|
|
|
|
প্রেমে ‘ব্যর্থ’, উচ্চ মাধ্যমিক শেষে ছাত্রীকে খুন |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নন্দকুমার |
উচ্চ মাধ্যমিক দিয়ে ফেরার পথেই ছাত্রীকে কুপিয়ে খুন করে পালাল ‘প্রেমে ব্যর্থ’ যুবক। শনিবার রাত পর্যন্ত পুলিশ তাকে ধরতে পারেনি।
এ দিনই উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে। দুপুরে পূর্ব মেদিনীপুরে নন্দকুমারের পুয়্যাদায় পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফিরছিলেন তমলুক সান্ত্বনাময়ী বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী মনীষা মেট্যা (১৮)। মোটরবাইকে ধাওয়া করে এসে স্বরূপ মাইতি নামে এক যুবক তাঁকে কাটারি দিয়ে কোপায় বলে অভিযোগ। নন্দকুমার ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হলে মনীষাকে ‘মৃত’ ঘোষণা করা হয়।
|
মনীষা মেট্যা |
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, পুয়্যাদা বাজারে মনীষার বাবা উমাশঙ্কর মেট্যার কাপড়ের দোকান আছে। ওই বাজারের মোড়েই দিনরাত আড্ডা মারত স্বরূপ। তার চালচলন ভাল ঠেকত না এলাকার অনেকেরই। বছরখানেক ধরেই সে মনীষাকে স্কুলে যাতায়াতের পথে উত্ত্যক্ত করছিল। মাস দেড়েক আগে নন্দকুমার থানায় ডায়েরিও করেন উমাশঙ্করবাবু। স্বরূপ ও তার বাবা-মাকে থানায় ডেকে সতর্ক করে পুলিশ।
উমাশঙ্করবাবু জানান, কয়েক দিন আগে হুগলির খন্যানে প্রেমিকের গুন্ডাবাহিনী প্রেমিকার বাবা-মাকে খুন করেছে বলে যে খবর বেরোয়, তা অনেককেই পড়ে শোনাচ্ছিল যুবকটি। তখনই তাঁর মন ‘কু-ডাক’ দিয়েছিল। মেয়ের নিরাপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকায় পরীক্ষাকেন্দ্রে দেওয়া-নেওয়ার কাজ তিনি নিজেই করছিলেন। |
|
কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মা। নিজস্ব চিত্র |
এ দিন দুপুর দেড়টা নাগাদ পুয়্যাদা-বাজার মোড়ে তাঁরা বাস থেকে নামেন। নিজের দোকানেই সাইকেল রাখা ছিল। কিন্তু তার চাকা ফেঁসে যাওয়ায় মেয়েকে তিনি কাঞ্চনপুরের বাড়িতে যাওয়ার মোটরভ্যানে চাপিয়ে দেন। তাতে আরও জনা তিন মহিলা ছিলেন। সাইকেলের চাকায় হাওয়া ভরে নিজে ভ্যানের পিছু-পিছু যাবেন বলে তিনি ঠিক করেছিলেন।
কিন্তু তার আগেই স্থানীয় এক দোকানদার দেখেন, মোটরবাইকে চেপে ভ্যানের পিছনে ধাওয়া করছে স্বরূপ। তিনি মনীষার বাবাকে বিষয়টি জানান। উমাশঙ্করবাবু বলেন, “দেখি, শ’খানেক মিটার দূরে ভ্যানটা থেমে গিয়েছে। মেয়েকে নামিয়ে মারধর করছে স্বরূপ। ছুটতে শুরু করি। তার মধ্যেই দেখি, মেয়েটা পড়ে গেল আর স্বরূপ বাইক ছুটিয়ে পালাল। ভ্যানের অন্য মহিলা যাত্রীরাও পড়িমড়ি দৌড়লেন। কাছে গিয়ে দেখি, মেয়ের দেহ রক্তে ভেসে যাচ্ছে।” খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান তমলুকের এসডিপিও পারিজাত বিশ্বাস। তাঁর কথায়, “প্রেমে প্রত্যাখাত হয়ে আক্রোশে এই খুন বলে মনে হচ্ছে। স্বরূপকে ধরতে তল্লাশি চলছে। জেলার সীমানা এবং সব থানাকে সতর্ক করা হয়েছে।”
পুয়্যাদা গ্রামের বাড়িতে গিয়ে স্বরূপের বাবা মানোজ মাইতি বা তাঁর স্ত্রীকে পাওয়া যায়নি। পাড়াপড়শিরা জানান, খবর জানাজানি হতেই তাঁরা বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছেন। ভাল ছাত্রী মনীষার মৃত্যুতে গ্রামে যথেষ্ট ক্ষোভ রয়েছে। গান-বাজনা চর্চার সুবাদে উমাশঙ্করবাবু ও তাঁর স্ত্রী কৃষ্ণাদেবী এলাকায় বিশেষ পরিচিত। দুঃসংবাদ শুনেই গ্রামবাসী তাঁদের বাড়িতে জড়ো হয়েছেন। স্বরূপের কঠোর শাস্তিও দাবি করেছেন তাঁরা। মনীষার স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা কৃষ্ণা মজুমদারের আক্ষেপ, “আমরা স্কুলে-কলেজে লেখাপড়া শেখাচ্ছি। কিন্তু সহিষ্ণুতার শিক্ষাটাই হচ্ছে না। কেউ কিছু না পেলেই চূড়ান্ত কিছু করে বসছে। এ আমরা কোথায় চলেছি!” |
|
|
|
|
|