২০১২ সাল জুড়ে মধ্যবিত্তের দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে খাদ্যপণ্যের দামও বেড়েছিল উল্কাগতিতে। তবে বছরের শেষ দিক থেকে কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির হার। ‘আগুনে বাজারে’র সেই স্মৃতি কি ফের এ বছর ফিরে আসতে চলেছে?
খাদ্য সামগ্রী ও বিভিন্ন সব্জির উৎপাদনে ঘাটতির জন্য ঈশান কোণে মেঘ দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। ইতিমধ্যেই সব্জির দাম বাড়তে শুরু করেছে। পাশাপাশি ডালের উৎপাদনে টান পড়ার আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের চিন্তার উদ্রেক করছে। তাঁদের বক্তব্য, সব্জির দাম বাড়লে আমজনতার পাতে ডালই বিকল্প। যদি তার দামও বাড়ে, তাহলে মধ্যবিত্তের পকেটে চাপ আরও বাড়বে। মূল্যবৃদ্ধির হারের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা নিয়ে অন্তত জুলাই পর্যন্ত তাঁদের মনে আশঙ্কার কাঁটা একটা থাকছেই। স্বাভাবিক বর্ষা এলে সেই আশঙ্কা কাটতে পারে বলেই আশা সংশ্লিষ্ট মহলে।
গত বছরও শাক-সব্জি-সহ বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের দাম ছিল চড়া। তবে ডালের দাম ততটা বাড়েনি। উৎপাদনও মোটের উপর খারাপ ছিল না। কিন্তু এ বার পরিস্থিতি উল্টো। এ বছর ডালের উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় সেই ইঙ্গিত থাকছেই। শীতকালে বিরূপ আবহাওয়ার জন্য রাজস্থানে ছোলার ডালের উৎপাদন কিছুটা মার খেয়েছে। মহরাষ্ট্র ও কর্নাটকেও উৎপাদন কমেছে। সে ক্ষেত্রে বর্ষা ঠিক মতো না হলে উৎপাদন হ্রাস ও তার জেরে সরবরাহে ঘাটতির সম্ভাবনা থাকছে। ইন্টারন্যাশনাল পালস ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি কনফেডারেশনের অন্যতম কর্তা সুধাকর তোমর সেই আশঙ্কা উড়িয়ে দেননি। উপরন্তু তাঁর বক্তব্য, ফের যদি মার্কিন ডলারের সাপেক্ষে টাকার দাম পড়ে যায়, তাহলে ডাল আমদানির খরচও বাড়বে। উল্লেখ্য, বছরে ৩০-৪০ লক্ষ টন ডাল আমদানি করে ভারত। যে সব রাজ্য আমদানির উপর প্রায় সম্পূর্ণ নির্ভরশীল, পশ্চিমবঙ্গ তার অন্যতম।
যদিও ডালের দাম বাড়বে না বলেই আশাবাদী ইন্ডিয়া পালসেস অ্যান্ড গ্রেনস অ্যাসোসিয়েশনের পূর্ব ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলের কর্তা অনুরাগ তুলশান। তাঁর আশা, উৎপাদন যতটা মার খেয়েছে, রবি মরসুমে তা পুষিয়ে যাবে। যদি ডালের উৎপাদন না-ও বাড়ে, অন্তত গত বছরের মতোই থাকবে। পাশাপাশি তাঁর দাবি, ছোলার ডালের উৎপাদন মার খেলেও মটর ও অন্যান্য ডালের উৎপাদন ভাল হয়েছে।
তবে চাল, গমের মতোই রেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে ডাল বিক্রিরও দাবি তুলেছেন তাঁরা। অনুরাগবাবুর দাবি, কেন্দ্র ডালের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য নির্ধারণ করে দিলেও রেশন ব্যবস্থায় ডাল না-দেওয়ার জন্য চাষিরা সেই দাম পান না। এর ফলে অনেকেই ডালের বদলে সব্জি বা অন্য কিছু উৎপাদনের দিকে ঝুঁকছেন। এটা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে ডালের সরবরাহ বিঘ্নিত হতে পারে। তাই রেশন ব্যবস্থায় ডালের অন্তর্ভুক্তির জন্য তাই কিছু দিন যাবৎ কেন্দ্রের কাছে দরবার চালাচ্ছেন তাঁরা। এ দিকে, ২১ এপ্রিল থেকে দুবাইয়ে ইন্টারন্যাশনাল পালস ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি কনফেডারেশেনের বৈঠক বসছে।
গত বছর সার্বিক মূল্যবৃদ্ধির পারদও খাদ্যপণ্যের দামের হাত ধরে চড়চড় করে বাড়ছিল। পরিস্থিতি সামলাতে আসরে নামতে হয় রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া-কে। বাজারে নগদের জোগানে রাশ টানতে বারবার সুদের হার বাড়াতে হয়েছিল তাদের। গত বছরের শেষের দিক থেকে মূল্যবৃদ্ধির পারদ নামতে থাকে। শিল্পমহলের আশা ছিল, এ বার অন্তত সুদের হার কমাবে আরবিআই। কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে ফের মূল্যবৃদ্ধির হারের ঊধ্বর্র্মুখী ভাব আরবিআই-কে সে পথে কতটা হাঁটতে দেবে তা নিয়ে শিল্পের মনেই সংশয় তৈরি হয়েছে। প্রসঙ্গত, ফেব্রুয়ারিতে খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি ফের পৌঁছে গিয়েছে ৬.০৭ শতাংশে। যার জেরে সার্বিক মূল্যবৃদ্ধিও ৭% ছুঁইছুই। যদিও ডিসেম্বরে খাদ্যের দাম কমার মুখ নিয়েছিল।
এই প্রবণতা দেখে আনন্দ রথী সিকিউরিটিজ-এর প্রধান অর্থনীতিবিদ সুজন হাজরার আশঙ্কা, সার্বিক মূল্যবৃদ্ধির উপরও তা প্রভাব ফেলবে। সংশ্লিষ্ট মহলের হিসেবে, আলুর দাম প্রায় ৪৫% বেড়েছে। ন্যাশনাল হর্টিকালচারাল রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের ডিরেক্টর আর পি গুপ্ত জানান, যখন মাঠ থেকে আলু তোলার কথা, ঠিক সেই সময়েই জীবাণুর আক্রমণে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এঞ্জেল কমোডিটিজ-এর অন্যতম কর্তা বদরুদ্দিন খানের দাবি, সরবরাহ না-বাড়লে সব্জির দাম পড়ার সম্ভাবনা কম। বরং তা বাড়তে পারে। |