সম্পাদকীয়...
সত্য ও তথ্য
থা, তুমি কোথা হইতে আসিয়াছ? কথা অর্থে ‘বাক্’ নহে। ঈষৎ সীমিত অর্থে কোনও একটি বিশেষ শব্দগুচ্ছ। তাহারই উৎসসন্ধানের প্রয়াস। অতঃপর, পণ্ডিতেরা থাকেন যেথায় বিদ্যারত্ন পাড়ায়, সেথায় ভারী গোল বাধিল। আমলাগণের কর্ম এবং মর্মস্থলেও বড় আলোড়ন। প্রশ্ন আসিয়াছে, উত্তর নাই। প্রথম দিনের সূর্য প্রশ্ন করে নাই, করিয়াছে নিতান্তই এক বালিকা। বয়ঃক্রমে দশ। তথ্যের অধিকার আইনের বলে সে জানিতে চাহিয়াছে, মোহনদাস কর্মচন্দ গাঁধীকে কোন সরকারি নির্দেশবলে ‘জাতির জনক’, পরিভাষায় ‘ফাদার অব দ্য নেশন’ বলিয়া অভিহিত করা হয়? সেই নির্দেশনামাটির একটি প্রতিলিপি তাহার কাছে পাঠাইবার অনুরোধও প্রশ্নের সহিত হাজির। অর্থাৎ, নথি চাই। একটি নিষ্পাপ এবং মূল্যবান কাগজখণ্ড। সেই নথি বাহির করিতে কোতোয়াল আসিল, পাইক আসিল, বরকন্দাজ আসিল, বৈঠক বসিল বিস্তর। নথির দেখা নাই। ফেলুদা, ব্যোমকেশ বা ‘এজেন্ট বিনোদ’-কে এত্তেলা পাঠাইয়াও লাভ নাই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বিষণ্ণ ভাবে জানাইল, এই সন্ধান তাহাদের এক্তিয়ারভুক্ত নহে। বিষণ্ণতাটি ক্রমে গভীরতর। তেমন কোনও নথি কি সত্যই বিদ্যমান? গভীর প্রশ্ন। যাহা কিছু ‘সত্য’ বলিয়া সাধারণ্যে প্রচলিত, যে ‘সত্য’ সুবিদিত এবং বহুমান্যও বটে, তাহা কি সর্বদাই ‘নথি’ দ্বারা সমর্থিত? নথি বিনা (সত্যের) গীত নাই?
জাতীয় মহাফেজখানা অবশেষে জানাইল, এমন কোনও নথির সন্ধান নাই। উৎসাহী বালিকাটির প্রতি একটি আমন্ত্রণ রহিল অবশ্য। চাহিলে বিভিন্ন দুর্মূল্য নথির এই সংগ্রহ হইতে পরে সে এই বিষয়ে গবেষণা করিতে পারে। ইতিমধ্যে অবশ্য অন্য সূত্র হইতে ‘জাতির জনক’-এর একটি ঐতিহাসিক উৎস মিলিয়াছে। একদা সুভাষচন্দ্র বসু তাঁহার একটি বক্তৃতায় গাঁধী প্রসঙ্গে এই অভিধাটি ব্যবহার করিয়াছিলেন বলিয়া খবর। কিন্তু, প্রশ্ন তাহা নহে। একটি কথা, যাহা কার্যত ‘কিংবদন্তি’, তাহার উৎসসন্ধান কী রূপে সম্ভব? যদি নথি থাকে, তাহা হইলে কোনও কথা নাই। যদি না থাকে, শুধু কথাটিই থাকে, ব্যবহৃত, ব্যবহৃত, ব্যবহৃত....! তখন? ইহা হয়তো নিছকই ঘটনাচক্র যে সত্যের প্রতি আমৃত্যু কঠোর ভাবে উৎসর্গীকৃত ছিলেন যিনি, তাঁহারই প্রসঙ্গে সত্য এবং তথ্যের এই বিচিত্র আলোছায়াটি ঘটিল। অন্য ভাবে বলিলে, সত্যের সহিত জীবনের যোগাযোগের আরও একটি মাত্রা উঠিয়া আসিল তাঁহারই অনুষঙ্গে। যাহা সত্য বলিয়া ভাবিয়া লওয়া হয়, ধরিয়া লওয়া হয়, তাহা যদি নথি-বদ্ধ না হয়, তখন? সত্যের নিষ্কলঙ্ক মহিমায় ঘাটতি পড়িবে কোনও? ধরা যাক, যদি এই রকম কোনও ক্ষেত্রে সত্যই নথির অভাব থাকে, তাহা কি একটি প্রচলিত সত্যের বিসর্জন ঘটাইবে? আর্ষপ্রয়োগ-এর ন্যায় একটি ‘ব্যাকরণ-মানি-না’ ধাঁচের প্রথা কি এই সূত্রেও প্রযোজ্য হইতে পারে না? নাকি, তাহাতে সত্যেরই অপলাপ হয় কোনও? সত্য তখনই তথ্য হইতে পারে, যখন তাহা নথির ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত? অন্যথায়? কল্পনামাত্র? সন্দেহ নাই, সত্য সে কঠিন। তথ্যও। তাহাদের ভিতরে প্রভূত মেঘ ও রৌদ্রের খেলা। দেশবাসী তাহা আরও এক বার বুঝিলেন। দশমবর্ষীয়া এক বালিকার সৌজন্যে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.