উদ্যোগের সাফল্য নিয়ে গোড়া থেকেই সংশয় ছিল স্বাস্থ্যকর্তাদের একাংশের মধ্যে। সেটাই সত্যি প্রমাণ করে ছ’মাস পেরনোর আগেই কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে সরকারি হাসপাতালের ‘এসএমএস সার্ভিস।’
রাজ্যের সরকারি হাসপাতালগুলোয় যাতে ঠিক সময়ে আউটডোর খোলে এবং ডাক্তারেরা হাজির থাকেন, সেই লক্ষ্যে সেপ্টেম্বরে চালু হয়েছিল ‘ওপিডি ট্র্যাকিং সিস্টেম।’ সব হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছিল, আউটডোর ক’টায় চালু হল এবং কোন বিভাগে ক’জন চিকিৎসক এসেছেন, সেই তথ্য স্বাস্থ্য ভবনে এসএমএস করে জানাতে হবে সকাল সাড়ে ন’টার মধ্যে। প্রাতিষ্ঠানিক প্রসব ও হাসপাতালে শিশু-প্রসূতি মৃত্যু সংক্রান্ত তথ্য জানাতে এসএমএস পরিষেবা চালু হয় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি। কিন্তু এ সবই কার্যত শিকেয় উঠেছে। কেন?
স্বাস্থ্য-সূত্রের খবর: আউটডোর খোলা ও ডাক্তার হাজিরা সম্পর্কিত এসএমএস পাঠানোর নির্দেশ কিছু দিন মানা হয়েছিল। এখন জেলায় তো বটেই, খাস কলকাতারও বহু হাসপাতাল দিনের পর দিন এসএমএস পাঠাচ্ছে না। আর প্রসব বা শিশু-প্রসূতি মৃত্যু সংক্রান্ত এসএমএস নিয়ে অধিকাংশ হাসপাতাল গোড়া থেকেই মাথা ঘামায়নি। বিষয়টিতে নজরদারির জন্য স্বাস্থ্য দফতর কয়েকটি ‘টিম’ গড়লেও লাভ হয়নি বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য দফতরের এক সূত্র। তাঁর কথায়, “দফতরকে রীতিমতো নির্দেশিকা জারি করে হুঁশিয়ারি দিতে হয়েছে। তাতেও ছবিটা বিশেষ বদলায়নি।” ছবিটা কী রকম?
দফতরের খবর: বেশ কিছু হাসপাতাল এক দিনও এসএমএস করেনি। যেমন, শিলিগুড়ি হাসপাতাল, হাওড়ার টিএল জয়সওয়াল ও গাববেড়িয়া হাসপাতাল, মালদহের চাঁচল মহকুমা, মুর্শিদাবাদের বহরমপুর ও ডোমকল, উত্তর ২৪ পরগনার ভাটপাড়া ও হাবরা, পুরুলিয়ার রঘুনাথপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর ও ক্যানিং হাসপাতাল। ২৮টি হাসপাতাল মাসে তিন-চার দিনের বেশি এসএমএস দেয়নি। বস্তুত অধিকাংশ জেলায় জেলা হাসপাতাল ছাড়া আর কেউ তথ্য পাঠাচ্ছে না। কিছু ক্ষেত্রে হয়তো জেলা হাসপাতালও সপ্তাহে দু’-তিন দিন তথ্য দিচ্ছে, তা-ও অসম্পূর্ণ। কলকাতায় এসএসকেএম, রিজিওন্যাল ইনস্টিটিউট অফ অপথ্যালমোলজি, ইনস্টিটিউট অফ সাইকিয়্যাট্রি, পাভলভ ও লুম্বিনী পার্ক হাসপাতালের বিরুদ্ধে তথ্য না-পাঠানোর অভিযোগ সবচেয়ে বেশি।
এ অবস্থায় দফতর কী করবে?
শীর্ষ স্বাস্থ্য-কর্তারা হাসপাতালগুলোকে ফের হুঁশিয়ারি দিচ্ছেন। দফতরের মুখপাত্র অসিত বিশ্বাস বলেন, “আমরা জানি, কে কবে তথ্য পাঠাচ্ছে, কবে পাঠাচ্ছে না। সেই মতো রিপোর্ট তৈরি হচ্ছে। এখন সতর্ক করা হচ্ছে। কিন্তু এমন যদি চলতেই থাকে, তা হলে নির্দেশ অমান্যের দায়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” স্বাস্থ্য-কর্তারা স্বীকার করছেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্বাস্থ্যের ভার নেওয়ার পরে পরে আচমকা হাসপাতাল পরিদর্শন শুরু করায় খানিকটা আলোড়ন পড়েছিল। তখন অধিকাংশ সরকারি ডাক্তার হাজিরার সময় মেনে চলতেন। কিন্তু মন্ত্রীর সরাসরি নজরদারি বন্ধ হতে সেই শৃঙ্খলায় ভাটার টান।
এসএমএসে নিয়মিত তথ্য পাঠাতে ‘অনীহা’ কেন? বিভিন্ন হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের বক্তব্য: হাজারো দায়িত্বের মধ্যে তাঁদের এই বাড়তি কাজের জন্য ফুরসত মিলছে না। সংশ্লিষ্ট কর্মী এসএমএস পাঠানোর দায়িত্ব ঠিকঠাক পালন করছেন কি না, তা দেখারও সুযোগ থাকছে না। কলকাতার এক মেডিক্যাল কলেজের সুপারের কথায়, “দিনভর বিস্তর চাপ। এর পরে যদি নিয়মিত এসএমএস পাঠানো হল কি না, সে খবরও রাখতে হয়, তা হলে তো আসল কাজের কোনও সময়ই থাকবে না!”
বস্তুত, নিয়মিত এসএমএস করার ব্যাপারে হাসপাতালগুলো কত দিন আগ্রহী থাকবে, কিংবা তারা আসল তথ্য না-দিলে ধরা যাবে কী করে, সেই সব প্রশ্ন গোড়াতেই উঠেছিল। যার উত্তরে স্বাস্থ্য ভবন জানিয়েছিল, বিষয়টিতে নজরদারির জন্য কয়েকটি দল তৈরি হবে, যারা রোজ সকালে বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরে তথ্যের সত্যতা যাচাই করবে। অসিতবাবু জানান, কাজটি তাঁরা চালিয়েও যাচ্ছেন। তবে মিথ্যে তথ্য পাঠানোর নজির ‘খুব বেশি’ নেই বলেই তাঁর দাবি। |