। এ দিন এশিয়ার বিভিন্ন সূচকও ছিল নীচের দিকে। ‘ইস্টার মানডে’ উপলক্ষে ইউরোপের বাজার বন্ধ ছিল।
বাজেটে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায় শেয়ার বাজারকে চাঙ্গা করতে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ ঘোষণা করেন। বিশেষ করে খুচরো লগ্নিকারীদের উৎসাহ দিতে ‘রাজীব গাঁধী ইক্যুইটি সেভিংস স্কিম’ শীর্ষক প্রকল্প চালুর মাধ্যমে লগ্নির উপর করছাড়ের প্রস্তাবও এনেছেন অথর্মন্ত্রী। কমিয়ে দিয়েছেন লেনদেন কর বা সিকিউরিটি ট্রানজাকশন ট্যাক্স। এ ছাড়া বন্ডের বাজারকে চাঙ্গা করা-সহ আরও কিছু প্রস্তাব বাজেটে রয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাজারের কাছ থেকে এখনও তেমন সাড়া মেলেনি।
কিন্তু কেন? বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করছেন, বাজেটে দেশের আর্থিক বৃদ্ধি নিয়ে দিশা দেখাতে ব্যর্থ অর্থমন্ত্রী। অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার মতো কার্যকরী ব্যবস্থার কথা বাজেটে নেই। বিশেষ করে আর্থিক সংস্কারের ব্যাপারে এক পা এগোনোর কথাও খুঁজে পাচ্ছেন না তাঁরা।
আর্থিক পরিষেবা সংস্থা ফিনশোর ম্যানেজেমেন্ট সার্ভিসেসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর লক্ষ্মণ শ্রীনিবাসন বলেন, “বাজার আশা করেছিল বিমায় বিদেশি লগ্নি-সহ আরও কিছু পরিকল্পনা কার্যকর করতে এ বার অর্থমন্ত্রী উদ্যোগী হবেন। কিন্তু বাজেটে কিছুই দেখা গেল না। খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির ব্যাপারেও এখনও কেন্দ্র কোনও ব্যবস্থা নিতে পারেনি। এই সব কারণেই আর্থিক বৃদ্ধি কোন পথে এগোবে, তা নিয়ে বড় মাপের সংশয় দেখা দিয়েছে লগ্নিকারীদের মধ্যে।”
অর্থাৎ বাজারে লগ্নিতে করছাড় বা লেনদেনের খরচ কমানো-সহ যে-সব ব্যবস্থার কথা বাজেটে বলা হয়েছে, তাতে আপাতদৃষ্টিতে কিছু চমক থাকলেও আর্থিক বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করার পদক্ষেপের অভাবই লগ্নিকারীদের নিরুৎসাহিত করছে বলে ধারণা শ্রীনিবাসনের মতো বিশেষজ্ঞদের। বাজারের ভবিষ্যৎ নিয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে শ্রীনিবাসন বলেন, “বিদেশি লগ্নিকারীদের বিনিয়োগের জেরে বাজার অবশ্য কিছুটা দাঁড়িয়ে থাকবে। কারণ, ওই বিদেশি সংস্থাগুলির কাছে বিনিয়োগের জন্য অন্য কোনও ভাল বাজার আপাতত নেই।”
কিন্তু বিদেশি বিনিয়োগকারী সংস্থার লগ্নির উপর ভরসা করার ক্ষেত্রে ঝুঁকি আছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞদের মধ্যে অনেকেই। ক্যালকাটা স্টক এক্সচেঞ্জের প্রাক্তন ডিরেক্টর এস কে কৌশিক মনে করেন, “ওই সব সংস্থা যে কোনও সময়েই ভারতের বাজার থেকে তাদের লগ্নি তুলে নিতে পারে। তা ঘটলে বাজারে বড় মাপের ধস নামবে। নিজের দেশের লগ্নিকারীরা যত দিন বাজারে আস্থা খুঁজে না-পাচ্ছেন, তত দিন দীর্ঘ মেয়াদে তা চাঙ্গা হওয়ার সম্ভাবনা কম বলেই মনে করি।” |