বাংলার সঙ্গে হলিউড মিউজিক্যাল
গানের ভেলায়
চৈত্রশেষে বাঙালি বড় নস্টালজিক হয়ে পড়ে... হায়, আর একটা বসন্তও চলে গেল! কেবল বাংলা গানেই তখন তার স্মৃতিমেদুর আসাযাওয়া, আর সে সফর সবচেয়ে মনোরম পুরনো বাংলা ছবি দেখতে বসলে। শুধু গানেই মাতিয়েছিল বা গানই মুখ্য হয়ে উঠেছিল যে-সমস্ত বাংলা ছবির, নববর্ষের শুরুতে তা থেকেই বাছাই কিছু ছবি দেখার আয়োজন নন্দন-এ, ১৫-২১ এপ্রিল। গানমেলা শুরু হবে ১২ এপ্রিল, সেই উপলক্ষেই এই উদ্যোগ। দেখানো হবে অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি, শাপমোচন, অমরগীতি, হংসরাজ, দেয়া নেয়া, মণিহার, হারমোনিয়াম। তপন সিংহের হারমোনিয়াম-এ নিজের গলায় গান গেয়েছিলেন ছায়াদেবী। শাস্ত্রীয় সংগীতে তালিম ছিল তাঁর। একটা ঠুম্রি-ভাঙা গানে সুর দিয়েছিলেন তপনবাবু, কথাও লিখেছিলেন তিনি। প্রথমে কিছুতেই গাইতে রাজি হচ্ছিলেন না ছায়াদেবী, তাঁকে আশ্বস্ত করলেন তপনবাবু: ‘বেশ, রেকর্ডিংয়ে আপনার গান যদি খারাপ লাগে তাহলে অবশ্যই আমি গানটা বাদ দিয়ে দেব ছবি থেকে।’
শেষে সে-ছবির গানের অ্যারেঞ্জার অলোকনাথ দে আর তবলাবাদক রাধাকান্ত নন্দী গানটার সুর-তাল ছায়াদেবীর কানে তুলে দিতেই রেওয়াজি গলায় তিনি গেয়ে উঠলেন: ‘আমি ছল করে জল আনতে যমুনাতে যাই’। আত্মস্মৃতিতে তপনবাবু তাঁর মুগ্ধ বিস্ময়ের কথা লিখেছেন ‘কী গানই না গাইলেন।’ বাঙালি অবশ্য বাংলা মিউজিক্যাল-এর পাশাপাশি বহু বার দেখা ‘দ্য সাউন্ড অব মিউজিক’-এর গানও মনে রেখেছে। ’৬৫-তে তৈরি সে-ছবির পরিচালক ও প্রযোজক রবার্ট ওয়াইস কিন্তু বছর কয়েক আগেই সহ-পরিচালক ও প্রযোজক হিসেবে ‘ওয়েস্ট সাইড স্টোরি’র (’৬১) মতো মিউজিক্যাল বানিয়ে হইচই ফেলে জিতে নিয়েছিলেন ১০টি অস্কার। নিউইয়র্কের পটভূমিতে এমন আধুনিক নগরকেন্দ্রিক মিউজিক্যাল আগে হয়নি হলিউডে (সঙ্গে স্থিরচিত্র)। এ ছবি-সহ সিংগিং ইন দ্য রেন, টপ হ্যাট, ফ্যানটাসিয়া ইত্যাদি একগুচ্ছ হলিউড মিউজিক্যল দেখানো হবে নন্দন-এ, ২৫-২৮ এপ্রিল। ‘গ্রীষ্মের শুরুতেই পশ্চিমের বাতাস বইয়ে দেওয়ার একটা চেষ্টা।’ মন্তব্য নন্দন-সভাপতি সন্দীপ রায়ের।

শতবর্ষে
১৯৩৮। জাপানি আক্রমণে পর্যুদস্ত চিন। সাহায্যের জন্য জাতীয় কংগ্রেস মেডিক্যাল মিশন পাঠায়। দলে ছিলেন মদনমোহনলাল অটল, এম আর চোলকর, দ্বারকানাথ শান্তারাম কোটনিস, দেবেশ মুখোপাধ্যায় এবং বিজয়কুমার বসু। বাকিরা ফিরলেও ডা. কোটনিস চিনেই মারা যান। পরবর্তী কালে ডা. বসু আবার চিনে যান এবং আকুপাংচার চিকিৎসা শেখেন। তিনিই ভারতে এই চিকিৎসা শুরু করেন। বিজয়কুমার বসুর জন্ম ঢাকায় ১৯১২-র ২ মার্চ। এম বি করেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে। ’৪৩-এর দুর্ভিক্ষে বিধানচন্দ্র রায়ের নেতৃত্বে ত্রাণের কাজে ঝাঁপ দেন। ভারত-চিন মৈত্রীতেও তাঁর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। ১৯৭৩-এ তিনি আকুপাংচার অ্যানেস্থেশিয়া শেখার জন্য চিনের আমন্ত্রণ পান। যুদ্ধের পর তাঁর চিন সফর ভারত-চিন মৈত্রীর পরিবেশ তৈরি করে। একে ‘আকুপাংচার কূটনীতি’ বলা হত। এরই ধারাবাহিকতায় পরে দু-দেশের মধ্যে রাষ্ট্রদূত বিনিময় শুরু হয়। তৈরি করেন ‘কোটনিস স্মৃতিরক্ষা কমিটি’। তাঁর অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে খাজা আহমেদ আব্বাস লেখেন ‘অ্যান্ড ওয়ান ডিড নট কাম ব্যাক’, ভি শান্তারাম তৈরি করেন ‘কোটনিস কি অমর কহানি’। ১৯৮৬-তে এই চিকিৎসক মারা যান। তাঁর যোধপুর পার্কের বাড়িটি দান করেছেন আকুপাংচার চিকিৎসার স্বার্থে। সেখানেই এখন সরকারি আকুপাংচার ইনস্টিটিউটের প্রধান কার্যালয়। সম্প্রতি ডা. বসুর শততম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জীবনানন্দ সভাঘরে ‘কোটনিস স্মৃতিরক্ষা কমিটি’র আয়োজনে এক অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ করেন চিনের কনসাল জেনারেল চাং লিচুং, অশোক মিত্র এবং অমলেন্দু দে।

দুই পৃথিবী
ওরা বস্তি, আমরা অট্টালিকা। আমরা টিভি-ইন্টারনেট-আইপড, ওরা মাটি-পাথর-বল-ফুটপাথ। আমরা জবরদস্ত ইংলিশ মিডিয়াম, ওরা পাড়ার স্কুল কিংবা আনপড়। ‘ওরা’ ঠিক কারা, তা কি সত্যিই বুঝতে পারি আমরা? আমাদের শিশুদের বোঝাতে পারি কি, ওদের শৈশব কত আলাদা? ২৪ মার্চ বিকেলে সল্ট লেক-এ, ক্রাফট-কম্বাইন এনজিও-র আয়োজনে এএ ব্লকের কমিউনিটি হলে জড়ো হল আমাদের শিশু আর ওদের শিশুরা, প্রায় পঞ্চাশ জন। উল্টোডাঙার দত্তাবাদ, বি আর এস, এন্টালির বস্তির সঙ্গে মিশে গেল ডন বস্কো, মডার্ন হাই, লা মার্টিনিয়ার, লোরেটো হাউস। একসঙ্গে খেলা করল, হাতের কাজ করল, ভাবও জমল। ছোট ছোট দলে ভাগ করে প্রতিটি দলে মিশিয়ে দেওয়া হল দুই পৃথিবীর ক্ষুদে প্রতিনিধিদের। দুই ঘণ্টার নৈকট্যের স্মৃতি, আর সে দিনের বানানো অরিগামি, কাগজের ব্যাগ, বুকমার্ক নিয়ে বাড়ি ফিরল তারা। সংগঠনের তরফে ঊর্মি পালচৌধুরি জানালেন, এই কর্মশালাই প্রথম প্রয়াস, কিন্তু তাঁরা আরও এগিয়ে যাবেন, মানুষের জন্য সহমর্মিতা তৈরির একমাত্র পথই তো ভিন্ দুনিয়ার সঙ্গে পরিচয়!

হ য ব র ল
উদো-বুধোর লড়াই, কাক্কেশ্বর কুচকুচের বে-হিসেবি অঙ্ক, হিজি বিজ্ বিজ্-এর অবাস্তব ভাবনা বা ব্যাকরণ সিং-এর বক্তৃতা উঠে আসছে বাংলার প্রথম ত্রিমাত্রিক ছবিতে। পরিকল্পনা ও পরিচালনায় অমিত সেন। ত্রিমাত্রিক ছবি নিয়ে পড়াশুনোকে সম্বল করেই কাজে নামছেন পুনের এই প্রাক্তনী। আধা কল্পনা ও আধা বাস্তব হ য ব র ল’র এই মিশ্রণটিই ত্রিমাত্রিক ছবির আদর্শ বলে মনে করছেন তিনি। দেড় ঘণ্টার ছবিতে থাকবে নাচ-গান এবং আবোল-তাবোলের কিছু অংশ। চলছে স্ক্রিপ্টের কাজ। নাটকের আঙ্গিকে পরিচালকের সঙ্গে স্ক্রিপ্ট তৈরি করছেন শ্রীজাত। সঙ্গীত ও নৃত্য পরিচালনায় দেবজ্যোতি মিশ্র ও সুকল্যাণ ভট্টাচার্য। ছবিতে মানবচরিত্রে অভিনেতারা থাকলেও অন্যরা হবে অ্যানিমেটেড। এ জন্য ক্লে-মডেল তৈরি হয়েছে। পরে কম্পিউটারের সাহায্যে অভিনেতাদের অভিব্যক্তি জুড়ে দেওয়া হবে মডেলে। সুকুমার রায় বুধোকে আঁকেননি। সে ক্ষেত্রে সহায় যমজ ভাই উদো। ঘটনাচক্রে এ বছরই সুকুমার রায়ের ১২৫-তম জন্মবার্ষিকী। পরিচালকের আশা, এ ছবিকে সঙ্গী করে বড়রাও খুঁজে পাবেন ফেলে আসা শৈশব।

কবি এক জাগে
শতবর্ষ পেরিয়ে গিয়েছে রবীন্দ্রনাথের গীতাঞ্জলি। সার্ধশতবর্ষ চলছে রবীন্দ্রনাথের। আর তাঁর গীতাঞ্জলি সং অফারিংস এ বছর শতবর্ষে পড়ল। এই অবসরে ঐতিহাসিক কাব্যগ্রন্থটির প্রস্তুতিপর্বটিকে ধরতে চেয়ে প্রকাশিত হল একটি বই, গীতাঞ্জলি রূপে রূপান্তরে/কবি এক জাগে (পুনশ্চ, ৭৯৫.০০)। গীতাঞ্জলি-র বাংলা ও ইংরেজি কবিতার পাণ্ডুলিপি ও অন্যান্য সংস্করণের তুলনামূলক পাঠের উপর ভিত্তি করে এই পাঠান্তর-সংস্করণটি সম্পাদনা করেছেন প্রণতি মুখোপাধ্যায়। গীতাঞ্জলি অ্যান্ড ফ্রুট গ্যাদারিং এবং ক্রেসেন্ট মুন থেকে এই সংকলনে গৃহীত হয়েছে অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অসিতকুমার হালদার, নন্দলাল বসু ও সুরেন্দ্রনাথ করের দুর্লভ পেন্টিংগুলিও। দীর্ঘ ভূমিকায় আলোচিত হয়েছে গীতাঞ্জলি-র প্রায় সব অনুষঙ্গও। সাম্প্রতিক বাংলা প্রকাশনার বিচারে পরিশ্রমী কাজ, সন্দেহ নেই।

মানুষের খোঁজে
হলদিয়ার গ্রাম থেকে অস্ট্রিয়ার গির্জা, নাগাল্যান্ডের হর্নবিল উৎসব থেকে আফ্রিকায় মাসাইদের আসর, পুষ্করের মেলা থেকে কলকাতার রাজপথদুই তরুণ আলোকচিত্রী লোপামুদ্রা মজুমদার ও ইন্দ্রজিৎ দত্তের সৌজন্যে কলকাতাবাসী দেখার সুযোগ পেলেন অফুরান বর্ণময় প্রকৃতি ও বিচিত্র মানুষকে। দক্ষিণ কলকাতার গ্যালারি গোল্ডে সম্প্রতি আয়োজিত হয়েছিল দু’জনের যৌথ আলোকচিত্র প্রদর্শনী ‘চেঞ্জিং লেন্স’। রঙিন এবং সাদা-কালো দু’ মাধ্যমেরই ছবি ছিল। আফ্রিকার প্রান্তরে আকাশজোড়া ডবল রামধনু, পুষ্করের মেলায় প্রবৃদ্ধের জরাকুটিল দৃষ্টি (সঙ্গের ছবি), পাহাড়ে ঘূর্ণিঝড়, নাগা শিকারনৃত্যের উল্লাস-সহ বেশ কিছু ছবি মনে থাকে।

নতুন করে
‘তখন খ্রীষ্টান হ’লেও পৈতে রাখা চলতো। ব্রাহ্মণ সন্তান কৃষ্ণপ্রসাদ খ্রীষ্টান হবার পর পৈতে ছিঁড়ে ফেলেন। কিন্তু মিশনারি ওয়ার্ড সাহেব তাকে আরেকটি পৈতে কিনে দেন। আর কেরি সাহেব বলেন যে, খ্রীষ্টান হ’লেও পৈতে ধারণ করতে আপত্তি নেই। তাই নিয়ে আবার রক্ষণশীল হিন্দু সমাজ মামলা করলেন... ’। সুবীর রায়চৌধুরীর গদ্য, পাওয়া গেল ’৭০-এ প্রথম প্রকাশিত তাঁর সে যুগের কেচ্ছা/ একালের ইতিহাস-এ। ভাষাবন্ধন এ বার নতুন সংস্করণ বের করেছে বইটির (১২৫.০০)। নতুনটির প্রচ্ছদও প্রথম সংস্করণে রঘুনাথ গোস্বামীর প্রচ্ছদপত্র অনুসরণে তৈরি। এ বইয়ে যে সব কাহিনির পুনঃকথন করেছেন সুবীর, সে সবের মধ্যে একটি ছাড়া আর সবগুলিরই প্রধান ঘটনাস্থল কলকাতা। তাঁর সরস গদ্যের সঙ্গে নতুন সংস্করণে মিলবে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় ছড়িয়ে থাকা তাঁর লেখার তালিকা। আর শুরুতেই সৌরীন ভট্টাচার্য লিখেছেন তাঁকে নিয়ে: ‘কত বিষয়ে যে আগ্রহ ছিল সুবীরের। সাহিত্যের তুলনাত্মক সন্ধান, বানান, ব্যাকরণ, অভিধান, পুরনো কলকাতা, খুচরো খাওয়াদাওয়া, পথ হাঁটা, বিভিন্ন মানুষের খোঁজখবর রাখা, চারিপাশে এমনি করে জড়িয়ে থাকা।’

মুকুটে পালক
মহীনের যে সব ঘোড়াদের ঘাস খেতে দেখেছিলেন জীবনানন্দ দাশ কার্তিক প্রান্তরে। মহীনের যে সব ঘোড়া ঘরে না ফিরে জেব্রার পার্শ্বে চরিতেছিল যাদের দেখেছিলেন শক্তি চট্টোপাধ্যায় তাঁর চতুর্দশ পদাবলিতে। সেই ঘোড়াদের এক জন এব্রাহাম মজুমদার যাচ্ছেন জার্মানি। শিব্রাম বলেছিলেন, যার মানি থাকে সেই যায় জার্মানি। এ ক্ষেত্রে তা নয়। খোদ জার্মান দূতাবাস আমন্ত্রণ জানিয়েছে এব্রাহামকে। পাশ্চাত্য শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের পীঠভূমি মিউনিখ, সেই মিউনিখ ফিলহারমোনিক অর্কেস্ট্রায় বাজাতে। না, না বাজাবেন না। বাজানো পরিচালনা করবেন। এক সঙ্গে তিরিশ জনেরও বেশি যন্ত্রীকে নিয়ে ১৮ এপ্রিল প্রায় হাজারখানেকের বেশি দর্শকের সামনে যন্ত্রানুষঙ্গ পরিচালনা করবেন। প্রথম পর্যায়ে রবীন্দ্রনাথ। এ কী লাবণ্যে পূর্ণ প্রাণ, কেটেছে একেলা, গোধূলি গগনে মেঘে এই সব গানের মিলিত রূপ পরিবেশন করবেন। পরে পাশ্চাত্য শাস্ত্রীয় সঙ্গীত যন্ত্রে। কলকাতা থেকে তাঁর সঙ্গে যাচ্ছেন জনা দশেক ছাত্রছাত্রী। এব্রাহাম না আব্রাহাম? শেক্সপিয়র জানালেন গোলাপকে যে নামে ডাকো সে গোলাপই। অতএব, শুভেচ্ছা এব্রাহাম। ‘গাস্তেব্রুম’ অর্থাৎ সঙ্গীতের এই উৎসবে আমন্ত্রণ পাওয়ার জন্য। এবং আরও এক বার কলকাতা শহরের মাথা উঁচু করার জন্য।

নবীন বরণ
ছবিটি দেখাচ্ছে, তিনি যেন অর্কেস্ট্রা-র সঞ্চালক। বাস্তবটি আলাদা নয়। তিনি সুরস্রষ্টা। সম্প্রতি ‘ল্যাপটপ’ ছবির আবহ-রচনার জন্য জাতীয় পুরস্কারে ভূষিত। সুতরাং, তরুণ ময়ূখ ভৌমিক যে ভাববেন, সিনেমা একটি অর্কেস্ট্রা, যার মধ্যে আছে কাহিনি, চিত্রনাট্য, অভিনয়, চিত্রগ্রহণ, সম্পাদনা এবং আবহ, তা তো স্বাভাবিকই। বলা হল, ফিল্মের আবহ-রচনা তো উইকেটকিপারের কাজ, ‘থ্যাঙ্কলেস জব’। তিনি হাসলেন, তারপর খুব প্রত্যয়ী ভাবে জানালেন, আবহসঙ্গীতের মূল্যটা কোথায়! ‘আবহই সিনেমাকে সাধারণ বাস্তবতা থেকে পলকে ম্যাজিকের স্তরে পৌঁছে দেয়’। সুরে-তালে সেই ইন্দ্রজালকেই খুঁজে ফেরেন তিনি। স্বপ্ন দেখেন, তবলায় নিজে আরও পারফর্ম করছেন। স্বপ্ন দেখেন, ভবিষ্যতে বাংলা ছবিতেও ঝকঝকে সব কাজের মধ্যে জড়িয়ে থাকবেন। ‘একটা কথা আজকাল শুনি। এ রকম কোরো না, লোকেরা নেবে না! আরে বাবা, লোককে তুমি দিয়ে দেখ যে, তারা নেয় কি না!’ সাফ জানাচ্ছেন ময়ূখ। পরক্ষণেই তিনি বিনয়ী। ‘ল্যাপটপ’ ছবির সুবাদে পুরস্কারপ্রাপ্তির কৃতিত্ব ছবির গোটা দলটির সঙ্গেই ভাগ করে নিতে চান। ‘ছবির পরিচালক কৌশিকদা (গঙ্গোপাধ্যায়) স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। ফলে, অন্য ভাবে ভাবতে পেরেছি।’ জন্ম থেকেই বিচিত্র বিপরীতের সমাহার তাঁর জীবনে জন্ম নিউ জার্সি, আপাতত ঠিকানা কলকাতা। জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের শিষ্য, আবার তিনিই ‘ব্ল্যাক কফি’ ব্যান্ড-এর অনতম পুরোধা। দ্রুতলয়ে চলছে জীবন। অর্কেস্ট্রারই মতো।

কেউ নেই?
বহুকলমী কথাটার অর্থ নিজের গোটা সাহিত্যজীবনে প্রমাণ করেছেন তিনি। চল্লিশ দশকের পরে বাংলা কবিতার ঋতুবদলের আগে রোমান্টিক কবিতার ধারায় নতুন সুর নিয়ে এসেছিলেন যিনি, তিনিই ত্রিলোচন কলমচী ছদ্মনামে উপহার দিয়েছেন একের পরে এক সাহিত্য-নিবন্ধ। পঞ্চাশের দশকের শেষের দিকে চক্খড়ি দিয়ে যাঁর উপন্যাস প্রকাশের শুরু তিনিই পরে লিখবেন জমজমাট কিশোর উপন্যাস বনের খাঁচায়, কানামাছি, মুখোসের মুখ, মালয়ের জঙ্গলে, মৃত্যুর মিনিট। এ সবের লেখক যদি হন আনন্দ বাগচী তবে হরিশ্চন্দ্রদেব ও শ্রীহর্ষও ব্যঙ্গরচনা ও কবিতায় তাঁরই অন্য নাম। ১ জ্যৈষ্ঠ ১৩৩৯ পাবনা জেলার স্বাগতা গ্রামে জন্ম তাঁর। ছেলেবেলা কেটেছে এই শহরে। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম এ পাশ করে আজ থেকে পঞ্চাশ বছর আগে শুরু করেছিলেন অধ্যাপনা-জীবন, বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজে। প্রায় ষোলো বছর অধ্যাপনার পরে সাগরময় ঘোষের ডাকে ‘দেশ’ পত্রিকায় যোগ দেন। তার আগে, বস্তুত অধ্যাপনা শুরুর আগে প্রকাশিত হয়ে গিয়েছে তাঁর দুটি কাব্যগ্রন্থ স্বগত সন্ধ্যা আর তেপান্তর। তখন তিনি ‘কৃত্তিবাস’-এর প্রতিষ্ঠাতাদের অন্যতম। স্বগত সন্ধ্যা প্রকাশিত হয় কৃত্তিবাস থেকেই। দেশ-এর কালে কবিতা লেখা অনেক কমে এলেও তাঁর গদ্যেই কোথাও নিহিত হয়ে ছিল কবিতার প্রবাহ। সম্পাদনার পাশাপাশি চালিয়ে গিয়েছেন নিজের লেখা গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, রম্যরচনা, গোয়েন্দা কাহিনি। অধ্যাপনার সময়ে ‘পারাবত’ ও ‘বৃশ্চিক’ নামে দুটি পত্রিকা সম্পাদনা করেছেন। শেষোক্তটি ছিল ব্যঙ্গ-পত্রিকা। কিন্তু এ সবই এখন স্মৃতির অতলে। প্রায় ছ’বছর তিনি শয্যাশায়ী হালিশহরের বাড়িতে। স্মৃতিভ্রষ্ট, পঙ্গু অবস্থায়। অর্থাভাবে শুরুই করা যায়নি প্রকৃত চিকিৎসা। তাঁর এই আশি বছরে তাঁকে ভুলে দুয়ার এঁটে ঘুমিয়ে আছে বাঙালির সংস্কৃতিপাড়া। তবু অবনী জেগে আছেন। অবনী নাগ, শক্তি-র কবিতাখ্যাত সেই অবনীবাবুই বাঁকুড়া থেকে বারবার তুলে ধরেছেন বিস্মৃত সাহিত্যিকের কথা। ‘কৃত্তিবাস’-এ কিছু দিন আগে লিখেছেনও আনন্দ বাগচী সম্পর্কে। তাঁর আবেদন, এগিয়ে আসুন কেউ, আনন্দ বাগচীকে সুস্থ করে তুলতে।
   


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.